মঙ্গবার, ২৪ িসেম্র ২০২৪, সময় : ০৯:৩৩ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর তানোরে প্রশাসনের উদাসিনতায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে পটাশ (এমওপি) ও টিএসপি সার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে বাজারে সার ঘাটতি ও লাগামহীন উর্ধ্বমূখি দামের কারণে ফসল উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এঅঞ্চলের কৃষকরা। ফলে আজ (১৩ নভেম্বর) শনিবার সারাদিন তানোর সদরের সার ব্যবসায়ী সৈয়ব আলী, প্রণাব সাহার ও তালন্দ বাজারের মোহাম্মাদ আলী বাবুর দোকানে কৃষক-চাষিদের মধ্যে হট্টগোল, ঠেলাঠেলি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। এতে চাষিরা বিভিন্ন ফসল উৎপাদন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তবে এনিয়ে কৃষি কর্মকর্তা বলেছেন জমির তুলনায় সারের বরাদ্দ কম, অন্যদিকে চাহিদা থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামের চেয়ে গোপনে সারের বেশি দাম নিচ্ছেন এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে তানোরে ১৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত বছরের সমান। তবে, এবারে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুন জমিতে আলু চাষাবাদের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে গম ও ৩২০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি শীতকালীন নানা শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে, এর পরিমান জানাতে পারেনি কৃষি অফিস। কিন্তু কিছু কৃষক জমিও প্রস্তুত করেছেন। আবার অনেকে চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে, আলু রোপনের শুরুতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে তীব্র সার সংকট দেখা দিয়েছে। এতে রবি শষ্যের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, পুরো উপজেলায় বিসিআইসি সার ডিলার রয়েছেন ৯ জন। আর বিএডিসি ডিলার আছেন ২৩ জন। তারপরও সারের জন্য হাহাকার চলছে। কৃষক পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যে প্রতি বস্তা টিএসপি (৫০ কেজি) এক হাজার ১০০ টাকা (প্রতি কেজি ২২ টাকা), এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) (৫০ কেজি) ৭৫০ টাকা (১৫ টাকা কেজি) বিক্রয় দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ প্রতি বস্তা টিএসপি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকায়। এমওপি প্রতি বস্তা বিক্রি করা হচ্ছে ৯৫০ টাকা দরে।
কৃষক ও চাষিদের অভিযোগ, প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে টিএসপি, এমওপি ও ডিএপিসহ বিভিন্ন প্রকার সারের দাম বেশি নেওয়া হলেও ডিলার-ব্যবসায়ীরা কোনো রশিদ (ভাউচার) দিচ্ছেন না। এক্ষেত্রে কোন কৃষক রশিদ নিতে আগ্রহ দেখলে তাতে সরকারি মূল্য লিখে দেয়া হচ্ছে। আর এতে কেউ নিতে রাজি না হলে তার সার নিয়ে টাকা ফেরৎ দেয়া হচ্ছে। এনিয়ে কোন ভুক্তভোগি মোবাইলে অথবা সরাসরি অভিযোগ দিলেও তাতে ভ্রুপক্ষেপ নেই কৃষি অফিস ও উপজেলা সার মনিটরিং কমিটির নীতি নির্ধারকদের। ফলে বেপরোয়া বিসিআইসি ও বিএডিসি সার ডিলাররা। তবে, এসব অসাধু সার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে উপজেলা কৃষি অফিসে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না কৃষকরা।
এনিয়ে তানোর পৌর এলাকার গাইনপাড়া মহল্লার আলুচাষি আব্দুস সালাম বলেন, তিনি নিজের ১০ বিঘা জমিতে আলু রোপণের জন্য চাষাবাদ করেছেন। সারের জন্য তানোর সদরের স্থানীয় সার ব্যবসায়ী প্রণাব সাহা ও সৈয়বের দোকানে সপ্তা ধরে ঘুরেও পাচ্ছেন না কোন ধরণের সার। ফলে তাঁর জমিতে আজও আলু রোপণ করতে পারেননি তিনি। একই কথা জানান জিওল মহল্লার আলুচাষি ওমর হাজী। তিনি বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবারও ৮০ বিঘা জমিতে আলু চাষের জন্য অন্যের জমি বর্গা নিয়েছেন। প্রায় জমিতে চাষাবাদ চলছে। কিন্তু কাঙ্খিত সারের অভাবে আলু রোপণে দেরি হচ্ছে। তানোর সদরের বিসিআইসি সার ডিলার মোহাম্মাদ আলী বাবুর তালন্দ বাজারে অবস্থিত দোকানে ও বাড়িতে একাধিকবার গেছেন। সেখানে তাঁর গুদাম ঘরে সার দেখছেন। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে তাকে সার না দিয়ে সপ্তা ধরে হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানান ওমর হাজী। এনিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে লিখিত অভিযোগ করেও এখনো কোন সার পাওয়া যায়নি। তবে, এব্যাপারে সার ডিলার মোহাম্মাদ আলী বাবু ও প্রণাব সাহা বলেন, টিএসপি ও পটাশ সারের বরাদ্দ কম। আমরা না পেলে কৃষকদের কাছে বিক্রি করব কীভাবে? তবে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ ব্যাপারে এড়িয়ে গেছেন এই দুই সার ডিলার বাবু ও প্রণাব সাহা।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে এবার টিএসপি ও পটাশ (এমওপি) সারের বরাদ্দ কমিয়ে ডিএপি সারের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাতে সারের সংকট হওয়ার কথা নয়। তবে, কৃষকরা না বুঝে টিএসপি সারের প্রতি ঝুঁকেছেন। আমরা কৃষকদের টিএসপির বদলে ডিএপি ব্যবহারে উৎসাহিত করছি। নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। আজকের তানোর