শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:২২ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ! রাজু আহমেদ তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ
যে চাওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাসব্যাপী : মোমিন মেহেদী

যে চাওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাসব্যাপী : মোমিন মেহেদী

বাণিজ্যমেলা চললো মাসব্যাপী, সরকার বললো- ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হয়েছে।’ তাহলে বইমেলা কেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে হবে না? কেন ঐতিহ্যবাহী এই বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু না হয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকেও শুরু ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতা তৈরি হলো? এমন অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে কেবলই কানে বাজতে থাকে চিরন্তন নিবেদিত থাকা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার স্বপ্নে বিভোর আধুনিক বিশ্বে যতরকম মেলা হয়ে থাকে এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো বইমেলা। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ মেলার আয়োজন করা হয়। এসব মেলায় ভিড় করে লাখ লাখ মানুষ। ভারতীয় উপমহাদেশেও প্রচুর মেলা বসে। সেগুলার প্রাচীন ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাসে তারাই টিকে আছেন, টিকে থাকবেন, যারা জ্ঞানের সাথে থেকে বইমেলার মত জ্ঞানের মেলাকে আলোকিত করেছেন। বর্তমান সরকারের বানিজ্য-সংস্কৃতি-অর্থ-স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলবো- ‘বাংলাদেশকে কেন খাদের কিনারে নিয়ে যাবেন নিজেদের অহেতুক আঙ্গুল ফুলে ক্ষমতায় দুলে থাকার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লোভে?’ দয়া করে এসব বাদ দিয়ে আলোকিত হওয়ার-এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিবেদিত থাকুন বইমেলাকে আলোকিত করার জন্য। যাতে করে আপনারাও একটি বইমেলা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস্তবায়নের ইতিহাসে অমর হয়ে যেতে পারেন।
এই বইমেলার ইতিহাস শুধু কথায় নয়; কাজেও আমাদের বুকে ঢুকে আছে অপার ভালোবাসায়। আজ সেই বইমেলার ভালোবাসা থেকে বলতেই হচ্ছে- আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় দৈনিক ইত্তেফাকে কচি কাঁচার আসরে ১৯৯৫ সালে আর তারও ৫ বছর পরে ২০০০ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম গ্রন্থ ‘আলোর পথে’। বইটি প্রকাশিত হয় বাংলা বাজারের একটি বাণিজ্যিক প্রকাশা প্রতিষ্ঠান থেকে। সেই শুরু, পথ চলতে চলতে ২০২২ সালে যখন এসে পৌছেছি। তখন আমার রচিত এবং বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৬৪ টি। একই সাথে আমার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সাউন্ডবাংলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে দেশের বরেণ্য কবি-লেখক-সাংবাদিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তি বর্গের সাড়ে ৪ শত গ্রন্থ। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালিন সময়ে সাউন্ডবাংলা থেকে আমি প্রকাশ করেছি ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, কবি রবীন্দ্র গোপসহ ১৭ জন বরেণ্য মানুষের বই। পরবর্তীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক লায়ন শামসুল হুদা, ভাষাসৈনিক রেজাউল করিম, রাবেয়া সিরাজ, রিফাত নিগার শাপলা, প্রত্যয় জসীমসহ শত শত লেখক কবির বই প্রকাশ করেছি। বই প্রকাশ আর লেখালেখির রাস্তায় অগ্রসর হওয়া আমি মনে করি- একুশে বইমেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকাটা আমাদের দৈন্যতার প্রমাণ। তা না হলে যখন বাণিজ্য মেলা হচ্ছে, তখন বইমেলা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কিন্তু কেন? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে লম্বা সময় পার হয়ে এলেও অমর একুশে বইমেলা নিয়ে এখনো কাটেনি অনিশ্চয়তা। বাংলা একাডেমি খোলাসা করে জানায়নি কিছুই। বই ছাপা নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন আমার মত অসংখ্য প্রকাশক। হতাশ আমার মত অসংখ্য লেখকও। এই হতাশা কাঁটাতে চাই বইমেলা। চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরন্তর বইমেলা হোক, কাটুক যত আঁধার…
বইমেলার ইতিহাস শুধু জানাই নয়, বোঝাও প্রয়োজন। জানেন তো! প্রাচীন চীনারা বই সংগ্রহ শুরু করে ৯৬০ সালের পরে। তার এর নাম দেয় ‘শানবিন’। বইকে তারা খুবই গুরুত্ব দিতো। তাদের সংস্কৃতি ইতিহাসকে ধরে রাখার জন্যই বই সংগ্রহ শুরু করে চীনারা। পৃথিবীতে এই বই সংগ্রহের রীতিটি বেশ পুরনো। সক্রেটিস আমলেও ছিল বলেও জানা যায়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, খ্রিষ্টীয় পনেরো শতকে জোহানস গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা আবিষ্কার করেছেন। বলা হয় সেই সময় থেকেই বইমেলার সূচনা হয় জার্মানিতে। অনেকের মতে জার্মানির লিপজিগ শহরে প্রথম বইমেলা হয়েছিল। কিন্তু কারও কারও ধারণা এর বিপরীত। তারা মনে করেন, প্রথমে বইমেলা শুরু হয় ফ্রাঙ্কফুর্টে, লিপজিগ খুব বড় করে মেলার আয়োজন করায় ওটার নামই লোকজন জানতো বেশি। সে সময় বইমেলাগুলো তেমন জনপ্রিয়তা না পেলেও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৭ শতকের পর ইউরোপসহ বিশ্বের আরও কিছু দেশে বইমেলা শুরু হয়।
যখন বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধির অযুহাতে বানিজ্যমেলা চালু রাখলেও ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ বন্ধ করতে চাইছে বইমেলা। তখন আমাদের আধুনিক প্রযুক্তিময় সময়ে সারাবিশ্বে এখন অনেকগুলো আন্তর্জাতিক বইমেলা হচ্ছে। সেখানে লোকজনের ভিড়ও দেখার মত। এর মধ্যে অন্যতম বইমেলাগুলো হলো- লন্ডন বইমেলা, আন্তার্জাতিক কলকাতা বইমেলা, নয়াদিল্লি বইমেলা, কায়রো বইমেলা, হংকং বইমেলা, বুক এক্সপো আমেরিকা (বিইএ), আবুধাবি বইমেলা ইত্যাদি। আর আমাদের বাংলাদেশে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নামে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলে বইমেলা। কিন্তু আমরা হয়ত অনেকেই জানি না এই বইমেলার ইতিহাস। কিভাবে শুরু হলো এই বইমেলা? কে বাঙালির এই প্রাণের মেলা সূচনা করেন? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে চলুন জেনে নেই পড়তে পড়তে- বাংলাদেশে বইমেলার উদ্ভবের ইতিহাস খুবই কৌতূহলোদ্দীপক। বইমেলার চিন্তাটি এ দেশে প্রথমে মাথায় আসে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীনের। তিনি বাংলা একাডেমিতেও একসময় চাকরি করেছেন। বাংলা একাডেমি থেকে ষাটের দশকের প্রথম দিকে তিনি গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। তিনি যখন বাংলা একাডেমিতে ছিলেন, তখন বাংলা একাডেমি প্রচুর বিদেশি বই সংগ্রহ করত। এর মধ্যে একটি বই ছিল ডড়হফবৎভঁষ ডড়ৎষফ ড়ভ ইড়ড়শং. এই বইটি পড়তে গিয়ে তিনি হঠাৎ দুটি শব্দ দেখে পুলকিত বোধ করেন। শব্দ দুটি হলো: ‘ইড়ড়শ’ এবং ‘ঋধরৎ’. কত কিছুর মেলা হয়। কিন্তু বইয়েরও যে মেলা হতে পারে এবং বইয়ের প্রচার-প্রসারের কাজে এই বইমেলা কতটা প্রয়োজনীয়, সেটি তিনি এই বই পড়েই বুঝতে পারেন। ইতিহাস বলছে- ওই বইটি পড়ার কিছু পরেই তিনি ইউনেস্কোর শিশু-কিশোর গ্রন্থমালা উন্নয়নের একটি প্রকল্পে কাজ করছিলেন। কাজটি শেষ হওয়ার পর তিনি ভাবছিলেন বিষয়গুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করবেন। তখন তাঁর মাথায় আসে, আরে প্রদর্শনী কেন? এগুলো নিয়ে তো একটি শিশু গ্রন্থমেলাই করা যায়। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। তিনি একটি শিশু গ্রন্থমেলার ব্যবস্থাই করে ফেললেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি) নিচতলায়। যত দূর জানা যায়, এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম বইমেলা। এটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৫ সালে।
জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার প্রত্যয়ীদের দেশে স্বাধীনতা আসলো ১৯৭১-এর রক্তক্ষয়ি মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। আর সেই স্বাধীনতার পর আলোকিত বাংলাদেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী ফেব্রুয়াারি মানেই প্রাণের মেলা-বইমেলা। পায়ে পায়ে সবার গন্তব্য বইমেলা প্রাঙ্গণ। ক্যালেন্ডারের পাতায় আসছে ফেব্রুয়াারি, কেবল তোড়জোড় নেই সেই আয়োজনের। বাঙালির মননশীলতা, সৃষ্টিশীলতার এই উৎসব থমকে আছে অদৃশ্য এক শক্রর কাছে। বাংলা একাডেমি প্রথমে ভার্চুয়াল, পরে সময় পেছানোর কথা বললেও এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করতে পারেননি, আদৌ হবে কিনা মেলা? আর বইমেলার সঙ্গে চরম অনিশ্চয়তায় এই খাতের সাথে যুক্ত সব পক্ষ। আমি মনে করি দেশের জ্ঞান ও অর্থের এমন নিবেদিত থাকা অনন্য স্থানটিকে আলোকিত করতে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে সকল প্রস্তুতি শেষে খুব দ্রুতই বই আয়োজনের তারিখ জানানো হোক। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হোক বইমেলা। কেননা, বইমেলা মানে সমস্ত বাঙালির একটা আবেগের ব্যাপার। বইমেলা হওয়া উচিৎ, সেটা যেভাবে হোক না কেন। আমরা দেখেছি- বাণিজ্য মেলা, নির্বাচন, বিয়ে, জন্মদিন-মৃত্যুদিনসহ সকল উৎসব আয়োজন এই করোনায় ঠিক মত হলেও কেবল বইমেলা আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা আসলেই গড়িমসি শুরু হয়ে যায়। তার প্রমাণ হিসেবে বলতে পারি- অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০ শুরু হয়েছিলো ২ ফেব্রুয়ারি থেকে। ১ দিন দেরি করে শুরু হওয়া বাঙালির প্রাণের ও ঐতিহ্যের বইমেলাটি প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হলেও ব্যতিক্রম ছিলো ২০২০। সে বছর সিটি নির্বাচনের কারণে এই একদিন পেছানো হয়েছিলো। অথচ এই বইমেলা নিয়ে আমার ভালোবাসাময় বক্তব্য হলো যে, ‘বইমেলা’ কিংবা ‘গ্রন্থমেলা’ শব্দ দুটি যেন বাঙালির প্রাণের স্পন্দে স্পন্দে রন্ধিত রয়েছে। ফেব্রুয়ারি এলেই প্রতিটি বাঙালির নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে ধ্বনিত হয় এই বইমেলা। ‘বইমেলা’ শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। সেই বইমেলাটি আমি চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাসব্যাপী হোক…লেখক, মোমিন মেহেদী, চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি।

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.