বুধবা, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৩১ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে নিম্নমুখি করোনা পরিস্থিতি। সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগির চাপও তেমন নেই। দীর্ঘ সময় পরে আবারও জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। মার্কেটগুলোতেও বেচাবিক্রি জমে উঠেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমেও গতিশীলতা এসেছে। একই সঙ্গে রাজশাহীতে স্বাস্থ্যবিধি কিংবা বাধ্যতামূলক মাস্কের ব্যবহারের প্রতি মানুষের চরম উদাসীনতাও তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে রাজশাহীর প্রায় ৮৪.৫ শতাংশ মানুষ মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছে। মাত্র ১৫.৫ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরছেন। সোনার দেশ প্রতিবেদকদের পর্যবেক্ষণে এই চিত্র উঠে এসেছে। যদিও সামনে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের ঝুঁকির কথা বলছে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। সোমবার (৩০ আগস্ট) নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা, লক্ষ্মীপুর, সাহেববাজার ও গোরহাঙ্গা এলাকায় অবস্থান নিয়ে ৫ হাজার ২৬৭ জন পথচারীকে নিয়ে পর্যবেক্ষণে এমন চিত্র লক্ষ্য করা যায়। এদের মধ্যে ৮১৩ জন মাস্ক পরেছিলেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় মাস্ক পরছেন এমন মানুষদের সংখ্যা সবচেয়ে কম। এদিন বিকেল সাড়ে ৪ টা থেকে সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৪০ জন মানুষের চলাচল করা অবস্থায় পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এদের মাত্র ৫৬৪ জন মাস্ক ব্যবহার করেছেন। লক্ষ্মীপুর এলাকায় ৮৫ জনকে মাস্ক ছাড়া ও ৫১ জনকে মাস্ক পরে চলাচল করতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে ১৩ জন সঠিক নিয়মে মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছিলেন। নগরীর গোরহাঙ্গা এলাকায় সাড়ে ৫ টা থেকে সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে দেখা যায়, ৫৬৪ জন মানুষ মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছিলেন।
১৬৬ জন মাস্ক ব্যবহার করেছেন। ৫২ জন সঠিক নিয়মে মাস্ক না পরেই চলাচল করছিলেন। নগরীর সাহেববাজার ন্যাশনাল ব্যাংকের নিচে বিকেল দুপুর ১ টা থেকে ১:২৫ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে দেখা যায়, ৫৮ জন মাস্ক পরেনি। সঠিক ভাবে মাস্ক পড়েছেন মাত্র ৩২ জন। থুতনিতে মাস্ক রেখে চলাচল করছিরেন ২৭ জন।
রাজশাহী নগরীর কোর্টবাজার, সাহেববাজার, আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেট, শিরোইলসহ নগরীর কাঁচাবাজার, বিপনিবিতান ও শপিংমলগুলো ঘুরে দেখা যায়, সিংহভাগ মানুষ মাস্ক ছাড়ায় চলাফেরা করছেন। আবার যারা মাস্ক পরছেন তাদের একটা বড় অংশই সঠিক নিয়মে মাস্ক পরছেন না। হাতে কিংবা নাকের নিচে নামিয়ে রেখেই ঘুরাফিরা করছেন। মার্কেটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই মাস্ক ব্যবহারে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই।
উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদ- অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহ দৈনিক শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলেই কেবল করোনা পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে আছে’ ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণের হার সহনশীল পর্যায়ে আসতে এখনো অনেক দূর। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সংক্রমণের হার ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। যদিও আগের দিন শনিবার ছিল ১৩ দমমিক ৬৭ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ উঠানামা করছে।
তবে নগরীর শো-রুমগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মানাতে ক্রেতাদের সতর্ক করতে দেখা গেছে। এরমধ্যেও অনেক ক্রেতাই তাদের সতর্ক বার্তাকে উপেক্ষা করে চলছেন। আবার যারা সর্তক করছেন তারাও অনেক সময় নাকের নিচে মাস্ক নামিয়েই ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মাস্ক পরতে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতেও তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যায় নি। অনেক প্রতিষ্ঠানে স্যানিটাইজার টানেল থাকলেও সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
স্বাভাবিকভাবেই চলছে দূরপাল্লা ও নগরীর অভ্যান্তরীণ গণপরিবহণ। দূরপাল্লার পরিবহণগুলোতে যাত্রীদের মাস্ক পরতে বলেই দায় সারছেন মালিকপক্ষ। আবার অভ্যন্তরীণ পরিবহণগুলোতে মাস্কের প্রতি গুরুত্ব নেই। হাতেগোনা কিছু সচেতন চালক ও যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
নগরীর অটো চালক আফজাল হোসেন জানান, এখন মাস্কের জন্য আর তেমন কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় না। তবে সবসময় কাছে মাস্ক রাখেন। কিন্তু সব সময় মাস্ক পরেন না। অনেক যাত্রী আছে যারা গাড়িতে ওঠার আগেই মাস্ক পরতে বলেন। তখন মাস্ক পরি। আর মাস্ক পরে থাকতেও ভালোলাগে না।
রাজশাহী ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. রাজিউল হক জানান, মানুষের অসাবধানতায় করোনার পরিস্থিতি মাঝে মাঝে খারাপ হয়। প্রায় সবার কাছেই মাস্ক থাকে কিন্তু পকেটে। বেশির ভাগ মানুষ এখন মাস্ক পরছে না। পকেটে মাস্ক রাখে পুলিশ দেখলে পরে। তারা নিজেদের পরিবারের ও অন্য মানুষের ক্ষতি করছে। আমাদের পক্ষ থেকে বার বার বলার পরেও মানুষ কথা শুনছে না। তিনি বলেন তিনটি জিনিস মানলে আমরা সুরক্ষিত থাকতে পারি। মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করা। এই বিষয় গুলো সবাইকে অবশ্যই মানতে হবে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন কেন্দ্রসহ সব খুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা তো এখনও দুর হয়নি। তাই নিজেদের মধ্যে থেকে সচেতনতা হিসাবে মাস্ক পরা উচিত প্রত্যেক ব্যক্তিকে। প্রশাসন থেকেও কিছুদিন তেমনভাবে ভ্র্যাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়নি। তাই মাস্ক পরিধানে আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে আবারও কঠোরভাবে রাজশাহীতে আটটি টিম মাঠে নামবে।
তবে মাস্ক পরিধান না ব্যক্তিদের এবার জরিমানা করা হবে। তবে আগের চেয়ে পরিমাণটা এবার বেশি করা হবে। করোনা প্রতিরোধে প্রশাসনের ভূমিকা আগেও জোরালো ছিল। বর্তমানেও থাকবে। আজকের তানোর