শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৪৬ am
ডেস্ক রির্পোট : চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১৫টি বিভাগে ১৬৮টি আসন কমানোয় সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রশাসন। শিক্ষার্থী না কমিয়ে মানসম্মত শিক্ষক, পর্যাপ্ত বাজেট, নিয়মিত গবেষণা শিক্ষার মান ধরে রাখা সম্ভব। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক অনেকে।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে ০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে চার হাজার ১৭৩টি থেকে কমিয়ে চার হাজার ৫টি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তত্ত্বীয় বিষয়গুলোই বেশি।
কর্তৃপক্ষের দাবি, শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা, গ্রন্থাগার সুবিধা, শ্রেণিকক্ষ ও পরিবহন থেকে শুরু করে সর্বত্র অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর চাপ রয়েছে। গত দুই দশকে অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন বিভাগ-ইনস্টিটিউট খোলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবকাঠামো না বাড়ানোয় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। যার ফলে উচ্চশিক্ষার গুনগত মান এবং গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশসহ শিক্ষার্থীদের আবাসিক ও অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে একমত নন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। তারা বলেন, গবেষণা ও শিক্ষার মান ধরে রাখতে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক। পর্যাপ্ত গবেষণা বাজেট। শিক্ষা-গবেষণার উপযোগী মানসিক সক্ষমতা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণ। আসন কমানো কোনো যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড.কুদরত-ই-জাহান বলেন, শিক্ষাখাতে বাজেট ২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি না করে শুধুমাত্র সিট কমিয়ে আনলে শিক্ষার গুণগত মান বাড়বে না। গবেষকদের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে, গবেষণায় মোট বাজেটে ০.১৯ শতাংশের কম বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার গুনগত মান আর ভালো মানের গবেষক তৈরি সম্ভব না। শিক্ষায় সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি সুষ্ঠু আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত, খাদ্যের মান বৃদ্ধি, গবেষণায় প্রণোদনা ও বেতন ইনক্রিমেন্ট নিশ্চিত করতে না পারলে সিট কমানোর উদ্দেশ্য সফল হবে না। সেমিস্টার সিস্টেমে এক ব্যাচে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে টেক-কেয়ার করা মুশকিল হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্দাথ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.সালেহ হাসান নকিব বলেন, ঢাবি ও রাবির শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সমান হলেও ফ্যাকাল্টি মেম্বারের সংখ্যা এখানের চেয়ে ঢাবিতে প্রায় দ্বিগুণ। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতের দিক থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় খুব বেশি পিছিয়ে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুবছর পরেই দেখা যাবে যে সিট কমানোতে গবেষণায় কোনো উন্নতি হয়েছে কিনা। আমি মনে করি এটা সময় পরে অ্যাপ্রিশিয়েবল কোনো গবেষণা দেখা যাবে না। তার মানে সিট কমানোর প্রভাব গবেষণায় পড়বে বলে মনে হয়না।
ছাত্র সংখ্যা কমানোয় আপত্তি জানিয়ে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক রনজু হাসান বলেন, গবেষণা ও শিক্ষার মান সুষ্ঠুভাবে ধরে রাখতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৮টি আসন কমানো সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু খ্যাপ মারা সান্ধ্য কোর্স চলবে।
গত ২৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ বিভাগের ১৬৮ আসন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রশাসন। বিভাগগুলোর মধ্য কলা অনুষদের ইতিহাস বিভাগে ১০টি, বাংলা বিভাগে ২০টি ও নাট্যকলাতে ৫টি আসন কমেছে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি বিভাগে আসন কমেছে ১০টি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের কমেছে ১০টি, সমাজকর্ম বিভাগে ২০টি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ২০টি, লোকপ্রশাসনে ১০টি, নৃবিজ্ঞানে ৬টি ও ফোকলোরে কমেছে ৬টি আসন।
এ ছাড়া জীববিজ্ঞান অনুষদের মনোবিজ্ঞান বিভাগে কমেছে ৫টি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে কমেছে ১৫টি আসন। প্রকৌশল অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ১০টি এবং ভূ-বিদ্যা অনুষদের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে আসন কমেছে ৬টি। সূত্র : জাগোনিউজ