শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৫৯ am
ঘুষ খুবই পরিচিত শব্দ। আমাদের দেশে শুধু কেন, সারা বিশ্বে বহু আগে থেকেই ঘুষ একটা মর্যাদাকর স্থান পেয়ে গেছে। দুর্নীতি আর ঘুষের বিরুদ্ধে যাঁরা বক্তৃতা দেন, তাঁরাও মাঝে মাঝে এই শব্দগুলোর প্রেমে পড়ে নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হন। আর এ তো জানা কথাই, সরকার পরিবর্তন হলে পূর্ববর্তী সরকারের ডাকসাইটে নেতাদের নামে একের পর এক ঘুষ-দুর্নীতির মামলা হতে থাকে!
সেখানে মিথ্যা মামলাও থাকে বটে, তবে সত্য মামলার সংখ্যাও কম নয়। ইতিহাস ঘেঁটে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এ রকম অনেক নজির হাজির করা সম্ভব।
ঘুষ যে স্বাস্থ্যকর খাবার, সে গল্প তো অনেকেই শুনেছে! ব্রিটিশ আমলে এক ইংরেজ কর্মকর্তাকে বলা হয়েছিল, কোনো এক বাঙালি ব্যক্তি ঘুষ খান। সরেজমিনে সেই ইংরেজ ভদ্রলোক দেখেন, এক ঘুষখোরকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে কলাসহ। ঘুষ হিসেবে কলা নিয়ে তিনি কাজ উদ্ধার করে দিয়েছেন। ইংরেজ ভদ্রলোককে যখন বলা হলো, এই কলাই ঘুষ। তখন তিনি বললেন, ‘এটা ঘুষ? এটা তো স্বাস্থ্যকর খাবার! ঘুষ খাওয়া ভালো!’
উপনিবেশ আমলের এ গল্পটিকে হয়তো আমাদের প্রজাতন্ত্রের অনেক ঘুষখোর অবশ্য-মান্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাই ‘ঘুষ’ শব্দটিকে ঘৃণা করলেও ঘুষকে হয়তো ঘৃণা করা হয় না।
গুরুদাসপুর থেকে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আয়ার চাকরি পাওয়ার জন্য ছয় লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন এক নারী। কাকে দিয়েছেন? একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে দিয়েছেন। এখানে ঘুষদাতা আর ঘুষগ্রহীতার নাম উচ্চারণ করলাম না শুধু এই কারণে যে, তাতে এর চেয়েও বড় ঘুষের লেনদেনকারীদের ব্যাপারে অবিচার করা হবে। কোটি কোটি টাকা ঘুষের মাধ্যমে যাঁরা লেনদেন করছেন, তাঁদের নাম নেওয়া কঠিন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা নিজেদের গোপন রাখতে সমর্থ হন।
বিশাল লেনদেনে দুই পক্ষের লাভের পরিমাণ এত বেশি থাকে যে তাঁরা নিজেদের আলোচনার আড়ালে রাখার জন্য অনেকগুলো পথকে টাকার জোরেই বন্ধ করে দিতে পারেন। গুরুদাসপুরের ঘটনা আলাদা। যিনি স্রেফ বেঁচে থাকার জন্য সর্বস্ব বিক্রি করে ঘুষের টাকা জোগাড় করলেন এবং কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি পেলেন না, তিনি মরিয়া হয়েই ঘটনাটি খুলে বলতে বাধ্য হলেন। তিনি চাকরি পেয়ে গেলে বিষয়টি আর খবর হয়ে উঠত না।
ঘুষের আয় অবৈধ আয়, এটা আপ্তবাক্য। ঘুষ ছাড়া কাজ হাসিল করা কঠিন, এটা সামগ্রিকভাবে মেনে নেওয়া সত্য। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কুমিল্লার দেবিদ্বারে পুলিশের এসআই প্রত্যাহার, বরগুনার এলজিইডি কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার ঘটনা দুটি অতিসাম্প্রতিক। ঘুষের কারবার চলছেই।
ঘুষের রাজনীতি এতটাই শক্তিশালী যে একে নিশ্চিহ্ন করা সহজ নয়। সামাজিক কাঠামোয় যে জায়গাগুলো ঘুষের কারণে রিক্ত, তা চিহ্নিত করা সম্ভব, কিন্তু চিহ্নিত করার পর অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে ঘুষমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার ব্যাপারে যে সদিচ্ছা ও পারঙ্গমতা দরকার, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার দেখা মেলে না।
ফলে ঘুষ-দুর্নীতির খবর সংবাদমাধ্যমকে আরও অনেক দিন মুখরোচক সংবাদ উপহার দেবে, এ কথা বিষণ্ণ মনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপাতত মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। সূত্র : আজকের পত্রিকা