রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:২১ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে আড়াই মাস ধরে অচল নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) অফিসের টেলিসেবা। নগরীতে কোনো বাসা-বাড়ি কিংবা অফিসে বিদ্যুতের সমস্যায় পড়লে একাধিকবার ফোন করেও কোনো সাড়া মেলে না। এতে জনমনে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর নেসকো অফিসের টেলিসেবা ডেস্কে কাজ করেন তিনজন। মতিউর রহমান (ইলেকট্রিক-এ), আলমগীর হোসেন (লাইনম্যান-এ) এবং মো. নুরুল ইসলাম (লাইনম্যান-সি)।
সোমবার (২৩ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে টেলিসেবা ডেস্কে পাওয়া যায় নুরুল ইসলামকে। তিনি কাজ করছেন ৩৫ বছর যাবত। প্রথমে লাইনম্যান হিসেবে সরকারিভাবে চাকরি করতেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি)। পরে বিদ্যুতখাত বেসরকারি খাতে চলে যাওয়ায় সরকারি চাকরি ছেড়ে যোগ দেন নেসকোতে। দীর্ঘদিন ধরে টেলিফোন অচল হয়ে পড়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।
টেলিসেবার বিড়ম্বনার বিষয়ে জানতে চাইলে লাইনম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, অনেকদিন ধরেই নেসকোর টেলিফোন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বৃষ্টিতে টিঅ্যান্ডটি লাইনের সমস্যা দেখা দেওয়ায় এ অবস্থা। কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ টিঅ্যান্ডটিকে জানালেও পুরোপুরি সমস্যার সমাধান হয়নি। মাঝে মধ্যে বিরক্ত হয়ে দু-একবার আমি নিজ খরচে তাদের ডেকে ঠিক করিয়েছিলাম। এরপরও আবার আগের মতোই অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, শুধু আমাদের রাজশাহীর সবজিপাড়া অফিস নয়, নেসকোর ডিভিশন-৩ এরও একই দশা। সেখানেও টেলিফোন সংযোগে সমস্যা। কাউকে কিছু বলেও লাভ হয় না। কিন্তু জনগণ টেলিসেবা ডেস্কে এসে আমাদের যা ইচ্ছে তাই গালিগালাজ করে যান। পরে তাদের বুঝিয়ে বললে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন। কিন্তু তাতেও অনেকের ক্ষোভ মেটে না।
নগরীর শিরোইল কলোনি এলাকার বাসিন্দা এহসানুল হক ডালিম। টানা তিন দিন যাবত ভুগেছেন বিদ্যুৎ সংযোগের সমস্যা নিয়ে। তিনি বলেন, টানা তিন দিন যাবত বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। কর্মব্যস্ততার কারণে বাইরে ছিলাম। পরিবারের নারী সদস্যরা বিদ্যুৎ অফিসে বারবার কল করেও যোগাযোগে ব্যর্থ হয়। বাধ্য হয়ে আমার শ্যালককে বিদ্যুৎ অফিসে একাধিকবার পাঠালে তিনদিন পর লাইন ঠিক করে দেয় তারা।
তীব্র ক্ষোভ নিয়ে নগরীর রবের মোড় এলাকার লালু হোসেন বলেন, সময় মতো বিদ্যুৎবিল ঠিকই পরিশোধ করা হয়। কিন্তু সময় মতো নেসকোতে বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান চেয়ে পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, আমার বাড়িতে দুদিন বিদ্যুৎ ছিল না। ফোনে না পেয়ে বাধ্য হয়ে অফিসে গেলে বিদ্যুতের লাইন ঠিক করানো হয়। এছাড়া লাইন ঠিক করতে আসলে লাইনম্যানদের দিতে হয় চা-পানি খাওয়ার টাকাও।
এ বিষয়ে নেসকোর ডিভিশন-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল আওলাদ বলেন, মূলত, বৃষ্টির পানি পড়ায় বিদ্যুতের তারগুলোতে মরিচা পড়ে যায়। এতে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যুতের লাইনগুলোতে বেশি সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য টেলিসেবা ডেস্কে গ্রাহকদের ফোনকল আসে বেশি। টেলিফোনে একাধিক ফোন আসলে তখন স্বাভাবিকভাবেই ব্যস্ত বা বন্ধ দেখায়। এ কারণেই অনেকে ভুল বোঝেন।
তিনি আরও বলেন, টেলিফোন সংযোগে সমস্যা হয়েছে এটাও সত্য। এ বিষয়ে টেলিফোন অফিসে কথা হয়েছে। তবে ঠিক করার পরও মাঝে মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দেয়। টেলিসেবা, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন অত্যাধুনিক সেবার আওতায় গ্রাহকসেবা বাড়ানোর কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
এ বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী উত্তরাঞ্চল টেলিযোগাযোগ কার্যালয়ের (বিটিসিএল) উপপরিচালক মো. গোলাম মোর্শেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, নেসকো অফিসের টেলিসেবা ডেস্কের টেলিফোনের সংযোগের সমস্যার বিষয়ে আমার সঠিক জানা নেই। আমি বিস্তারিত জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।