শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৩৬ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্মেলনের দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় পর অবশেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেলো রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় হাই কমান্ড এ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।
কমিটিতে ৭১ জনের নাম অনুমোদন করা হয়েছে। তবে দলের গঠণতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিটি জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি হয় ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট।
সদ্য অনুমোদিত ৭১ সদস্যের কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে একজনের নাম রয়েছে যিনি দেড় মাস আগে মারা গেছেন। তাই এমন ত্রুটি-বিচ্যুতি ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
রাজশাহীতে কি আওয়ামী লীগের নেতার অভাব পড়েছে যে এতদিন পর দেওয়া কমিটিও পূর্ণাঙ্গ হলো না এর ওপর আবার ত্রুটিপূর্ণ। এমন প্রশ্ন এখন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অনেক নেতারই। তারা এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভপতি হিসেবে মেরাজ উদ্দিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবদুল ওয়াদুদ দারা এবং যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে আয়েন উদ্দিন ও লায়েব উদ্দিন লাভলুর নাম ঘোষণা করা হয়। এ চারজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তারা দলের ত্যাগী ও প্রকৃত সদস্যদের নিয়ে এক
মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তাদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠাবেন। তবে দলীয় কোন্দল ও নতুন নেতৃত্বের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘ সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পায়নি। যদিও দুই দফা কমিটির নাম পাঠানো হয় কেন্দ্রে। তবে পকেট কমিটি গঠন ও কমিটিতে অনুপ্রেবেশকারীদের নাম দেওয়ার অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে ওই কমিটিগুলো অনুমোদন পায়নি। পরে বিষয়টি নিয়ে দলীয় প্রধানকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়।
এত কিছুর পর অবশেষে গত বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) কেন্দ্র থেকে ৭১ সদস্যের নতুন কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে এ কমিটির অনুমোদন দেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
নতুন কমিটির ১১ জন সহ-সভাপতি হলেন- অনিল কুমার সরকার, আমানুল হাসান দুদু, অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন, অ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার ঘোষ, অধ্যক্ষ এস এম একরামুল হক, আমজাদ হোসেন, সাইফুল ইসলাম দুলাল, অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম শরীফ, জাকিরুল ইসলাম সান্টু, শরীফ খান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা রিয়াজউদ্দিন আহমেদ। নতুন যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল।
কমিটির তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন- এ কে এম আসাদুজ্জামান, অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ ও আলফোর রহমান। এছাড়া আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট এজাজুল হক মানু, কুষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক কুমার প্রতীক দাস রানা, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেবুব হাসান রাসেল, ত্রাণ ও সমাজকণ্যাণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান আখতার, দপ্তর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার সরকার, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রেজাওয়ানুল হক পিনু মোল্লা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কামরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল করিম শিবলী,
মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পূর্ণিমা ভট্টাচার্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মামুনুর রশিদ সরকার মাসুদ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মাহবুব উল আলম মুক্তি, শ্রম সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সোহরাব হোসেন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. চিন্ময় কান্তি দাস, উপ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মান্নান, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাসুদ রানা এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আজিজুল আলমের নাম জেলা কমিটিতে অনুমোদন পেয়েছে।
এদিকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটিতে সদস্য থাকেন ৩৬ জন। তবে ৩২ জনের নাম অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক জেলা সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, সাবেকে জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, জিন্নাতুন্নেসা তালুকদার, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি, ডা. মনসুর রহমান এমপি, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আদিবা আনজুম মিতা, রায়হানুল হক রায়হান, নাহিদুল ইসলাম নাবাব, আ ন ম মনিরুল ইসলাম তাজুল, সাইফুল ইসলাম বাদশা, আক্কাস আলী, অধ্যক্ষ গোলাম ফারুক, ফারুক হোসেন ডাবলু, জি এম হীরা বাচ্চু, শরীফুল ইসলাম, রোকোনুজ্জামান রিন্টু, আবু বক্কর, আব্দুর রাজ্জাক, আব্বাস আলী, আবুল কালাম আজাদ, শহিদুজ্জামান শহীদ, রবিউল ইসলাম রবি, সরদার জান মোহাম্মদ, খাদেমুন নবী চৌধুরী, এ কে এম শামসুল হক, প্রভাষক রোকসানা মেহবুব চপলা, মর্জিনা বেগম, তৌহিদ হাসান তুহিন, নিলিমা বেগম, সুরঞ্জিৎ কুমার সরকার এবং ডা. অনিকা ফারিহা জামান অর্ণা।
কমিটিতে কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর মতো জনপ্রিয় কিছু নেতা নতুন করে স্থান পেয়েছেন। আবার কাউকে কাউকে ঘিরে নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসেবে নাম থাকা অ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার ঘোষ মারা গেছেন দেড় মাস আগে। সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ এস এম একরামুল হক চাকরি করেন পুঠিয়ার একটি সরকারি কলেজে।
কমিটি অপূর্ণ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, অনেক সময় ত্যাগী নেতারা কমিটি থেকে বাদ পড়ে যান। সে কারণে চারটি সদস্যপদ ফাকা রাখা হয়েছে। এসব পদের বিপরীতে এরইমধ্যে দু’টি নাম আমি পেয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সভায় পদ চারটি পূরণ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, যখন কমিটির তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয় তখন অ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার ঘোষ জীবিত ছিলেন। পরে মারা গেছেন। কিন্তু তার নামটিও কমিটিতে থেকে গেছে। প্রথম সভায় এটিও সংশোধন করা হবে। আর কমিটি হলে দু’একটি নাম ঘিরে বিতর্ক থাকবে। এটা স্বাভাবিক।