শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:১৮ pm
ডেস্ক রির্পোট : ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি ও তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানার ওসি মিজানুর রহমানসহ চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন আ ফ ম হানযালা নামে এক ব্যবসায়ী।
পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে তিনি আত্মগোপন করলেও ওসি তার পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছেন।
ওই ব্যবসায়ী গত ২৩ জুন বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে এ মামলা করেন। শুনানি শেষে বিচারক সুমাইয়া সিদ্দিকা আগামী ৭ আগস্ট ধার্য তারিখের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (অর্থ ও প্রশাসন) নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী জাকিউল আলম সোহেল জানান, পুলিশ কখনো পুলিশের বিপক্ষে যায় না। সঠিক তদন্ত রিপোর্ট না পেলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে অন্য আদালতের শরণাপন্ন হবেন।
তিনি আরও জানান, ওসির বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে টাকা ও অন্যান্য সুযোগ দিয়ে অভিযোগ চাপা দিয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী জানান, তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার কথা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন। তবে রোববার বিকাল পর্যন্ত আদালতের কোনো কাগজপত্র হাতে পাননি।
অভিযুক্ত ওসি মিজানুর রহমান দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সারিয়াকান্দি থানার ওসি মিজানুর রহমান ছাড়া মামলার অন্য বিবাদীরা হলেন- এসআই রবিউল করিম, এসআই মাহবুব হাসান ও চন্দনবাইশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক এসআই বর্তমানে রাজশাহীর বাঘা থানায় কর্মরত রবিউল ইসলাম।
মামলার এজাহারের বরাতে আইনজীবী জাকিউল আলম সোহেল জানান, আ ফ ম হানযালা সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের দীঘলকান্দি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে ও তরফদার মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী। দাম্পত্য কলহে স্ত্রী দেবডাঙ্গা গ্রামের শাকিলা আকতার তাকে তালাক দেন। হানযালার সাবেক স্ত্রী শাকিলার সঙ্গে চন্দনবাইশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক এসআই রবিউল ইসলামের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
তিনি জানান, গত ১৭ জানুয়ারি রাতে রবিউল ইসলাম ও শাকিলাকে গ্রামবাসী আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেন। এ ঘটনায় রবিউল ইসলামকে পুলিশ লাইনসে ক্লোজ করা হয়। গ্রামবাসীর হামলার শিকার হওয়ায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা এজন্য হানযালাকে দায়ী করেন। এরপর থেকে তিনি ব্যবসায়ী হানযালাকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন।
বাদীপক্ষের এই আইনজীবী আরও জানান, এ ঘটনার পর সহকর্মী এসআই রবিউল ইসলামকে সহযোগিতায় অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা এগিয়ে আসেন। পরবর্তীতে ওসি মিজানুর রহমান ব্যবসায়ী হানযালার কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় ব্যবসা বন্ধ ও মারপিট করে হাড়গোড় ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
তিনি জানান, সারিয়াকান্দি থানার এসআই রবিউল করিম ও এসআই মাহবুব হাসান গত ২৫ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে স্থানীয় গোল্ডেন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে হানযালাকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। মধ্যরাতে তাকে হাজত থেকে বের করে এসআইদের রুমে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে প্রথমে গামছা দিয়ে চোখ বাঁধা হয়। এরপর বাঁশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়। পরে চোখের বাঁধন খুলে দিলে ওসি মিজানুর রহমান মারপিটের ঘটনা গোপন করতে নির্দেশ দেন। অন্যথায় তাকে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা অসুস্থ হানযালাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেন। পরদিন ২৬ মে সকালে তাকে দুটি মিথ্যা মামলার আসামি করে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়। কয়েক দিন পর হানযালা জামিনে ছাড়া পান। চন্দনবাইশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর দুরুল হুদা গত ১৭ জানুয়ারি রাতে এসআই রবিউল ইসলাম গ্রামবাসীর হাতে আটক হয়ে মারপিটের শিকার হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
আইনজীবী জাকিউল আলম সোহেল আরও জানান, পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে হানযালা বিপাকে পড়েছেন। হুমকির মুখে তিনি ফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপন করেছেন। মামলা তুলে নিতে তার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি-ধমকির মুখে রাখা হয়েছে। মামলার পর আদালত আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন রিপোর্ট দিতে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (অর্থ ও প্রশাসন) নির্দেশ দিয়েছেন। সঠিক তদন্ত রিপোর্ট না পেলে প্রয়োজনে অন্য আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট চাওয়া হবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সারিয়াকান্দি থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, সুনির্দিষ্ট মামলায় হানযালাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে মারধর বা তার কাছে কোন চাঁদা দাবি বা ক্রসফায়ারে দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। সূত্র : যুগান্তর