সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৫০ pm
আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী) : জন্মের পর থেকেই জীবনের সঙ্গে প্রতিটি মূহুর্ত লড়াই করে চলেছে। তবুও লেখাপড়ার হাল ছাড়েনি। পিছু হটেনি লড়াই থেকে। বড় হওয়ার স্বপ্নকে ঘিরেই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। নিজের চেষ্টায় পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ গোল্ডেন পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এবার এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ২০২১Ñ২০২২ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে মেধা তালিকায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
কিন্তু অর্থাভাবে সেই আনন্দ এখন বিষাদে পরিনত হতে যাচ্ছে অন্তরা খাতুনের। সামনের পুরোটা পথ তার অনিশ্চিত। দারিদ্রতার কারণে চান্স পেয়েও ডাক্তার হওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বিধমা মা। তার চোখ মুখে এখন হতাশার ছাপ।
অন্তরা খাতুন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের চন্ডিপুর বড় ছয়ঘটি গ্রামে ছোট একটি ঘরে বসবাস করে। বাবা আলাউদ্দিন দুই বছর বয়সের সময় মারা যান। ভাই সোহেল রানাকে টাকার অভাবে পড়াতে পারেনি। বর্তমানে সে রাজমিস্ত্রির দিন হাজিরা হিসেবে কাজ করে। মা রসুনা বেওয়া মেয়ে অন্তরা খাতুনকে অনেক কষ্টে ব্রাক স্কুলে ভর্তি করে। অন্তরা খাতুন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চন্ডিপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে সফলতার সাথে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তারপর তাকে লেখাপড়া করনোর কোন অর্থ সংগ্রহ করতে পারছিলনা। নিরুপায় হয়ে পড়ে। কোন উপায় না পেয়ে মা অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গাভী পালন করে দুধ বিক্রি করে তাকে ভর্তি করেন বাঘা সরকারি শাহদৌলা কলেজে। সেখানেও অন্তরা সফলতার সাথে জিপিএ ৫ অর্জন করে উত্তীর্ণ হয়। তবে তাদের জমি বলতে বাড়ি ভিটাটুটু।
অন্তরার মা রসুনারা বেওয়া বলেন, মেয়ে মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। মেয়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আগে থেকেই ছিল। কিন্তু ভর্তিও টাকা জোগাড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। খুব কষ্টে চলে তিন সদস্যের পরিবার।
স্কুল জীবন থেকে শুরু করে সব পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করা অন্তরা ভালো ডাক্তার হয়ে গরিব অসহায়দের সেবা করতে চায়। বর্তমানে কারও কাছে একটু আর্থিক সহযোগিতা পেলে হাসি ফুটাবে অন্তরার মুখে।
অন্তরা খাতুন বলেন, প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা পড়া-লেখা করেছি। পাশাপাশি প্রতিবেশী ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়েছি। আবার কখনও কখনও মায়ের সাথে হাতের কাজ করেছি। এই আয় থেকে নিজের পড়া-লেখা খরচের পাশাপাশি সংসারের খরচ করেছি।
এ বিষয়ে বাজুবাঘা ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি ও চন্ডিপুর উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, অন্তরা নিজের চেষ্টায় পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ গোল্ডেন পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এবার এমবিবিএস কোর্সে মেধা তালিকায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কী হবে দরিদ্র অন্তরার?। নূন আনতে পান্তা ফুরায়। নানা প্রতিকুলতার মধ্যে চলে সংসার। সংগ্রামী জীবন তার।
মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে অর্থের জোগান দিয়ে মেডিকেলে পড়ানো এই পরিবারের পক্ষে খুব কঠিন। তার জন্য সমাজের শিক্ষানুরাগী কোন সুহৃদ ব্যাক্তির একটু সহযোগিতা পেলে তার ডাক্তার হওয়ার পথ নিশ্চিত হতে পারে। আজকের তানোর