মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৫৩ am
সারাদেশে সব কাজে যখন দুর্নীতির আখড়া; যখন নীতিহীনতাই নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে; তখন দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় শুধুই একজন দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। সৎ, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবানদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তা হলেই সমাজে এই দুর্নীতি গ্রাস পাবে। একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় শুধুই একজন দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, দুর্নীতি করলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনো মানুষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে না। পারিবারিক, সামাজিক ও আশ-পাশের পরিবেশই মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।
রাষ্ট্রপতির এমন নীতির কথাগুলো যদি দুর্নীতিবাজ আমলা আর রাজনৈতিক-প্রশাসনিক কর্তারা সত্যিকার্থেই লালন করতো, নীতিবান হতো! সেক্ষেত্রেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলা কথাগুলো স্বার্থক হতো। তিনি বলেছিলেন- ‘ঘুষখোরদের আমি ক্ষমা করব না’। ইতিহাস বলছে- মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। সদ্যঃস্বাধীন দেশে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কয়েক লাখ ভক্ত-অনুরাগীর সামনে দেওয়া ভাষণে স্বাধীনতার সার্থকতা ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান ঘোষণা করেন। আবেগাপ্লুত জাতির জনক বলেন, ‘আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম—ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি আমার বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়। …যথেষ্ট কাজ পড়ে রয়েছে। আপনারা জানেন, আমি সমস্ত জনগণকে চাই, যেখানে রাস্তা ভেঙে গেছে, নিজেরা রাস্তা করতে শুরু করে দেও। আমি চাই জমিতে যাও, ধান বোনাও, কর্মচারীদের বলে দেবার চাই, একজনও ঘুষ খাবেন না, ঘুষখোরদের আমি ক্ষমা করব না।’
বঙ্গবন্ধু মানে নীতির অটল পাহাড়; আর তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন এমন ইতিহাসখ্যাত বাক্যর মধ্য দিয়ে- ‘চোরের শক্তি বেশি না ঈমানদারের শক্তি বেশি’। জনগণের পাশাপাশি তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির দুর্বিষহ অবস্থা তুলে ধরেন। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে তাতে জয়ী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা সেনানিবাসে অস্থায়ী বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি ব্যাচ পাসিং আউট প্যারেডে প্রধান অতিথির বক্তৃতা বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘…এত রক্ত দেওয়ার পরে যে স্বাধীনতা এনেছি, চরিত্রের পরিবর্তন অনেকের হয় নাই। এখনো ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরকারবারি, মুনাফাখোরী বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে দিয়েছে। দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত আমি এদের অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি, চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনি। কিন্তু আর না।’
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে সচিব-আমলা-প্রশাসনিক কর্তাদের একের পর এক দুর্নীতি দেখার কারণে মনে হচ্ছে; বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক কথাগুলো এখনো উচ্চারিত হচ্ছে- ‘বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আমাকে আনতে হয়, আর এই চোরের দল আমার দুঃখী মানুষের সর্বনাশ করে এভাবে লুটতরাজ করে খায়। আমি শুধু এমার্জেন্সি দিই নাই, এবারে প্রতিজ্ঞা করেছি, যদি ২৫ বছর এই পাকিস্তানি জালেমদের বিরুদ্ধে, জিন্নাহ থেকে আরম্ভ করে গোলাম মোহম্মদ, চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে বুকের পাটা টান করে সংগ্রাম করে থাকতে পারি, আর আমার ৩০ লক্ষ লোকের জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি, তাহলে পারব না? নিশ্চয়ই ইনশাআল্লাহ পারব। এই বাংলার মাটি থেকে এই দুর্নীতিবাজ, এই ঘুষখোর, এই মুনাফাখোরী এই চোরাচালানকারীদের নির্মূল করতে হবে। আমিও প্রতিজ্ঞা নিয়েছি, তোমরাও প্রতিজ্ঞা নাও, বাংলার জনগণও প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করো। আর না, অধৈর্য, সীমা হারিয়ে ফেলেছি। এই জন্য জীবনের যৌবন নষ্ট করি নাই। এই জন্য শহীদরা রক্ত দিয়ে যায় নাই। কয়েকটি চোরাকারবারি, মুনাফাখোর, ঘুষখোর দেশের সম্পদ বাইরে বাইর করে দিয়ে আসে, …মানুষকে না খাইয়া মারে। উত্খাত করতে হবে বাংলার বুকের থেকে এদের। দেখি কত দূর তারা টিকতে পারে। চোরের শক্তি বেশি না ঈমানদারের শক্তি বেশি, সেটাই আজ প্রমাণ হয়ে যাবে। ’
