সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৫৬ pm
আব্দুস সবুর, ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক : কে আসছেন নেতৃত্বে, কার হাতে যাবে নেতৃত্ব। আর কে হবেন সভাপতি ও সম্পাদক। এমন জল্পনা-কল্পনা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। তাহলে কি রাব্বানী-মামুন অধ্যায় শেষ হতে চলেছে। নাকি অন্যকিছু অপেক্ষ মান। না এবার রাব্বানী মামুন অধ্যায়ের ইতি ঘটতে চলেছে বলেই ধরে নিচ্ছেন তৃনমুলের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও তারা তাদের ফেসবুক আইডিতে রাব্বানী-মামুন আউট বলে মন্তব্য করে লিখছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৬ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহীর তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল বা সম্মেলন। এবারে জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে সম্মেলন করার জন্য গত ৪ জুন বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সভার সভাপতি হিসেবে বিদ্রোহীদের গডফাদার বিতর্কিত তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা আরেক মদদদাতা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তৃণমূল নৌকার পক্ষের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পালিয়ে রক্ষা পান। তারা মঞ্চ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কারণে চরম হতাশায় পড়েছেন তাদের অনুসারীরা।
অবশ্য তারা পালিয়ে যাওয়ার পর এক প্রকার বাধ্য হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় বর্ধিত সভা। কারণ সময় খুবই কম। এতে করে মাথায় হাত পড়েছে রাব্বানী-মামুনসহ তাদের অনুসারীদের।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ৪ জুন শনিবার সকালের দিকে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য সভার আগ মুহুর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা কটুক্তির প্রতিবাদে বিশাল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বর্ধিত সভার শুরুতেই নৌকার পক্ষের নেতাকর্মী এবং পাওনাদাররা রাব্বানী ও মামুনকে দেখে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মী চরম উত্তেজিত হয়ে হট্টগোল সৃষ্টি করলে মঞ্চ থেকে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করেন গোলাম রাব্বানী। কিন্তু সম্পাদক মামুন রাব্বানীর হাত ধরে আটকাতে চাইলেও পারেন নি। অবশেষে রাব্বানীর সাথে মামুনও পালিয়ে যান। এমনকি জেলার নেতাদেরও অবজ্ঞা করেন তারা । তারা পালানোর পর শান্তিপূর্ণ ভাবে বিকেল পর্যন্ত চলে সভা।
চলতি মাসের ১৬ জুন তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। মুলত এজন্যই বাধ্য হয়ে বর্ধিত সভার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার। তবে, ব্যানার সাটিয়েছিলেন রাব্বানী-মামুন। প্রধান অতিথি নাম ছিল জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, প্রধান বক্তার নাম ছিল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে নাম ছিলো সাংসদ ফারুক চৌধুরী। এটা নিয়েও ছিল নেতৃবৃন্দ ও তৃনমুলের চরম ক্ষোভ। কারণ তিনি সাবেক জেলা সভাপতি এবং সাবেক শিল্পপ্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন । আর তাকেই অবমাননা করছেন রাব্বানী-মামুন।
সভা শুরু হবার পর থেকে রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার দিনব্যাপী রাব্বানী-মামুনের পালানো নিয়ে আলোচনা সমালোচনার বিষয়টি টক অব দা তানোরে পরিণত হয়েছে ।
তাদের এক হেভিওয়েট অনুসারী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা মঞ্চ থেকে চলে যাবে কেন। তারা তো ভালো করেই জানতেন সভাতে এরকম ঘটনা ঘটতেই পারে। কারণ তারা নৌকার বিরুদ্ধে চরম বিদ্রোহ করেছিলেন। যা দিবা লোকের মত পরিস্কার । সুতরাং পক্ষের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। যেখানে মঞ্চে জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সম্পাদক নেতৃবৃন্ ও স্হানীয় সাংসদ উপস্থিত আছেন। সেখানে যদি রাব্বানী-মামুনের গায়ে হাত পড়ত, রক্ত বের হত, ব্যাপক রন ক্ষেত্র হয়ে পড়লে রাব্বানী-মামুনের ভালোই হত।
