সমবার, ২৩ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:২৮ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের তিন জেলায় বজ্রপাতে ৯ জনের মৃত্যু ভারতীয় সঞ্চালন লাইনে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনছে সরকার ট্রাইব্যুনাল গঠন ও ৮ দফা দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন নাচোলে গুজব প্রতিরোধে মানববন্ধন অনুষ্ঠতি অনলাইনে সরব, মাঠে নীরব আ.লীগ তানোর প্রেসক্লাব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, প্রতিক বরাদ্দ ঢালাও মামলার কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে : আসিফ নজরুল মোহনপুরে আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত মসজিদের বিশেষ আদব ও শিষ্টাচার : হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী মোহনপুরে আ.লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালাম গ্রেপ্তার, মিষ্টি বিতরণ দুদকের তালিকায় ১০০ ব্যক্তির সম্পদের পাহাড় গড়েছেন যারা আ.লীগ ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ৭৫০ মামলা ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন
চার বছর পরও অনিশ্চিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

চার বছর পরও অনিশ্চিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

ডেস্ক রির্পোট : রোহিঙ্গা সংকটের চার বছর পার হলেও প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি নেই। মিয়ানমারে প্রায় গৃহযুদ্ধাবস্থা বিরাজ করায় বিষয়টি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সুযোগ পাচ্ছে না বাংলাদেশ। জেনারেলরা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। রোহিঙ্গা নিয়ে তাদের আলোচনার সময় নেই।

একই কারণে চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় স্থবির হয়ে আছে। সামরিক শাসন এবং আফগানিস্তানে নতুন করে শরণার্থী সমস্যার কারণে এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অগ্রাধিকারেও নেই এ সংকট। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মারাত্মক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সেনা অভিযান শুরু হলে রোহিঙ্গা ঢল বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। ওই সময় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল লক্ষাধিক।

সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। গত চার বছরে আরও দুই লাখ শিশুর জন্ম হয়েছে। ফলে তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। চীনের মধ্যস্থতায় ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেছে।

মিয়ানমার রাখাইনে গণহত্যা চালিয়েছে। গণহত্যার দায়ে দুটি আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে অন্তর্বর্তী রায় দিয়েছে। অপরদিকে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের জেনারেলদের বিচার শুরু করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি)। জাতিসংঘ অবশ্য এটাকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। রোহিঙ্গারা ১৯৭৭/৭৮ সালে এবং পরবর্তী সময়ে নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে এসেছিল। তারা তখন ফিরে গেলেও এবার প্রত্যাবাসনে সমস্যা হচ্ছে।

জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির যুগান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের সৃষ্টি। মিয়ানমারকেই এই সংকট দূর করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে হবে যে, এটি একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ইস্যু’। তিনি এই সংকট নিরসনকল্পে চীন ও রাশিয়ায় বিশেষ দূত পাঠানো উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে আমাদের চেষ্টার বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটে। মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনশন এসবের ওপর আমাদের কোনো হাত নেই। সব মিলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। দ্রুত প্রত্যাবাসনের সঙ্গে আশিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা হচ্ছে। কক্সবাজারে এদের শিবির এবং আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ওই অঞ্চলের পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ পড়েছে। ইতোমধ্যে ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। সব মিলে এখানে এক লাখের বেশি স্থান দেওয়া সম্ভব। এখানে বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কাজ করতে রাজি আছে বলে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে যারা শরণার্থীদের জন্য ভাসানচরের মতো অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছে।’ জাতিসংঘ শুরুতে ভাসানচরে যেতে রাজি না হলেও এখন তারা সেখানে যেতে রাজি হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মঙ্গলবার রিপোর্টারদের বলেছেন, আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি হবে। সেপ্টেম্বর নাগাদ জাতিসংঘের উপস্থিতি ভাসানচরে দেখা যাবে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নিলুফার ইয়াসমিন মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য চার বছর অনেক ধীর্ঘ সময়। আমার শঙ্কা হচ্ছে, আফগানসহ অন্যান্য সমস্যার কারণে রোহিঙ্গা ইস্যু সাইডলাইন হয়ে যায় কিনা। তবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তাই বাংলাদেশে অস্থিরতা চাইবে না যুক্তরাষ্ট্র। সে কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বারবার আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরতে হবে। সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা চালাতে হবে।’

জানতে চাইলে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক করা সম্ভব হচ্ছে না। ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শুরুর লক্ষ্যে একাধিকবার ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে। তবে চীনের রাষ্ট্রদূত বলছেন, মিয়ানমারে আলোচনা করার মতো লোক পাচ্ছেন না।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোচনায় যুক্ত হওয়ার জন্য রাশিয়া আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানকে যুক্ত করতে চাইছে বাংলাদেশ। আসিয়ানের রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ দূত ব্রুনাইয়ের দ্বিতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরিওয়ান ইউসুফকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। আসিয়ানের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূতের এজেন্ডায় রোহিঙ্গা ইস্যু অন্তর্ভুক্ত নেই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠিতে রোহিঙ্গা ইস্যু অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। আফগানিস্তানের শরণার্থী ইস্যু সামনে আসায় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ যাতে পিছিয়ে না যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ সজাগ। বাংলাদেশের তরফে বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বরাবরের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। এদিকে ইয়াঙ্গুনের একটি সূত্র যুগান্তরকে বলেছে, মিয়ানমারে সামরিক শাসন এবং গৃহযুদ্ধ থাকার কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। কোভিড-১৯ মহামারির অবস্থা খুবই খারাপ। এই সময়ে গণতন্ত্র ফেরানোর প্রচেষ্টা চালানো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অগ্রাধিকার।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরকালে তার এজেন্ডায় মিয়ানমারের পরিস্থিতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাৎক্ষণিক সমস্যাটাই অগ্রাধিকারে থাকে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলছেন, বাংলাদেশ বিপদে আছে, এটা ঠিক। কিন্তু জোর করে কোনো সমস্যার সমাধান করা যায় না। সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে হবে। সূত্র : যুগান্তর

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.