আমি মনে করি- সত্যিকারের সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে বরাবরের মত। মনে রাখতে হবে- স্বাধীনতার পঞ্চম বার্ষিকীতে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ তাঁর জীবনের শেষ জনসভায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। পত্রিকায় প্রকাশিত ওই ঐতিহাসিক ভাষণের বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে জনসভায় ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির ব্যাখ্যা’ করবেন। ওই ভাষণজুড়েও ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় উচ্চারণ। দেশের পরিস্থিতি এবং দুর্নীতি নির্মূলের জন্যই যে দেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন সে ইঙ্গিত তিনি দিলেন তাঁর দীর্ঘ ভাষণে। দেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘…আজ কে দুর্নীতিবাজ? যে ফাঁকি দেয় সে দুর্নীতিবাজ। যে ঘুষ খায় সে দুর্নীতিবাজ। যে স্মাগলিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে ব্ল্যাকমার্কেটিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে হোর্ড করে সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্য পালন করে না তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে তারাও দুর্নীতিবাজ। যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করে তারাও দুর্নীতিবাজ। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম শুরু করতে হবে। আমি কেন ডাক দিয়েছি? এই ঘুণে ধরা ইংরেজ আমলের, পাকিস্তানি আমলের যে শাসনব্যবস্থা তা চলতে পারে না। একে নতুন করে ঢেলে সেজে গড়তে হবে। ’
বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ আজ জাতির সামনে বারবার ঘুরেফিরে আসে এ কারণে যে, সংস্কৃতি চর্চার আলোঘর খ্যাত শিল্পকলা একাডেমিতেও দুর্নীতি চর্চা শুরু হয়েছে। যে কারণে আমরা দেখেছি- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ২২৭ কোটি ৭১ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৯ টাকার অনিয়মের সন্ধান পেয়েছে হিসাব মহা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত অনুসন্ধান করে এই অনিয়মের তথ্য পাওয়া যায়। বিষয়টির জবাব দিতে দুই সপ্তাহ সময় নিলেও এখনও জবাব দেয়নি একাডেমি। মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তাতে অনিয়মের ৭২টি ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। অডিট প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পিপিআর লঙ্ঘন করে সরাসরি ক্রয়ে নির্ধারিত ক্রয়সীমার অতিরিক্ত ১৪ লাখ ৩০ হাজার ১২৬ টাকার অনিয়ম ঘটানো হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পিমা অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের আউটসোর্সিং বিল হতে চুক্তি দাবি অপেক্ষা অতিরিক্ত ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪০৬ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এশিয়ান বিয়েনাল সেলে কর্মরত ব্যক্তিদের ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সম্মানী ভাতা থেকে ১২ লাখ ৫২ হাজার ৬৮০ টাকার আয়কর কর্তন করা হয়নি। ফলে এই অর্থ সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
এমন অসংখ্য অপরাধ-দুর্নীতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা বর্তমানে নতুন প্রধান বিচারপতি অবশ্য আশার প্রদীপ জে¦লে দিয়ে বলেছেন, বিচার বিভাগে দুর্নীতিকে কখনও প্রশ্রয় দেব না। দুর্নীতির বিষয়ে নো কম্প্রোমাইজ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী দুর্নীতিকে ক্যান্সার উল্লেখ করে আরো বলেছেন, আঙুলে ক্যান্সার হলে যেমন কেটে ফেলতে হয়, দুর্নীতিও তেমনি। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্নীতির খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেওয়া হবে।
এমন এ্যাকশন নেয়ার পরিকল্পনা যদি দুদক স্বয়ং করতে পারতো, তাহলে এত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ডিআইজি প্রিজন্স বজলুর রশীদকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হতো না; হাতে নাতে প্রমাণিত হওয়ার সাথে সাথে তাকে বরখাস্ত করা হতো। দুর্নীতির সাথে জড়িত হওয়া স্বত্বেও ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গুরুদন্ড দিয়ে তাকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা’র বিষয়টিতে অনেক পরে দৃষ্টি দিয়েছে। শুধু এখানেই শেষ নয়; অবিরাম দুর্নীতির রাস্তায় হেঁটে চলা অসংখ্য দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্তাদের মধ্য থেকে এই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর দেয়া হয় প্রজ্ঞাপন। একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দুর্নীতির গুরুখ্যাত ডিআইজি বজলুর রশীদের জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদক অনুসন্ধানে নামে। ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর জবানবন্দি নিতে তাকে দুদকে তলব করা হয়। সেখানে তাকে বেইলী রোডে রূপায়ন সেন্টারে প্রায় ৩ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনার অর্থের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফ্ল্যাটটি তিনি ৩ কোটি ৮ লাখ টাকায় কেনেন। কিন্তু এ বিপুল অঙ্কের টাকার কোনো বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। এরপর ওইদিনই তার বিরুদ্ধে মামলাসহ তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ইতোমধ্যে দুদকের এ মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চলছে বিচার কাজ। এক বছর ৯ দিন কারাভোগের পর গত বছরের ২৯ অক্টোবর তিনি জামিন পান।