আর নানা প্রশ্নে পড়তেন সাংসদসহ নেতারা। তা না করে ভয়ে পালিয়ে গেলেন। সভা তো ঠিকই হল। তারা রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত হলেন। সুতরাং তাদের কথা বিশ্বাস করা মানে বোকার স্বর্গে বাস করা। আমার মনে হয় তাদের ডাকে আর কেউ যাবেও না। তারা কিছু বললে বিশ্বাসও করবে না। তাদের সম্মানের সহিত সম্মেলনের আগে ইস্তফা দেয়াই উত্তম। এখন পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে সম্মেলনও হয় তো তাদের ছাড়াই হয়ে যেতে পারে। একেবারে নি:শ্চিন্তে বলা যেতে পারে রাব্বানী-মামুন অধ্যায়ের অবসান ঘটছে।
ফেসবুক থেকে শুরু করে সব খানেই রাব্বানী-মামুনের পালানোর বিষয় এবং নতুন নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। তাহলে কি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার হাতেই যাচ্ছে নেতৃত্ব, নাকি অন্য কিছু। তবে, সবাই হলফ করে ধরেই নিচ্ছেন চেয়ারম্যান ময়নার হাতেই যেতে পারে তানোর উপজেলা আ’লীগের সভাপতির পদ। আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে কে থাকবেন, কে আসছেন, কে হবেন এমন প্রশ্নে তৃনমুল নেতাকর্মীদের মাঝে তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকারের নাম আসছে নেতাকর্মী ও সমথর্কের কাছ থেকে।
বেশ কয়েক বছর পর আ’লীগের সম্মেলন। নেতাকর্মীদের মাঝে প্রচুর উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে, এবারের সম্মেলন নানা ভাবেই গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক নৌকার বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহ করে চরম বিতর্কিত তারা । এজন্য তৃনমুল চেয়ে আছে নতুন নেতৃত্বের দিকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকশ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জানান, আসলে কে নেতৃত্বে আসছেন বা আসবেন এবিষয়টা একেবারেই ধোয়াসার মধ্যে রয়েছে। বিদ্রোহীর মদদদাতারা আসতে পারছেন না এটা বলায় যায়। তারা বর্ধিত সভা থেকে তৃনমুল নেতাকর্মীদের তোপের মুখে মঞ্চ থেকে পালিয়েছে। যারা মঞ্চ থেকে পালিয়ে যায় তারা আবার কিসের নেতা হবে ন।
সাংসদ অত্যান্ত বিচক্ষণ নেতৃত্বের অধিকারী। তিনি আমাদের নেতা ও রাজনৈতিক অভিভাবক। একজন ক্লিন ইমেজের রাজনৈতিক ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগকে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিএনপি জামায়াতের আখড়া হিসেবে পরিচিত তানোর-গোদাগাড়ী আ’লীগের ঘাটি বলে উঁচু স্হানে নিয়ে গেছেন । সাংসদের বিচক্ষণতার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের সবকিছুই তছনছ করে আওয়ামী লীগকে সুসংহত করেছেন। যা সবার কাছে পরিস্কার।
আপনি কোন পদে আসছেন জানতে চাইলে ময়না ও প্রদীপ জানান, সবার ইচ্ছে থাকে উপরে উঠার। তৃনমুল নেতাকর্মীরা দলের প্রান, যাকে দায়িত্ব দিবেন বা দেওয়া হবে সেটাতেই খুশি। তবে, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আগ্রহ দেখান প্রভাষক প্রদীপ সরকার।
অপরদিকে, রাব্বানী রাজনীতির হতাশা থেকে এবং পদ হারানোর আতঙ্কে পড়ে দিশাহীন হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার নিজ আইডিতে সাংসদ কে আজে বাজে মিথ্যা পোস্ট দিয়ে আরো সমালোচিত হচ্ছেন রাব্বানী।
তিনি গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে ছয়টি ইউনিয়নে মোটরসাইকেল প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়েছিলেন। ওই সময় রাব্বানী ফেসবুকে লিখেছিলেন, জিরো সেভেন থেকে লাকি সেভেন হতে হবে এবং দীর্ঘদিন বাইকে চড়া হয়নি এবার চড়তেই হবে, চড়বই। পরাজিত হয়ে হতাশায় পুনরায় পোস্ট দেন চোরের ভোট, একদিন হিসেব দিতে হবেই এমন মন্তব্য করে ক্ষোভ ঝাড়ে ন।
অবশ্য বর্ধিত সভার দিন বিকেলে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এভাবে দল করা যায় না। আমাদেরকে মারবে আবার আমাদের কে আসামি করবে। তারাই রাজনীতি করুক। আপনাকে তো আঘাত করেনি জানতে তিনি জানান, যেভাবে উত্তেজিত পরিবেশ হয়েছিল মারামারি তো হতই। আর যাব না, কিছুই করব না। আমি এসএম কামাল ভাইকে জানিয়েছি। দেখি তারা কি করে বলে জানান রাব্বানী। আজকের তানোর