রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৫০ am
ডেস্ক রির্পোট : করোনার কারণে দুই বছরের বেশি বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি ভারত গমনে সব ধরনের ভিসা চালু হলেও খোলা হয়নি গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি ইমিগ্রেশন রুট। এর ফলে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গসহ বহু এলাকার মানুষকে দীর্ঘপথ ঘুরে ভারতে যেতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে, অন্যদিকে বেড়েছে ভোগান্তি।
রাজশাহী অঞ্চলের ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ, দিনাজপুরের হিলি ও লালমনিরহাটের বুড়িমারী ইমিগ্রেশন রুট বন্ধ থাকায় তাদের বহুপথ ঘুরে বিমানে অথবা বেনাপোল দিয়ে ভারতে যেতে হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। উত্তরের ইমিগ্রেশন রুট দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি চলমান থাকলেও পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুদ্দিন বিশ্বাস অভিযোগ করেন, তারা আগে সোনামসজিদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)-মহদিপুর (মালদা) পথে ভারতে যাতায়াত করতেন। গোমস্তাপুর থেকে সোনা মসজিদদের দূরুত্ব ২৩ কিলোমিটার। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুপুরের মধ্যে ভারতের মালদা শহরে পৌঁছে যেতেন। মালদহর হরিচন্দ্রপুর এলাকায় তাদের স্বজন আছে। সেখান থেকে ভারতের যে কোনো জায়গায় যাওয়া সহজ। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মালদা স্টেশন ভারতের যে কোনো শহরের সঙ্গে রেল ও সড়কপথে যুক্ত। যোগাযোগের সুবিধার কারণে সোনা মসজিদ-মহদিপুর পথে রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁর যাত্রীরা সহজেই ভারতে আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু এই রুট বন্ধ থাকায় তারা সহজেই ভারত যেতে পারছেন না।
সাইফুদ্দিন বিশ্বাস জানান, ৮ জুলাই গোমস্তাপুর থেকে সড়কপথে ৯১ কিলোমিটার এসে রাজশাহীতে রাত্রিযাপন করেন। ৯ জুলাই সকালে রাজশাহী থেকে খুলনাগামী কপোতাক্ষ ট্রেনে করে দুপুরে যশোরে নামেন। সেখান থেকে বাসে বেনাপোল বন্দরে যান। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভারতের বনগাঁও স্টেশনে পৌঁছান। সেখান থেকে ট্রেনে যান শিয়ালদা স্টেশনে। রাতে মালদাগামী ট্রেন না পেয়ে সারা রাত শিয়ালদা স্টেশনে কাটান। ১০ জুলাই সকালে মালদাগামী ট্রেনে উঠে বিকাল সাড়ে ৫টায় মালদা স্টেশনে নামেন। সেখান থেকে আরও ২৮ কিলোমিটার বাসে করে হরিশ্চন্দ্রপুরে আত্মীয় বাড়িতে পৌঁছান। তিনি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বেনাপোলের দূরত্ব ৩৪৫ কিলোমিটার। এই পথে সরাসরি কোনো যানবাহন নেই। রাজশাহী থেকে সকাল সাড়ে ৬টার একটি ট্রেনই একমাত্র ভরসা। এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, পাবনা, বগুড়া, রংপুর অঞ্চলের মানুষকে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বেনাপোল হয়ে ভারতে যেতে হচ্ছে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা বিমানে যাচ্ছেন।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা গ্রামের সাইদুর রহমান জানান, ১১ জুলাই চিকিৎসার জন্য বেনাপোল হয়ে ভারতে যেতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন তিনি। ১৭ জুলাই ফেরত পথেও একই ভোগান্তি হয়। বেনাপোলে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় রাত তিনটা সাড়ে তিনটায় গিয়ে ইমিগ্রেশনে লাইনে দাঁড়াতে হয়। ইমিগ্রেশন পার হতেই তিন থেকে চার ঘণ্টা লেগে যায়। জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার এএইচএম আব্দুর রকিম যুগান্তরকে বলেন, সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চালু করতে আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি আছে। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনো সোনামসজিদ-মহদিপুর ইমিগ্রেশন চালু করেননি। ফলে লোকজনকে কষ্ট করে বেনাপোল দিয়েই যেতে হচ্ছে।
এখানে আমাদের কিছু করারও নেই। এই প্রসঙ্গে রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি আব্দুল বাতেন বলেন, আমাদের সব ইমিগ্রেশন পয়েন্ট প্রস্তুত আছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পথ খুলে না দিলে আমাদের কিছু করার নেই। এ বিষয়ে জানতে রাজশাহীর ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হলে একজন ভিসা কর্মকর্তা বলেন, এটি ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। নির্দেশ আসলে আমরা সব পথেই আগের মতো ভারত গমনের ভিসা ইস্যু করতে পারি। আসলে এক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। আমরাও চাই মানুষ সহজ পথে আসা-যাওয়া করুক। সূত্র : যুগান্তর