বিনোদন ডেস্ক : আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বছরের সব দিন ভালোবাসার হলেও এ দিন যেন প্রিয়জনকে বিশেষভাবে ‘ভালোবাসি’ বলার। তারকারাও আছেন এ তালিকায়। সম্প্রতি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম ও পরীমনি।

ভালোবাসার গল্প বলেছেন তাঁরা। শুনেছেন আতিফ আতাউর।

নতুন বছরের বসন্ত বাতাসে লেগেছে ভালোবাসার ছোঁয়া। প্রিয় মানুষকে আপন করে নিতে না নিতেই বসন্ত ও ভালোবাসার দিন এসে হাজির তাঁদের সামনে। জেনে নিন তারকাদের প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে ও একে অপরকে কাছে পাওয়ার পরের অনুভূতি।

‘স্বপ্ন পূরণ হয়েছে’

বিদ্যা সিনহা মিম

চলতি বছর ৪ জানুয়ারি ভালোবেসে বিয়ে করেন অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। অনেক দিন ধরেই একজন ব্যাংকারের সঙ্গে মিমের প্রেমের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। শেষমেশ গত বছর ১০ নভেম্বর কুমিল্লার ছেলে ব্যাংকার

সনি পোদ্দারের সঙ্গে আংটি বদলের কথা জানিয়েছিলেন মিম। মিম জানান, ছয় বছরের বেশি সময় ধরে তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক। একসময় দুই পরিবারের সদস্যদের তাঁদের সম্পর্কের কথা জানানো হয়। তাঁরাও দুজনের সম্পর্ক নিয়ে শুরু থেকেই ইতিবাচক ছিলেন।

বিয়েতে এই তারকা পরেছিলেন ভারতীয় ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের নকশা করা লাল লেহেঙ্গা। টকটকে লাল এই লেহেঙ্গাজুড়ে ছিল পাথর, জরির এমব্রয়ডারি ও মুক্তার ভারী কাজ। গলায় ও কানে পরেছিলেন ভারী পাথরের গয়না। আর বর সনি পোদ্দার সেজেছিলেন সাদা গোলাপি শেরোয়ানিতে। বিয়ে করেন হিন্দু ধর্মীয় রীতি মেনে। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন সনি পোদ্দার ও মিমের ঘনিষ্ঠজনরা।

বিয়ের পর আজই তাঁদের প্রথম ভালোবাসা দিবস উদযাপন। কী করবেন জানালেন মিম, ‘দুজনেই যার যার কাজে অন্য সব দিন ব্যস্ত থাকি। চেষ্টা করব এই দিনটিতে ওর সঙ্গে ভিন্নভাবে কাটানোর। আর এটা তো শুধু আমাদের ভালোবাসার দিন নয়। ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে প্রতিটি দিনই ভ্যালেনটাইনস ডে মনে হয়। স্বপ্ন ছিল একসঙ্গে থাকার। সেটা পূরণ হয়েছে। বাকিটা জীবনও দুজন একসঙ্গে থাকতে চাই। ’

করোনার কারণে হানিমুনও করতে পারেননি তাঁরা। প্রকোপ কমলে দেশের বাইরের কোনো সমুদ্রসৈকতের রিসোর্টে সময় কাটাতে চান দুজনই।

‘ওকে পেয়ে ভীষণ খুশি’

পরীমনি

কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটা করে বিয়ের খবর জানিয়েছিলেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। শুধু বিয়ে নয়, সঙ্গে মা হওয়ার খবরও। এরপর ঘরোয়া পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ঘটা করে গায়েহলুদও হয় বর-কনের। বর আরেক অভিনেতা শরীফুল রাজ। যেন সিনেমার মতোই এই নায়িকার জীবনের গল্প। পরীমনির বনানীর ফ্ল্যাটেই ছিল সব আয়োজন।

রাজ-পরীর প্রেম ও বিয়ের ঘটনা ঘটে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের মুক্তিপ্রতীক্ষিত সিনেমা ‘গুনিন’ এর শুটিংয়ে। এরপর চিকিত্সকের কাছ থেকে মা হওয়ার নিশ্চিত খবর পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন দুজনই। ফেসবুকের মাধ্যমে খবরটি ভক্তদের জানিয়ে দেন। পরীমনি বলেন, “রাজকে আগে সেভাবে চিনতাম না। ‘গুনিন’ ছবির শুটিং সেটে ওর সঙ্গে পরিচয়। আমরা খুব মজা করে কাজ করতাম। একসময় মনে হলো, আমি যেমন পাগল সে-ও তা-ই। দুজনের দুজনকে ভালো লেগে যায়। প্রেম হওয়ার সাত দিনের মাথায় বিয়ে করেছি আমরা। ওকে পেয়ে ভীষণ খুশি আমি। ”

গত বছর ১৭ অক্টোবর আফতাবনগরে রাজের বাসায় পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাঁদের। শুটিং ও অন্য কাজগুলো শেষ করে গুছিয়ে অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। সে কারণেই কাউকে আগে জানাতে পারেননি বিয়ের খবর।

বিয়ের পর এবারই প্রথম ভ্যালেনটাইনস দিবস। কিভাবে কাটাবেন দিনটি জানতে চাইলে পরীমনি বলেন, ‘সারা দিন বাসাতেই থাকব। সন্ধ্যার পর রাজকে নিয়ে বাইরে কোথাও যেতে পারি। অনাগত সন্তানের জন্য সব কাজ ও শুটিং স্থগিত করেছি। সবার আগে ওর নিরাপত্তা। ’

মৌনী–সুরাজ

কিছুদিন আগে প্রেমিক সুরাজ নামবিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন কোচবিহারের মেয়ে মৌনী রায়। গোয়ার হিলটন রিসোর্টে বসেছিল বিয়ের আসর। বিয়েতে গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে মৌনী

