সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৩২ am
ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক : রাজশাহীর তানোরে বিলকুমারী বিলে হঠাৎ করে উজান থেকে আসা পানিতে হাজার হাজার বিঘা বোরো জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে করে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন এখন পানির নিচে। ফলে এসময় এমন বন্যায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। বিল কুমারী বিলের রোবো ধান তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা বিগত সময়ে দেখেন নি কৃষক রা। কারন পানি নামার সম্ভাবনা কম,যদিও নামে জমি রোপনের কোন সুযোগ থাকবে না বলেও জানান কৃষকরা। যার কারনে কৃষকরাও চান পানি নামার পরে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অন্যকিছু চাষাবাদের পরামর্শ দিয়ে যদি কৃষি দপ্তর সুদৃষ্টি দেন তাহলে উপকৃত হবে প্রকৃত চাষিরা।
কামারগাঁ ইউপির বাতাসপুর গ্রামের কৃষক নারায়ন জানান, জমি রোপনের ৪৫ থেকে ৫০ দিন বয়সে বিলের জমির ধান এভাবে পানিতে তলিয়ে গেছে বলে আমার জানা নাই। আমার দূ বিঘা জমির ধান এখন পানির নিচে।
সম্প্রতি তার সাথে বাতাসপুর রাস্তায় কথা বলা হচ্ছিল ওই সময় পাড়ার অনেক কৃষক আসেন। তারা জানান, বাতাসপুর গ্রামের প্রায় কৃষকের জমির ধান পানিতে ঢুবে গেছে। তারা বেশ কিছু কৃষকের নাম জানান, তাদের মধ্যে সামাদ আলীর ১৫ বিঘা, এন্তাজ আলীর ৫ বিঘা, বেলালের ২ ঘা, এবারতের ৭ বিঘা, পলাশের ৯ বিঘা, আয়েসের ৩ বিঘা, আছেরের ৫ বিঘা, মুন্তাজের ৩ বিঘা,আবুলের ২ বিঘা, সুজনের ২ বিঘা, মজিবুরের ৪ বিঘা, রসুলের ৫ বিঘাসহ ওই গ্রামের অন্তত পাঁচশত কৃষকের প্রায় ১ হাজার বিঘা জমির ধান পানির নিচে পচে যাচ্ছে।
তারা আরো বলেন হঠাৎ কোথায় থেকে পানি এসে বিলে বন্যা শুরু হয়ে গেছে বুঝতেই যেন পারলাম না। এখন পর্যন্ত বিঘাপ্রতি প্রায় ৫ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। আর যারা লীজ নিয়ে রোপন করেছেন তাদের প্রায় ৬ হাজার টাকা পার হয়ে যাবে। কামারগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের পিছন দিয়ে শ্রীখন্ডা গ্রাম ও বালিকা স্কুল পার হলেই বাতাসপুর গ্রাম। মুল রাস্তার পূর্ব দিকে গ্রাম টি। চারপাশে বিল। গ্রামের নিচে বিশাল অংশে রোপন করা ছিল ধান। এসময়ে বিলের বাঁধ পর্যন্ত শুকনো থাকে। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র। দিনের দিন পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন।তবে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে কৃষকদের।কারন পানি নামা শুরু হয়েছে। গত শনিবার থেকে পানি কমতে শুরু করেছে বলে জানান স্হানীয় কৃষি দপ্তর।
কৃষকরা জানান, বিলকুমারি বিল কখনো খনন করা হয়নি।মাঝে মাঝে ঘিরে দিয়ে অনেকে দখল করেছেন। ফসলহানি না হওয়ার জন্য আশির দশকের দিকে নির্মাণ করা হয় বাঁধ। কিন্তু সেই বাঁধের অনেক জায়গা প্রভাব শালীদের দখলে। যার কারনে বাতাসপুর গ্রামের নিচে টেকরা নামক বাঁধের মত ঝুঁকি পূর্ন হয়ে আছে অনেক জায়গা। উপজেলার শেষ প্রান্ত কামারগাঁ ইউপির মালশিরা মাদারিপুর পারিশো,বাতাসপুর, শ্রীখন্ডা,দমদমা, মাঝিপাড়া, কামারগাঁ বাজার সংলগ্ন এলাকার কৃষকের ধান ডুবেছে।