আশার কথা হলো- দুদদ স্বাধীনভাবে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরাম। আর তারই ধারাবাহিকতায় নিজস্ব কর্মকর্তাদের ওপর কড়া নজরদারি শুরু করেছে দুর্নীতি প্রতিরোধে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করার জন্য কমিশন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে দুদকের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. আহসান আলীর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। কমিশন যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে এসব অভিযোগের সত্যতা নিরূপণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, দুদকের মত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- কমিশনের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করা হবে। অনুসন্ধানে অপরাধ প্রমাণিত হলে অন্য সবার মতো কমিশনের কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কমিশনের কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি কাজ করে চলেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নজির রয়েছে।
আজ যদি দুদক সক্রিয় হয়; দুর্নীতি থামানো যায়; দেশ শুধু এগিয়েই যাবে না; শান্তি পাবে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মাও। কেননা, তিনি আজীবন নীতির সাথে থেকে লড়েছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। যে কারণে আমরা ইতিহাস থেকে জেনেছি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবিরাম তিনি নির্ভীক ছিলেন। তিনিই একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি বলেছিলেন- ‘দুর্নীতিবাজদের খতম করতে হবে, দুর্নীতি নির্মূলকে জনগণের এক নম্বর কাজ হিসেবে চিহ্নিত করে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নতুন সংগ্রামের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। আর এ জন্য জনগণের সহায়তা চাইলেন তিনি। অনলবর্ষী বক্তা বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় উচ্চারণ, ‘সরকারি আইন করে কোনো দিন দুর্নীতিবাজদের দমন করা সম্ভব নয়, জনগণের সমর্থন ছাড়া। আজকে আমার একমাত্র অনুরোধ আপনাদের কাছে সেটা হলো এই, আমি বলেছিলাম প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে জেহাদ করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি বলব বাংলার জনগণকে, এক নম্বর কাজ হবে দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উত্খাত করতে হবে। আমি আপনাদের সাহায্য চাই। কেমন করে করতে হবে? আইন চালাব। ক্ষমা করব না। যাকে পাব ছাড়ব না। একটা কাজ আপনাদের করতে হবে। গণ-আন্দোলন করতে হবে। আমি গ্রামে গ্রামে নামব। এমন আন্দোলন করতে হবে, যে ঘুষখোর, যে দুর্নীতিবাজ, যে মুনাফাখোর, যে আমার জিনিস বিদেশে চোরাচালান দেয় তাদের সামাজিক বয়কট করতে হবে। …আপনারা সংঘবদ্ধ হোন। ঘরে ঘরে আপনাদের দুর্গ গড়তে হবে। সে দুর্গ গড়তে হবে দুর্নীতিবাজদের খতম করার জন্য, বাংলার দুঃখী মানুষের দুঃখ মোচন করার জন্য। এই দুর্নীতিবাজদের যদি খতম করতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের মানুষের শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ দুঃখ চলে যাবে। এত চোরের চোর, এই চোর যে কোথা থেকে পয়দা হয়েছে তা জানি না। পাকিস্তান সব নিয়ে গিয়েছে কিন্তু এই চোর তারা নিয়ে গেলে বাঁচতাম। এই চোর রেখে গিয়েছে। কিছু দালাল গিয়েছে, চোর গেলে বেঁচে যেতাম। …শিক্ষিতদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, আমি যে এই দুর্নীতির কথা বললাম, আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? না। আমার শ্রমিক? না। তাহলে ঘুষ খায় কারা? ব্ল্যাকমার্কেটিং করে কারা? বিদেশি এজেন্ট হয় কারা? বিদেশে টাকা চালান দেয় কারা? হোর্ড করে কারা? এই আমরা, যারা শতকরা ৫ জন শিক্ষিত। এই আমাদের মধ্যেই ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ। ’
ভাষণের শেষ দিকে এসে জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদার কথা স্মরণ করেন এবং জাতির অগ্রাধিকার কর্মসূচি ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, ‘…একটা জাতি যখন ভিক্ষুক হয়, মানুষের কাছে হাত পাতে, আমারে খাবার দাও, আমারে টাকা দাও, সেই জাতির ইজ্জত থাকতে পারে না। আমি সেই ভিক্ষুক জাতির নেতা থাকতে চাই না। …এক নম্বর হলো—দুর্নীতিবাজ খতম কর, দুই নম্বর হলো-কলকারখানায়, ক্ষেতে-খামারে প্রডাকশন বাড়াও, তিন নম্বর হলো- পপুলেশন প্ল্যানিং, চার নম্বর হলো—জাতীয় ঐক্য। জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য একটি দল করা হয়েছে। যারা বাংলাকে ভালোবাসে, এর আদর্শে বিশ্বাস করে, চারটি রাষ্ট্রীয় আদর্শ মানে, সৎপথে চলে, তারা সবাই এ দলের সদস্য হতে পারবে। যারা বিদেশি এজেন্ট, যারা বহিঃশত্রুর কাছ থেকে পয়সা নেয়, এতে তাদের স্থান নাই। ’
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে, ২০২২ সালের শুরুতে এসে শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-অর্থনীতি-রাজনীতির একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে বলতে চাই- ‘দুর্নীতি প্রতিহত করার কোন বিকল্প নাই…’মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি।