রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৪২ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা দেড় বছর ঘরবন্দি জীবনের ইতি টানল শিক্ষার্থীরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাসে ফিরল রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা। সব প্রস্তুতি শেষে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে স্বাগত জানাতে সকাল থেকেই ব্যস্ত ছিল স্কুল-কলেজের শিক্ষকসহ ব্যবস্থাপনা কমিটি।
করোনা মহামারী মোকাবিলা করে স্বাভাবিক পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আগামীর শিক্ষাজীবন আরও সুন্দর করার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন শিক্ষকরা। ক্লাসে ফিরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
রোববার সকাল থেকেই রাজশাহী মহানগরীর সড়কগুলোতে স্কুল ড্রেস পরে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ছিল। কয়েকটি শিফটে ক্লাস নেওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীই ক্লাসের বাইরে অপেক্ষা করছিল।
প্রাণের ক্যাম্পাসে ফিরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। অনেক অভিভাবকও সকাল থেকেই স্কুলের সামনে সন্তানের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। দীর্ঘ সময় পর ক্যাম্পাসে ফেরার অনুভূতিগুলো জানিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরাও। এছাড়া কিছু শিক্ষার্থীকে ইউনিফর্ম ছাড়ায় ক্লাসে ফিরতে দেখা গেছে।
রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি উচ্চবিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইকবারুল রহমান তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলে- আমি সকাল সাড়ে ৮টায় স্কুলে পৌঁছেছি। নতুন স্কুল ড্রেস এবং মাস্ক পরেই স্কুলে এসেছি। সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও নিয়েছি। সকালে এসেই বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেক দিন পর স্কুলে সবাই মিলে একসঙ্গে এসে খুব ভালো লাগছে।
একই শ্রেণির শিক্ষার্থী শাকিব হাসান রিমন, তাওসিফ বিন রেজা, সাইদ তমালসহ তাদের সহপাঠীরা জানায়, অনেক দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাসরুমে দেখা হলো। এত দিন ফোনে কথা হতো। যেখানে মন খুলে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা যেত না। আজকে থেকে এই সুযোগটা পাওয়া গেছে।
রাজশাহী কলেজের এইচএসসি প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী মুসাব্বিহুর রহমান। সে জানায়, এই প্রথম সরাসরি ক্লাস করছি। এটি অন্যরকম এক ভালোলাগা। অনলাইনে ক্লাস করে সেরকম তৃপ্তি পাওয়া যেত না। আজকের অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
রাজশাহী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেক জানান, কয়েকটি সিফটে সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজে এসেছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেই সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসে প্রবেশ করানো হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ক্লাস নেয়া হয়েছে। তবে হাতেগোনা কিছু শিক্ষার্থী প্রথম দিন ইউনিফর্ম পরে আসতে পারেনি। তবে শিক্ষার্থীরা সবাই সুস্থ ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৫৮টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী দুই লাখ ৫৮ হাজার ৯০৬ জন। এছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৪৭টি। এর শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। সবমিলে প্রায় চার লাখ ৫৮ হাজারের বেশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থী স্কুলে এসেছে। এছাড়া জেলার কলেজগুলোতেও শিক্ষার্থীরা প্রথম দিনের পাঠদান গ্রহণ করেছেন।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ঠিক ছিল। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল ভালো। অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে অভিভাবকরাও এসেছেন। তারা দেখছেন- পাঠদানের পরিবেশ। সবার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হয়েছে। অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে আনন্দমুখর পরিবেশে স্কুল-কলেজ খুললেও অনেক প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধির ব্যত্যয় ঘটেছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও শেষ করতে পারেনি। এমনিই একটি রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী গভ. ল্যাবরেটরি উচ্চবিদ্যালয়। স্কুলটির ভেতরের ফাঁকা জায়গাগুলো ছিল অপরিষ্কার। জমে ছিল ময়লা পানি। শ্রেণিকক্ষগুলোও ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের সময়েও সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি।
এ বিষয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুনতাসির আহমেদ জানান, তিনি কয়েক দিন আগে দায়িত্ব নিয়েছেন। সময় স্বল্পতার কারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কিছুটা ত্রুটি হয়েছে। এটি সামনের দিনে থাকবে না। সবকিছু ঠিক করা হবে।
সকালে রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন- রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হুমায়ুন কবীর, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দীনসহ রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তারা।
এ সময় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হুমায়ুন কবীর শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাসহ করোনা সচেতনতা নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।