মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:১০ am
শাহিন সাগর, নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে গণশুনানি করার আগে প্রি-পেইড মিটার না লাগানোর জন্য নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের এক বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। এর আগে প্রি-পেইড মিটার না লাগানোর জন্য সংগঠনটি ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিল।
কিন্তু নেসকো কতৃপক্ষ বিষয়টি কর্ণপাত না করার প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। রোববার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগররে জাদুঘর মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে হেতেমখাঁ এলাকায় নেসকো কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ করে সমাবেশ করেন।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে সমাবেশে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে আগে গ্রাহকদের বাড়িতে এনালগ বৈদ্যুতিক মিটার ছিল। সেই মিটার সরিয়ে ডিজিটাল মিটার বসানো হয়েছে। এখন আবার ডিজিটাল মিটার ফেলে দিয়ে প্রি-পেইড মিটার বসানো হচ্ছে। অথচ রাজশাহীতে কোন গ্রাহকের বিল বকেয়া নেই। কিন্তু সচল মিটার ফেলে প্রি-পেইড মিটার লাগানো হচ্ছে। এটি জনগণের পকেট কাটার একটি ফন্দি। এই মিটার জনগণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
সম্প্রতি নগরের কুমারপাড়া এলাকায় প্রি-পেইড মিটার লাগানোর সময় নেসকোর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বাধা দেন নগর আওয়ামী লীগের নেতা ডাবলু সরকার। তিনি সেদিন কর্মীদের ফিরিয়ে দেন। রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের এই সমাবেশে ডাবলু সরকার বলেন, এখন থেকে নগরীর একটি বাড়িতেও প্রি-পেইড মিটার লাগানো যাবে না। এই মিটার লাগানোর আগে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডেই গণশুনানি করতে হবে। গণশুনানির আগে এই মিটার কেউ নেবে না। ইতোমধ্যে যেসব বাসাবাড়িতে প্রি-পেইড মিটার লাগানো হয়েছে সেগুলো খুলে নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, গণশুনানির আগে প্রি-পেইড মিটার বসাতে গেলে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে তার জন্য দায়ী থাকবে নেসকো। তারা বলেন, নেসকো বলছে প্রি-পেইড মিটার দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। কিন্তু তা সঠিক নয়। মিটারের মূল্য গ্রাহকের কাছ থেকেই কেটে নেয়া হবে। তাছাড়া মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো কখন কত টাকা গ্রাহকের কাটে তা যেমন টের পাওয়া যায় না তেমনি প্রি-পেইড মিটারে কখন কত টাকা কাটা হবে সেটারও ঠিক নাই। ছুটির দিন বা রাত ৮টার পর প্রি-পেইড মিটারের কার্ড পাওয়া যায় না। কত টাকা মিটার থেকে কাটা হয়েছে সেটাও বোঝা যায় না। এজন্য একজন গ্রাহকের যদি মধ্যরাতে মিটারের টাকা শেষ হয় তাহলে সারারাত তাকে অন্ধকারেই কাটাতে হবে। সে জন্য তারা এই মিটার বর্জন করছেন।
বক্তারা আরও বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রি-পেইড মিটার লাগানো হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ মহাবিপদে পড়েছেন। রাজশাহীর মানুষকে তারা এমন বিপদে পড়তে দিতে চান না। নেসকো যদি এই মিটার বসাতেই চায় তাহলে গণশুনানি করে সাধারণ মানুষকে এর উপকারিতা বোঝাতে হবে, তার আগে নয়।
সমাবেশে উত্থাপিত দাবীর প্রতি একাত্বতা প্রকাশ করে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল মান্নান, রাজশাহী চেম্বারের সাবেক পরিচালক হারুনার রশিদ, আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আবদুল মতিন, নারীনেত্রী সেলিনা বেগম, সাংবাদিক তানজিমুল হক, সমাজসেবক গোলাম নবী রনি, প্রকৌশলী ওমর ফারুক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুফিয়া হাসান, যুবনেতা কেএম জুবায়েদ হোসেন জিতু, ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম রিপন, যুবনেতা মো. তারেক, শ্রমিক নেতা শাহীন শেখ প্রমুখ।