রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৫৬ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : ছোটবেলা থেকেই সেলাই কাজে অন্যরকম আগ্রহ ছিল জেসমিন আক্তার যুথীর। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোটদের জামা সেলাই, টুপি তৈরিসহ হাতে বুনন বিভিন্ন কাজ করতেন। সেই ঝোঁক থেকেই আজ তিনি নারী উদ্যোক্তা। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বপ্ন বুনন’।
এ কারখানা ছয়টি শাখায় কাজ করছেন শতাধিক নারী। উদ্যোক্তা যুথীর পাশাপাশি এসব নারীরাও এখন স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
উদ্যোক্তা জেসমিন আক্তার যুথী উপজেলার চককেশব গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন শেখের মেয়ে। মান্দা মমিনা শাহানা সরকারি কলেজ থেকে বিকম পাশ করেছেন। চাকরির দিকে না গিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করেন নারী উদ্যোক্তা যুথীর ‘স্বপ্ন বুনন’ কারখানাটি।
উদ্যোক্তা জেসমিন আক্তার যুথী বলেন, করোনার সময় কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। বাড়িতে বসে বসে অলস সময় কাটাতে হচ্ছিল। এরপর নিজে থেকে রুলের সুতোয় বিভিন্ন পণ্য তৈরি শুরু করি। শুরুতে তৈরি এসব পণ্য রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন দোকানে বিক্রির চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে সফলও হন। বাজারে চাহিদা থাকায় ইউটিউব থেকে ধারণা নিয়ে মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করি।
যুথী আরও বলেন, পণ্যের বাজার সৃষ্টি হওয়ায় গ্রামের অসহায় নারীদের একাজে উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁদের নিজেই হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলেন। বাড়ির পাশে ঘর নির্মাণ করে সেখানে প্রশিক্ষিত নারীদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেন। মাস শেষে তাঁদের পণ্য তৈরির প্রকারভেদে মজুরি পরিশোধ করেন। বর্তমানে নিজ বাড়িসহ হাটোইর, বানিসর, কানারমোড় গাবতলীসহ ছয়টি কারখানা চালু আছে। এসব কারখানায় এলাকার অসহায় নারী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন।
উদ্যোক্তা যুথী বলেন, তাঁর কারখানায় পুতুল, টুপি, বেল্ট, আপেল, কমলা, হাতি, শিয়াল, বাঘ, সিংহ, জুতা, পাপসসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে রুলের সুতা ও পাটের চট।
এ কারখানায় কাজ করছেন বালুবাজার শফিউদ্দিন মোল্লা কলেজের একাদশ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিমা আক্তার। তিনি বলেন, বাবা দেলোয়ার হোসেন আটোচার্জারের চালক ও মা রেহেনা বিবি গৃহিণী। বড়বোন আফিফা আক্তার ডলির বিয়ে হয়েছে। ছোটবোন সীমা আক্তার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, জমিজমা না থাকায় বাবার সামান্য আয় দিয়ে কষ্টেই চলে তাঁদের সংসার। পাশাপাশি দু’বোনের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হয়। করোনার সময় বাবার আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসারে অভাব চেপে বসে। এ অবস্থায় কিছুটা আলোর পথ দেখান নারী উদ্যোক্তা যুথী আপা। প্রথম মাসেই দুবোন কাজ করে আয় করেন ৫৪০০ টাকা। কাজের প্রতি মনোযোগ আরও বেড়ে যায়। পরের মাসে দুবোন উপার্জন করেন ১১ হাজার টাকা। লেখাপড়ার পাশাপাশি এ আয় দিয়ে নিজেদের খরচ চালিয়ে নিচ্ছেন। বাবার কাছে আর হাত পাততে হয় না। সংসারেও সহযোগিতা করেন।
ঊানিসর গ্রামের গৃহবধূ জান্নাতুন নেছা বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসে স্বামী আব্দুর রাজ্জাক ব্রেন ষ্টোক করে মারা যান। স্বামী ছিলেন কৃষিজীবী। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে দুইমেয়ে রেহেনুমা ও রোশনিকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। একসময় কাজ পান ‘স্বপ্ন বুনন’ কারখানায়। কাজের ভিত্তিতে প্রথম মাসেই মজুরি পান সাড়ে ৩ হাজার টাকা। গত ৬ মাস ধরে কারখানায় কাজ করছেন। এখন অভাব নেই বললেই চলে।
নারী উদ্যোক্তা জেমসিন আক্তার বলেন, তাঁর কারখানায় তৈরি পণ্য বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব হলে এলাকার অসহায় নারীদের শ্রমের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া যাবে। কারখানার পরিধি বাড়লে আরও অনেক নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বাড়তি আয় তাঁদের পরিবারে অভাব-অনটন দুর করতে সহায়ক ভুমিকা রাখবে বলেও উল্লেখ করেন এই নারী উদ্যোক্তা। আজকের তানোর