শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৫২ pm
আব্দুস সবুর, ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক : কনকনে শীত অপেক্ষা করে বরেন্দ্র অঞ্চল নামে পরিচিত রাজশাহীর তানোর উপজেলা। এউপজেলার মাটি কৃষি ফসল উৎপাদনে চমৎকার উর্বর হলেও এরমধ্যে ধান প্রধানত হলেও এরপরই হয় আলুর চাষ । তবে উপজেলার বেশিরভাগ ভাগ মানুষ ধান চাষের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে গত সপ্তাহ থেকে এপর্যন্ত প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে তানোরের পূর্বদিক দিয়ে বয়ে চলা বিলকুমারি বিলে যাদের জমি আছে তারা অনেকেই বোরো রোপন ধান করে ফেলেছেন এবং চলছে পরিচর্যার কাজও । আর উপরের দিগন্ত ধানী মাঠের জমিতে আলুর পরিচর্যার কাজও। হাড় কাপাঁনো শীত হলেও উপজেলার শ্রমিকরা এখন চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদুই ফসল রোপন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত চমৎকার অনুকুলে আবহাওয়া। ফলে সব কিছুই সময় মতই হচ্ছে বলে মনে করছেন চাষিরা। অবশ্য ইতিপূর্বেই বিলের বেশির ভাগ জমি রোপন হয়ে গেছে ।আর মাঠের জমি তৈরি ও রোপনের কাজ চলছে জোরালো ভাবে। এদিকে আলুর ক্ষেত্রেও একই কনকনে শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকেই জমি পরিচর্যার কাজে লেগে পড়ছেন কৃষক শ্রমিকরা। কুয়াশায় ভেদ করে হাড় কাঁপানো শীত অপেক্ষা করে দেশকে খাদ্যে ভরপুর করছেন বাংলার নায়ক হিসেবে পরিচিত কৃষক শ্রমিকরা।
পৌর সদর এলাকার কৃষক মফিজ জানান বিলে প্রায় আড়াই বিঘা জমি রোপন করা শেষ হয়েছে। শুধু আমার না বিলের জমি প্রায় রোপন শেষের দিকে।তবে গত কয়েকদিন প্রচুর ঠান্ডা ছিল।আবার গত রোববার গুড়িগুড়ি বৃষ্টি এবং সূর্যের কোন আলোই দেখা যায় নি।পুরো সপ্তাহ ছিল হাড় কাঁপানো শীত। যদিও শুক্রবারে দিনের আলো দেখা গেলে হিমেল বাতাসে ছিল ঠান্ডা। আর সন্ধা থেকে তো শরীরের যে টুকু অংশ বেরিয়ে থাকছে, তা প্রচন্ড ঠান্ডা হয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,উপজেলার চান্দুড়িয়া ব্রীজ ঘাট থেকে তানোর পৌর এলাকা হয়ে কামারগাঁ ইউপির বীজ দিয়ে শেষ প্রান্ত মালশিরা পর্যন্ত হাজার হাজার কৃষকের রয়েছে জমি। এসব জমিতে বোরো ধান চাষ হয় যেমন, তেমনি হয় বাম্পার ফলন। এগুলো নিচু জমি, এজন্য দ্রুত বোরো রোপন করে ফেলেন কৃষকরা।কারন ধান পাকার আগেই হয় টানা বৃষ্টি। মুলত এজন্যই বিলের জমি আগাম রোপন করে থাকেন।
অবশ্য বিলের রোবো ধান ঘরে তোলা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকেই।তাই বিলের বোরো ধান তোলা না মরার আশা এমন স্বপ্ন নিয়েই রোপিত হয় বোরো।অবশ্য গত মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকার কারনে পাকা ধান ঘরে তুলতে পেরেছিলেন কৃষকরা।
পৌর সদর গুবিরপাড়া গ্রামের তরুন কৃষক সারোয়ার জানান প্রথমবারের মত বিলে দু বিঘা জমি রোপন শেষ হয়েছে। আরেক প্রবীন কৃষক মাজউদ্দীন জানান বিলে ছয় বিঘা জমিতে বোরো লাগিয়েছি।এখন পরিচর্যার কাজ চলছে।
এদিকে উপজেলা জুড়েই চলছে আলু পরিচর্যার কাজ। আলু চাষী লুৎফর জানান প্রতি বারের মত এবারো ৮০ বিঘা জমিতে আলু রোপন করা হয়েছে।আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর গাছ ভালোই আছে। আশা করছি আলুর ফলন ভালোই হবে।কিন্তু বাজার দর নিয়ে রয়েছে সন্দিহান বলেও আশঙ্কা এই চাষির।তিনি আরো জানান গত মৌসুমে আলু চাষিদের লোকসান গুনতে হয়েছে। দেলোয়ার নামের আরেক চাষী জানান, ১৪ বিঘা জমিতে আলু লাগানো হয়েছে। গাছের চেহেরা ভালোই লাগছে।
একাধিক চাষিরা জানান গত মৌসুম থেকে আলু চাষে খরচ বেড়েছে অনেক।কারন আলু রোপনের সময় সার বীজ নিয়ে ব্যাপক সিন্ডিকেট শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।সব কিছুই বাড়তি দামে কিনতে হয়। যারা জমি লীজ নিয়ে আলু লাগিয়েছেন তাদের কে বিঘা প্রতি প্রায় ৫০/৫৫ হাজার টাকা করে খরচ গুনতে হবে। মোহাম্মাদ আলী পুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার জানান ৪ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি।এখন পর্যন্ত সব কিছুই ভালো আছে।কোন মড়ক দেখা দিলে পথে বসতে হবে।হাতিনান্দা গ্রামের কৃষক আশিক ৩ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়ে পরিচর্যার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ছাঐড় গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী জানান ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন শেষ হয়েছে। তিনি আরো জানান একই এলাকার তমিজ উদ্দিনের ৮ বিঘা,জাকারিয়ার ৩ বিঘা ও এমদাদুলসহ অনেকেই রোপনের কাজ শেষ করেছেন।আবার অনেকে জমি তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জোরতাল ভাবে। তবে সপ্তাহ ধরে প্রচুর ঠান্ডা,সেই সাথে বইছে বাতাস মাঠে কাজ করায় কষ্টকর হয়ে পড়েছে শ্রমিক দের।কিন্তু উপায় নেই সব কিছুকেই উপেক্ষা করে বাংলার নায়ক হিসেবে পরিচিত কৃষক শ্রমিকরা কোন বাধাই মানেন না।
এছাড় দিকে উপরের বা কলমা, কামারগাঁ,তালন্দ, তানোর পৌর এলাকা,পাচন্দর,সরনজাই, চান্দুড়িয়া মুন্ডুমালা পৌরসভা ও বাধাইড় ইউপির বিভিন্ন ধানী মাঠে যে সব জমিতে আলু চাষ হয়নি বা লীজ দেননি ওসব জমি তৈরির কাজ ও রোপন করতে দেখা যায়। কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়,উপজেলায় দু ভাগে বোরো চাষ হয়। বিলের জমিতে আগাম এবং আলু উত্তোলনের পর হয় ।
কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকার জন্য কৃষকরা বোরো বীজ, রোপন ও আলু রোপন পরিচর্যা সব কিছুই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই হয়েছে। আলুর লক্ষমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে।
তবে, বেশি হয়েছে এবং আগাম বোরো চাষ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে এবং আলু উত্তোলনের পর প্রায় ৮/৯ হাজার মিলে অন্তত ১৪/১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, কৃষকদের সমস্যা নিয়ে মাঠ দিবস করা হচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলনও ভালো হবে বলে আশাবাদী তিনি। আজকের তানোর