শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৫৬ am

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ বাংলাদেশ ও ভারত ভিসা জটিলতায় চার যৌথ সিনেমা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক
উৎসবে জেগেছে আবার সম্প্রীতির বাংলাদেশে : মানিক লাল ঘোষ

উৎসবে জেগেছে আবার সম্প্রীতির বাংলাদেশে : মানিক লাল ঘোষ

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে অশুভ শক্তির বিরূদ্ধে শুভ শক্তির বিজয়ে মা দুর্গার মর্ত্যে আবির্ভাব। ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুযায়ী বছরে দু’বার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শরতে শারদীয় দুর্গাপূজা আর বসন্তে হয় বাসন্তী পূজা। মেধামুনির আশ্রমে রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য কর্তৃক প্রথম  প্রতিমার পূজাই বাসন্তী পূজা নামে অবিহিত।

আর শ্রী রামচন্দ্র রাবন বধ করে সীতা উদ্ধারের জন্য দক্ষিণায়নে শরৎকালে ১শত ৮টি নীল পদ্মে পূজিত হন দেবী। রামচন্দ্র দেবতাদের শয়নকালে দেবীকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করে পূজা করেছিলেন বলে এটি অকালবোধন নামে পরিচিত। শরৎকালে রামচন্দ্রের এই পূজাই  আমাদের শারদ উৎসবের স্বীকৃতি পায়। দুর্গা প্রতিমার কল্পনা কতদিনের তা সঠিকভাবে জানা না গেলেও প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্নভাবে  মায়ের প্রতিমা কল্পনা করে শক্তি পূজার প্রচলন ছিল এদেশে।

সিন্ধু উপত্যকায় আবিষ্কৃত প্রাগঐতিহাসিক যুগের অসংখ্য পোড়ামাটির স্ত্রী মূর্তিগুলো মাতৃমূর্তির অতীতকালের নিদর্শন। বাঙালি হিন্দুদের মাঝে কবে এই পূজার প্রচলন তার তথ্যানুসন্ধানে জানা যায় যে, মোঘল সম্রাট  আকবরের সুবেদার রাজা কংস নারায়ণ রায় বাংলার দেওয়ান ছিলেন। তিনি পন্ডিত রমেশ শাস্ত্রীর পরামর্শে মহাযজ্ঞ না করে  দুর্গাপূজা করেছিলেন। ব্যক্তিগত পূজায় যখন সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে পড়ে তখনই প্রয়োজন হয়ে পড়ে সার্বজনীন পূজা আয়োজনের।

১৭৯০ সালে হুগলী জেলায় ১২  জন বন্ধুর প্রচেষ্টায় প্রথম বারোয়ারি পূজার আয়োজন।তারপর থেকেই এই পূজা পরিণত হয় সার্বজনীন উৎসবে। কালের পরিক্রমায় আবহমান বাংলায় সকল ধর্মের মানুষ সমঅধিকার নিয়ে এই বাংলায় বাস করায় শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু হিন্দুদের একার উৎসবে নয়, পরিণত হয় সার্বজনীন উৎসবে।  সকল ধর্মের এমন নিরাপদ আবাস ভূমি পৃথিবীর আর কোথায় আছে? প্রতিটি পূজা মন্ডপে দর্শনার্থীদের যে ভীড়, কে যে কোন্ ধর্মের আর কেইবা কোন্ বর্ণের তা বোঝাই কষ্টকর।

জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যেনো মিলেমিশে একাকার এই শারদীয় উৎসবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেন, “ধর্ম যার যার উৎসব সবার”। বৈশ্বিক মহামারী করোনা কেড়ে নিয়েছে আমাদের সকল উৎসব। বাঙালির জীবনে গত দু’বছর  ছিলোনা বাংলা নববর্ষ ১ লা  বৈশাখের বর্ণাঢ্য আয়োজন। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায়  ছিলোনা না কোনো প্রাণের ছোঁয়া। শারদীয় দুর্গাপূজায় গত বছর ছিল শুধুই পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

নিজের জীবন, পরিবারের সদস্যদের জীবন, সর্বোপরি দেশের সাধারণ মানুষের  নিরাপত্তার কথা ভেবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রেখে গত বছর শেষ হয় শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। মহান স্রষ্টার অশেষ কৃপায় করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমায় অনেকটা আগের অবস্থায় ফিরেছে উৎসবের আমেজ। এবার বর্ণিল অলোকসজ্জার ঝলকানি পূজা মন্ডপের চারদিকে। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর  পূজার মন্ডপের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে এবার।  যা কিনা ২০১৯ সালের চেয়ে ও বেশি। ঐ বছর সারাদেশে পূজা মন্ডপের সংখ্যা  ছিলো  ৩১ হাজার  ৩৯৮টি। ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছিল ৩০ হাজার ২২৩টিতে।

এবার সারা দেশে পুজা মন্ডপের সংখ্যা  ৩২ হাজার ১১৮ টি।  প্রতিবার পূজামন্ডপে পূজারীদের  মায়ের কাছে ব্যক্তিগত সুখ-সমৃদ্ধি চাওয়া-পাওয়া প্রত্যাশা থাকলেও গত দু’বছর ধরে সব চাওয়া পরিণত হয়ছে করোনা সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রার্থনায়। দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনার পাশাপাশি বাঙালির জীবনে আবার যেনো সব উৎসবের আমেজ ফিরে আসে, বন্দীজীবন থেকে পৃথিবীর সকল মানুষ যেনো  মুক্তির আলোতে ফিরে আসে- মা দুর্গতিনাশিনীর কাছে এমন প্রার্থনা ছিলো সবার।

এত সংকট, স্বাস্থ্যবিধি  মেনে চলা, করোনায় অর্থনৈতিক মন্দাভাব তারপরেও মন্ডপে-মন্ডপে দর্শনার্থী ও পূজারীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সংকট উত্তরণ, উৎসবে অংশগ্রহণ, আন্দোলন সংগ্রামে  বাঙালিকে কী বিধি নিষেধেরে বেড়াজালে আটকে রাখা যায় ? বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংকট উপেক্ষা করেও সীমিত আকারে  স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যগণ, সংসদ সদস্যগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ  পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেছেন।

নিরাপত্তাসহ সার্বিক খোঁজ – খবর রেখেছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণীতে হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেশের সকল নাগরিককে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কামনা করেছেন দেশ ও জাতির সমৃদ্ধির। সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে করোনা সংকটকালেও পূজার উৎসবে কোথাও ঘাটতি নেই  সহযোগিতা, সহানুভূতি, সৌহার্দ্য ও সৌজন্যবোধ প্রকাশে। এরই নাম বাংলাদেশ।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই বন্ধন অটুট থাক  অনন্তকাল।অশুভ শক্তির বিরূদ্ধে শুভ শক্তির সকল বিবেকবান মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাক  যুগ থেকে  যুগান্তরে– শারদীয় দুর্গোৎসবে এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর। লেখক: মানিক লাল ঘোষ, সাংবাদিক ও  কলামিস্ট

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.