শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:১৫ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, চারঘাট : পদ্মার শাখা বড়াল নদীতে এখন পানি প্রবাহ বন্ধ। এই সুযোগে নদীতে বাঁধ দিয়ে পুকুরের মতো আয়তন করে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। অথচ এই নদীর মাছ বিক্রি করেই চলত দুপাড়ের জেলে পরিবারগুলোর সংসার। কিন্তু এখন তাঁরা আর নদীতে নামতে পারছেন না। এতে পরিবার নিয়ে জেলেরা অসহায় জীবনযাপন করছেন।
স্থানীয়রা জানান, দখলদারদের সবাই প্রভাবশালী। গত মাসে পানি প্রবাহ বন্ধের পরপরই তারা প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার বড়ালের উৎসমুখ থেকে অনুপমপুর ও মুংলি হয়ে কালুহাটি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ২০টি ভাগে ভাগ করে মাটি দিয়ে ভরাট করাসহ বাঁশের চাটাই, কচুরিপানা, জাল দিয়ে বাঁধ দিয়ে জবরদখল করে মাছ চাষ শুরু করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মার শাখা নদী বড়ালের উৎসমুখ থেকেই শুরু হয়েছে দখল। রুস্তমপুর-কালুহাটি পর্যন্ত অন্তত ১০ কিলোমিটার নদী দখল করা হয়েছে এভাবে। কোথাও কোথাও ভরাট করা হয়েছে মাটির বাঁধ দিয়ে। আবার কোথাও বাঁশের চাটাই ও জাল দিয়ে বাঁধ তৈরি করে মাছ ছাড়া হয়েছে। দখলদারদের মধ্যে রয়েছেন ঝিকরা এলাকার সন্টু আলী ও মুক্তার হোসেন, অনুপামপুর গ্রামের আসাদুল ইসলাম, মুংলি গ্রামের মহিদুল ইসলাম, পুঠিমারী এলাকার আব্দুল খালেক ও আড়ানী এলাকার সঞ্জয় হলদারসহ আরও একাধিক ব্যক্তি।
এদের দখলে থাকা নদীতে মাছ ধরতে গেলে নদীপাড়ের মৎস্যজীবী বাসিন্দা অনুপমপুর গ্রামের এজারুল ইসলামের ছেলে সুমন আলী ও মিয়াপুরের আশকান আলীর ছেলে পিন্টুকে মারধর করা হয়। এ জন্য দখলদারদের ভয়ে সাধারণ মানুষ নদীতে নামতে পারছেন না।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর যেখানেই পানি কমছে, বাঁধ দেওয়া হচ্ছে সেখানেই। আধা কিলোমিটার থেকে শুরু করে এক কিলোমিটার বা কমবেশি পরিমাণের আয়তন নিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে মাছ ছাড়ার প্রস্তুতি। দখলদাররা নদীতে পাহারাদার বসিয়ে সাধারণ জেলেদের মাছ ধরতে নামতে দিচ্ছেন না।
স্থানীয় জেলে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘নদীর তো সেই খরস্রোতা রুপ আর নেই। পানি যতটুকু আছে তাতেও মাছ ধরা নিষেধ। অনেকে দখল করে পুকুরের মতো জায়গা নির্বাচন করেছে। নদীতে জাল ফেলার উপায় নেই। এ অবস্থায় আমরা অসহায়।’
চারঘাট উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম বাদশা জানান, পুরো বড়াল নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীকে পুকুরের মতো করে ফেলা হচ্ছে। মুরগির বিষ্ঠাসহ নানা রকম রাসায়নিক সার দিয়ে নষ্ট করা হচ্ছে পানি। দখলদাররা নদীতে কাউকে নামতে দিচ্ছে না। পানিতে নামার মতো কোনো পরিবেশও রাখা হয়নি।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে দখলদার মহিদুল ইসলাম বলেন, একসময় মাছ ধরেই আমাদের সংসার চলতো। এখন নদীতে পানিও থাকে না মাছও হয় না। এ জন্য বাধ্য হয়েই মাছ ছেড়ে চাষ করা প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে কাউকে মারধর করা হয়নি।’
সিনিয়র চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়ালিউল্লাহ মোল্লাহ বলেন, ‘আইন ভেঙে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য অফিস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ আজকের তানোর