সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৪৮ pm
ইমরান হোসাইন :
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় নতুন বছরের শুরুতেই মুন্ডুমালা গরু-ছাগলের হাট থেকে অন্তত ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা অতিরিক্ত টোল আদারের অভিযোগ উঠেছে ইজারাদার ও তাঁদের লোকজন বিরুদ্ধে।
এছাড়া ইজারাদার ও মেয়রের লাঠিয়াল বাহিনীও চাঁদাবাজি করেছে আরও অন্তত লক্ষাধিক টাকা। একে নিরব চাঁদাবাজি বলছেন ভুক্তভোগী ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পশুর হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকেই খাজনা আদায় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ইজারাদারের লাঠিয়াল বাহিনীকেও চাঁদা না দিয়ে হাট থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। এসবের কারণে দুরদুরান্তের অনেক ব্যবসায়ী আর হাটে আসছেন না বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
পৌর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বাংলা ১৪২৯ সনের জন্য ১ কোটি ৭২ লাখ ৮৬০ টাকায় মুন্ডুমালা হাট ইজারা প্রদান করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে মুন্ডুমালা হাটের ইজারা লাভ করেন রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা শওতক হাজী। তবে, বর্তমান মেয়র সাইদুর রহমানের ওই হাটের ৩০ পারসেন্ট শেয়ার রয়েছে বলে জানান শওকত আলী। এছাড়াও পৌর এলাকায় প্রকাশনগর হাট নামে আরেকটি হাট থাকলেও ওই হাটের খাস আদায় করা হয়। কিন্তু সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানীর নির্দেশে তাঁর মহল্লার ‘প্রকাশনগর তালিমুল নুরানী মাদ্রাসা’র নামে হাটের টাকা আদায় করা হয়। তবে, এবিষয়ে মেয়র সাইদুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইল রিসিভ হয়নি।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিটি গরুতে ৪০০ টাকা ও ছাগলে ২০০ টাকা করে টোল আদায়ের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। বছরের শুরু থেকেই প্রতিটি হাটে টোল আদায়ের সরকারি তালিকা টাঙাতে নির্দেশনার দেওয়া হয়েছে ইজারাদারকে। কিন্তু সরকারি এ নির্দেশনার কোন তোয়াক্কা না করে দ্বিগুন হারে টোল আদায় করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বছরের প্রথম মাসে মুন্ডুমালা হাটে অন্তত ৩ হাজার গরু বেচাকেনা হয়ে থাকে। আর এই হাটে ছাগল বিক্রি হয় কমপক্ষে ১ হাজার ৬০০টি। একটি গরুতে সরকারি নির্দেশনা থেকে ৪০০ টাকা খাজনা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু গরু প্রতি আদায় করা হচ্ছে ৭০০ টাকা। আর ছাগল প্রতি ২০০ টাকা খাজনা আদায়ের নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে আদায় করা হচ্ছে ৩৫০ টাকা। তবে, ক্রেতা-বিক্রেতার কাউকে ছাড়পত্র দেয়া হয় না। দিলেও ছাড়পত্রে খাজনার এমাউন্ট সরকারি নিয়ম মতে দেয়া হয় বলে জানান মুন্ডুমালা হাটের বাসিন্দা আমির হোসেন আমীন। এভাবে সরকারি নিয়মের বাইরে প্রতিমাসে খাজনা আদায়ের নামে অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করা ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সোমবার মুন্ডুমালা হাটে গরু কিনতে আসা তানোর উপজেলার কামাগাঁ এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, হাটে গাভী ও বাছুর কিনে তাঁকে খাজনা দিতে হয়েছে ১৪০০ টাকা। তিনি আরও বলেন, গরু কিনে হাট থেকে বের হতে লাঠিয়াল বাহিনীকে দিতে হয়েছে আরও ৫০ টাকা। এখানে তাঁদের কোনো কিছুই করার নেই।
মুন্ডুমালা পৌরসভার চিনাশো মহল্লার বাসিন্দা সামশুল আলম জানান, একজোড়া ছাগল কিনে তাঁকে খাজনা দিতে হয়েছে ৭০০ টাকা। বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে আরও ২০০ টাকা। এছাড়াও অপর এক ব্যক্তি হাটে একটি বলদ গরু বিক্রি করায় তাঁকে গুনতে হয়েছে ১৫০ টাকা খাজনা।
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুন্ডুমালা এলাকার বাসিন্দা শরিফ খাঁন বলেন, মুন্ডুমালা পশুরহাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে। বিষয়টি ডিসি ও ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। এরপরও অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধ না হলে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্ডুমালা হাটের ইজারাদার শওতক হাজী বলেন, মেয়র সাইদুর রহমানের নির্দেশে নিয়ম মোতাবেক হাটে খাজনা আদায় করা হয়। তবে, চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করে সাক্ষাতে কথা হবে বলে মোবাইল সংযোগ বিছিন্ন করেন শওকত হাজী।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। আগামী হাটে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আজকের তানোর