বুধবা, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৪২ am
ডেস্ক রির্পোট : গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রবাসীর আড়াই বছরের এক শিশুকে সৎমায়ের কাছ থেকে যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথ ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সৎমাকে অভিযুক্ত করে বৃহস্পতিবার রাতে শিশুর দাদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
শিশুর দাদা আফাজ উদ্দিন জানান, ৮ বছর আগে প্রবাস থেকে দেশে ফিরে সাবিনা ইয়াছমিনকে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে করেন দুবাই প্রবাসী মোস্তফা ফকির। সেই বিয়ের আড়াই বছর পর জন্ম নেয় এক কন্যাশিশু।
এরই মাঝে মোস্তফা ফকিরের সঙ্গে দুবাইতে পরিচয় হয় আলিফা আক্তার রিপা নামে এক নারীর। তারা জড়িয়ে পড়ে পরকীয়ায়। রিপা তাদের সেই সম্পর্ক পরিণয়ে রূপ দিতে প্রথম স্ত্রী সাবিনার সঙ্গে ডিভোর্সসহ নানা শর্ত জুড়ে দেন মোস্তফা ফকিরকে। নানা ধরনের চাপে ও পরকীয়ার আসক্তে সাবিনাকে ডিভোর্সে রাজি হয় মোস্তফা। শিশুটির চার মাস বয়সেই তার মা সাবিনার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে তার বাবার।
পরে ওই শিশুকে দেখাশোনা, আদর ও ভালোবাসা দেওয়ার শর্তে রিপাকে বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেন মোস্তফা। পরে গত ছয় মাস পূর্বে তার আড়াই বছরের শিশুকে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে রেখে ফের প্রবাসে (দুবাই) চলে যান।
প্রবাসকালীন জীবনে মোস্তফা তার অর্জিত আয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বেড়াইদেরচালা এলাকায় ১৪ শতাংশ জমি কিনে পাঁচতলা ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর আলিফা আক্তার রিপার কোনো সন্তান হবে না বলে চিকিৎসক জানানোর পর ভিন্ন ফন্দি আঁটেন মোস্তফার দ্বিতীয় স্ত্রী আলিফা আক্তার রিপা। সেই বাড়িটি লিখে নিতে মোস্তফাকে নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করেন। এতেও বাড়িটি তার স্ত্রীর নামে লিখে দিতে রাজি হচ্ছিল না মোস্তফা।
পরে বাড়িটি লিখে নিতে মোস্তফার একমাত্র ভবিষ্যত উত্তরাধিকার এই শিশুটির ওপর নানাভাবে নির্যাতন শুরু করেন বলে অভিযোগ করেন তার দাদা আফাজ উদ্দিন। তিনি গত বুধবার তার নাতির খোঁজ নিতে এসে তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চিকিৎসকদের পরামর্শ মতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
এ ঘটনায় শিশুটির দাদা বাদী হয়ে তার সৎমায়ের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত আলিফা আক্তার রিপা (৩০) মাগুরা জেলার সদর উপজেলার ধনপাড়া গ্রামের রজব আলী বিশ্বাসের মেয়ে। সেও একসময় দুবাই প্রবাসী ছিল। মোস্তফা কামাল ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার বাঁশিয়া গ্রামের মো. আফাজ উদ্দিনের ছেলে। সে ১৩ বছর ধরে দুবাই প্রবাসী।
আফাজ উদ্দিন আরও জানান, তার দ্বিতীয় পুত্রবধূ উগ্র প্রকৃতির। সে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অঘটনের চেষ্টা করেছে। তার ছেলে প্রবাসে চলে যাওয়ায় শিশু নাতনিকে নিয়ে সে এ বাসাতেই থাকত। শিশুটিকে তাদের কাছে যেত না। এ বাসাটি লিখে নিতে সে নানা ধরনের ফন্দি তৈরি করেছিল। গত বুধবার তার নাতনিতে দেখতে এসে তারা দেখতে পান সে খুব অসুস্থ। পরে দেখেন তার পায়ুপথ ও যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত। এ সময় তার পুত্রবধূকে জিজ্ঞাসা করলে সে একেক সময় একেক কথাবার্তা বলতে থাকে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলিফা আক্তার রিপা বলেন, শিশুটি ভাতের মাড়ের উপর পড়ে, আবার পা পিছলে পড়ে পায়ুপথে ও যৌনাঙ্গে এমন ক্ষত তৈরি হয়েছে। তবে পায়ুপথ ছেঁড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পা পিছলে পড়ে এমন হতে পারে।
বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে আছেন মোস্তফার মামা মো. মন্নাছ শেখ। তিনি বলেন, সবসময় বাড়িতে থাকলেও শিশুটির বিষয়ে তাদের কোনো তথ্য জানানো হয়নি। আগুনে পুড়লে আমি খোঁজ পেতাম। বাড়িতে ভাড়াটিয়া রয়েছে তারা খোঁজ পেতেন। অথচ কেউই জানেন না। এমন একটি ঘটনা কাউকে কিছু বুঝতে দেননি অভিযুক্ত। হঠাৎ করে দেখি শিশুটিকে নিয়ে সে চিকিৎসকদের কাছে দৌড়াদৌড়ি করছে। তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলছে গরম পানিতে এমন হয়েছে। তার ভাষ্য শিশুটিকে কারও কাছে যেতে দিত না অভিযুক্ত। এমনকি দাদা-দাদির কাছেও না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি তদন্ত করে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা বের করার দাবি তার।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মইনুল আতিক বলেন, শিশুটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় গত বুধবার বিকালে। তার পায়ুপথ ছেঁড়া ছিল ও যৌনাঙ্গে দগদগে ঘাঁ। আমাদের ধারণা শিশুটি মারাত্মক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। দ্রুত শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সঙ্গে তার স্বজনদের দ্রুত পুলিশ কেসের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে এ শিশুটির ফরেনসিক পরীক্ষা প্রয়োজন; যাতে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, এমন অভিযোগে ইতোমধ্যেই তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। সূত্র : যুগান্তর