বুধবা, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৪০ pm
ডেস্ক রির্পোট : ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স, মাইক্রোসফট, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ বাংলাদেশে যত ধরনের ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের উপস্থিতি রয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। শিগগির এ অভিযান শুরু হতে পারে। অভিযানে তাদের ভ্যাট নিবন্ধন, ভ্যাট দেওয়ার তথ্য এবং প্রকৃত আয়ের সঙ্গে ভ্যাট জমার গরমিল ও ফাঁকি থাকলে সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ টেকজায়ান্ট গুগল ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুক মে ও জুন মাসের জন্য ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার ভ্যাট দিয়েছে। পরে জুলাই ও আগস্ট মাসের জন্য আরও ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার ভ্যাট দেয় ফেসবুক। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজনও ৫৩ লাখ টাকা ভ্যাট জমা দিয়েছে।
ফেসবুক গত ১৩ জুন ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট থেকে অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসায় নিবন্ধন নম্বর (বিআইএন) নিয়েছে, যা ভ্যাট নিবন্ধন হিসেবে পরিচিত। এ জন্য তারা আয়ারল্যান্ডের ঠিকানা ব্যবহার করেছে। ২৩ মে গুগল ও ২৭ মে অ্যামাজন ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। গুগল ব্যবহার করেছে সিঙ্গাপুরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঠিকানা। ব্যবসার ধরন হিসেবে বলা হয়েছে সেবা। আর আ অ্যামাজন নিবন্ধিত হয়েছে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস ইনকরপোরেশন নামে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ঠিকানা ব্যবহার করেছে। আর ১ জুলাই মাইক্রোসফট ভ্যাট নিবন্ধন নেয়। এ পর্যন্ত চারটি অনাবাসী প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের নিবন্ধন নিয়েছে।
বর্তমানে ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স, মাইক্রোসফট বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। এসব প্ল্যাটফর্মে যেকোনো ডিজিটাল কনটেন্ট কোটি কোটিবার দেখা হচ্ছে। আর এসব দেখার ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপনদাতারা প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিজ্ঞাপন দেন। এটাই প্ল্যাটফর্মগুলোর আয়। এ আয়ের একটি অংশ ভ্যাট ও আয়কর হিসেবে বাংলাদেশ সরকার পাওয়ার কথা। কিন্তু এত দিন এসব প্ল্যাটফর্ম সরকারের রাজস্ব দেওয়ার বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। অনেক তৎপরতার পর ফেসবুক, গুগল, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফট ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে এবং তারা ভ্যাট দেওয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি অনেক প্ল্যাটফর্ম এখনো ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি। আর নিলেও ঠিকমতো ভ্যাট দেয় না বলে এনবিআর মনে করে। তাই এনবিআরের ভ্যাট শাখা পুরো বিষয়টি আরও নজরদারিতে আনার কথা ভাবছে।
ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলছেন, দেশে এখন বিপুলসংখ্যক ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের উপস্থিতি রয়েছে। তাদের কেউ কেউ ভ্যাট দেওয়া শুরু করলেও অনেকে এখনো নিবন্ধন নেয়নি এবং ভ্যাটও দিচ্ছে না। যারা ভ্যাট দিচ্ছে তারাই-বা কতটুকু দিচ্ছে–এ বিষয়গুলোই খতিয়ে দেখা হবে। এ জন্য আগামী সপ্তাহ থেকে অভিযান শুরু হবে। তিনি বলেন, তাদের অনেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশে টাকা পাঠায়। এ সময় ব্যাংকগুলো উৎসে কর কেটে রাখে। এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে তারা দেশে যে হারে ব্যবসা করে সে অনুযায়ী ভ্যাট দেয় কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
এ বিষয়ে এনবিআরের আয়কর জরিপ ও পরিদর্শন শাখার সদস্য প্রদ্যুৎ কুমার সরকার বলেন, ‘ধরা যাক এক কোটি টাকা বিদেশে পাঠাবে, তার বিপরীতে তাকে ২০ লাখ টাকা বা ২০ শতাংশ উৎসেই কেটে রাখে ব্যাংক। আর এটা তখন আয়কর খাতে জমা হয়। আমরা যেহেতু তাদের কাছ থেকে কর পাচ্ছি, তাই এখন বাড়তি তৎপরতার দরকার নেই।’
জানা যায়, এসব অনাবাসী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ নানা ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এসব সেবা নিয়ে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে থাকেন। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কেটে রাখে। ভ্যাট কেটে না রাখলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশে ওই প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাঠানোর অনুমতি দেয় না। ভ্যাট নিবন্ধন নেওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠান কত টাকার সেবা বিক্রি করেছে, সেই তথ্যসহ যাবতীয় আয়-ব্যয়ের তথ্য জানিয়ে ভ্যাট রিটার্ন দিতে হয়।
গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবসহ আন্তর্জাতিক টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলাদেশ থেকে কত টাকার বিজ্ঞাপন যাচ্ছে, তার কোনো সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই ৷ তবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থার সূত্র জানায়, বিজ্ঞাপনের বাজার প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার।
এনবিআর মনে করে, এসব ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপন বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা আয় করে। তার বিপরীতে নগণ্য হারে ভ্যাট জমা দেয়। এটিই এখন দেখার বিষয় যে এখানে কোনো ফাঁকি আছে কি না। অভিযান শেষে প্রকৃত চিত্রটা জানা যাবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
সূত্র : আজকের পত্রিকা