কামারগাঁ ইউপির এক নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আলাউদ্দিন জানান, আমার ওয়ার্ডের মালশিরা, মির্জাপুর, বিহারোইল ও দুস্তরামপুর গ্রামের যাদের বিলে জমি রোপন করা ছিল তাদের জমি ডুবেছে। কি পরিমান রোপনকৃত জমি ডুবতে পারে,তিনি বলেন প্রায় ৪/৫ শত বিঘা হতে পারে এবং পানি নেমে গেলেও ধান হবেনা।কারন বেশকিছু দিন ধরেই ডুবে আছে,পঁচে গেছে। এজন্য পানি নামার পরে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দের সরকার যদি বিশেষ প্রনোদনা দেয় তাহলে অন্যকিছু চাষাবাদ করে পুষিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করেন এই তৃণমূলের দু বারের ইউপি সদস্য।
আরেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম রাজা জানান, শ্রীখন্ডা, দমদমদ,মাঝিপাড়া, কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষকদের নিম্মে হলেও ৭শত বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে। বিলের জমির উপর নির্ভর করে এসব কৃষক দের চলে জীবিকা নির্বাহ। কোনভাবেই ধান হবেনা। এই তরুন সদস্যও প্রনোদনার মাধ্যমে অন্যকিছু চাষের পরামর্শ দিলে হয় তো ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে চাষিরা।
তানোর পৌরসভার তালন্দ, গোকুল চাপড়া,ধানতৈড়, গুবিরপাড়া, হিন্দুপাড়া,গোল্লাপাাড়া, ও কুঠিপাড়া গ্রামের পূর্ব দিকে বা শীবনদী ব্রিজের উত্তরে বিলের আরেক মুল অংশ। এই অংশ অনেক মৎস্য জীবিরা খাস জমি রোপন করতেন। কিন্তু এবার পারেনি। , আমশো,জিওল, ভদ্রখন্ড, বুরুজ বা বুরুজ ঘাট বেলী ব্রিজের এবং নির্মিত ব্রিজের উত্তরে রয়েছে আরেক অংশ।
সুত্রে জানা গেছে, বিলে শত-শত কৃষক ছাড়াও ভূমিহীন কৃষকেরা জমি রোপন করে থাকেন। যারা এই বোরো ধান চাষের উপর নির্ভর। বিশেষ করে ভুমিহীন মৎস্য জীবিরা বিলের একেবারে নিচে খাস জমিতে বোরো ধান চাষ করে বছরের বা ছয় মাসের খাবার উৎপাদন করেন। কিন্তু পানি বেড়ে যাওয়ায় তারাও এবারে রোপন করতে পারেন নি।আর পারবেন নাও।চরম হতাশায় ভুগছে চাষিরা ।এক বাতাস পুর গ্রামেই যদি পাঁচ শতাধিক কৃষকের এক হাজার বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়, তাহলে এত গ্রামের কত কৃষকের সোনালী স্বপ্ন ম্লান হয়ে পড়েছে এমন প্রশ্ন উঠেছে কৃষকদের মাঝে ।
এর সঠিক হিসাব তো স্হানীয় কৃষি দপ্তরেও পাওয়া দুরুহ ব্যাপার।কারন আদিকাল থেকেই উপজেলায় প্রায় ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির মত হিসাব নিয়েই চলছে সব কিছু। অথচ বিগত দশ বছরে শতশত হেক্টর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। তাও আদিকালের হিসাব এখনো রয়েই গেছে। তাহলে কি ভাবে হিসাব থাকবে কৃষি দপ্তরে এমন নানা প্রশ্ন সচেতন কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম বলেন, যেসব এলাকায় বিলের নিচের জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে সে সব এলাকা নিয়োমিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। পানি নেমে যাচ্ছে, আবহাওয়া ভালো রয়েছে। পানি নামার পর বোঝা যাবে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে। এজন্য কয়েক দিন উপেক্ষা করতে হবে। তবে তিনি সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠেই থাকছেন বেশি সময়।
তিনি আরো জানান, এবারে উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষমাত্রা প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমি। যে পরিমান জমির ধানের ক্ষতি হবে, সেই পরিমাণ তুলে ধরা হবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। আজকের তানোর