পরেছিলেন সাদা শাড়ি ও সাদা ফুলের গয়না। মেহেদির দিন পরেছিলেন হলুদ রঙের লেহেঙ্গা চোলি, গলায় ভারী কানের দুল ও মাথায় টিকলি। ভিকি-ক্যাটের মতো এই দুজনও নিজেদের প্রেম বা বিয়ে নিয়ে কখনো প্রকাশ্যে কথা বলেননি। শোনা যায়, ২০২০ সালের শুরুতে করোনার প্রথম লকডাউনে নিজের দিদি-জামাইবাবু ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দুবাই থাকাকালীন সুরাজের প্রেমে পড়েন মৌনী।

ভিকি–ক্যাট

নানা জল্পনার পর গত বছরের শেষ দিকে ৯ ডিসেম্বর রাজস্থানে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন ক্যাটরিনা কাইফ ও ভিকি কৌশল। সোনালি রঙের শেরোয়ানিতে ভিকি ও সোনালির ওপর লাল-হলুদ-সবুজ জরি সুতার কাজ করা লেহেঙ্গা পরেছিলেন ক্যাটরিনা। রাজকীয় এই বিয়েতে হাজির হয়েছিলেন বলিউডের বিখ্যাত সব তারকা। দামি উপহারের বন্যা

বয়ে গিয়েছিল দুজনের বিয়েতে। বিয়ের ছবির উত্তাপ কমতে না কমতেই জমিয়ে সংসার শুরু করেছেন দুজন। নতুন জীবন, নতুন পরিবার ও সংসার পেয়ে দারুণ খুশি দুই তারকা। শ্বশুরবাড়িতে রীতিমতো চামচ-খুন্তিতে মেতে উঠেছেন ক্যাটরিনা। সবাইকে রান্না করে খাওয়াচ্ছেন। ভক্তদের সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে সেসব ছবি শেয়ার করছেন। এখন মুম্বাইয়ে বিলাসবহুল নতুন ফ্ল্যাটে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। তবে নিজেদের মধ্যে প্রেম কিংবা বিয়ে কোনো বিষয়েই প্রকাশ্যে কোনো দিনই মুখ খোলেননি কেউ।

বিয়ের পোশাকের বরপুত্র

সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তারকারাও তাকিয়ে থাকেন তাঁর দিকে। জীবনের আজন্মলালিত স্বপ্নের মুহূর্তটি রাঙাতে চান তাঁর নকশা করা পোশাক পরে। সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়কে এখন ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিয়ের পোশাকের ডিজাইনারই মনে করা হয়। ভারতের ফ্যাশন ইতিহাসে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে দিচ্ছেন তিনি। কলকাতার এই ডিজাইনারের পোশাক দিল্লি, মুম্বাই, হায়দরাবাদ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে ক্যালিফোর্নিয়া, আটলান্টা, লন্ডন ও দুবাইয়ের মতো শহরেও। কয়েক বছর ধরেই বলিউডের প্রায় সব নামকরা তারকা বিয়েতে তাঁর নকশা করা পোশাক পরছেন। আনুশকা শর্মা, দীপিকা পাড়ুকোন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, নেহা কক্কর, পত্রলেখা পাল, ক্যাটরিনা কাইফের মতো তারকারা বিয়েতে বউ সেজেছেন তাঁর করা পোশাকে। এ তালিকায় নাম লিখেছেন বাংলাদেশের তারকা বিদ্যা সিনহা মিমও। সম্প্রতি বিয়েতে তিনি যে লাল লেহেঙ্গা পরেছিলেন, সেটি সব্যসাচীরই নকশা করা। এ বছর আলিয়া ভাট ও শ্রদ্ধা কাপুরের বিয়ের কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, তাঁরাও নাকি সব্যসাচীর পোশাকে বউ সাজবেন।

রাজকুমার–পত্রলেখা

‘আমার পরানভরা ভালোবাসা আমি তোমায় সমর্পণ করিলাম। ’ নববধূ পত্রলেখার বিয়ের ওড়নায় লেখা ছিল প্রেমের এই পঙক্তি। এই প্রেম স্বামী রাজকুমার রাওয়ের প্রতি। বউয়ের প্রতি রাওয়ের প্রেমও কম নয়। বিয়ের কিছুদিন আগেই নতুন করে হাঁটু গেড়ে হবু স্ত্রীকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন অভিনেতা। ভারতের চণ্ডীগড়ে মহা ধুমধামে আয়োজন করা হয় দুজনের বিয়ের অনুষ্ঠান। এক দশকের বেশি সময় চুটিয়ে প্রেমের পর বিয়ে করেন তাঁরা। বিয়ের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় পত্রলেখা লেখেন, ‘আমার সব কিছুকে আমি আজ বিবাহ করলাম। আমার প্রেমিক, আমার পার্টনার ইন ক্রাইম, আমার পরিবার, আমার প্রাণের দোসর। গত ১১ বছরে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। আমার কাছে তোমার স্ত্রী হওয়ার চেয়ে বড় সুখ এই পৃথিবীতে নেই। ’

আর রাজকুমার রাও লেখেন, ‘১১ বছরের ভালোবাসা, রোমান্স, বন্ধুত্ব, মজা পেরিয়ে আমার জীবনের সব কিছুকে আমি আজ বিয়ে করলাম। আমার প্রাণের দোসর, আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, আমার পরিবার। আজ আমার কাছে তোমার স্বামী ডাকের চেয়ে বড় সুখ আর নেই। পত্রলেখা…আমাদের চিরদিনের যাত্রা শুরু হলো। ’ সূত্র : কালের কণ্ঠ