শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:১৬ am
এসকে স্বপন, মোহনপুর :
‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ মৃত্তিকা বা মাটি আর ‘শিল্প’ বলতে এখানে সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝায়। এজন্য মাটি দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই মৃৎশিল্প বোঝায়। দেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলোর অন্যতম হচ্ছে মৃৎশিল্প। এটি শুধু শিল্প নয়, আবহমান গ্রামবাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
মাটির নান্দনিক কারুকার্য ও বাহারি নকশার কারণে এই শিল্পের প্রয়োজনীয়তা আদিকাল থেকে চলে আসছে। অবশ্য আধুনিক যুগে এসে কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে অনেক পরিবার এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তবে, এখনো অনেকে পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া পেশা টিকিয়ে রাখতে বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছে মৃৎশিল্পীরা।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বেললা পালপাড়া গ্রামের কুমারেশ পাল বলেন, আমাদের গ্রামের প্রায় সব মানুষ যুগ যুগ ধরে এ পেশায় জড়িত। কিন্তু বর্তমান কালে সবকিছুতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় আমাদের তৈরী জিনিসপত্র আগের তুলানায় বাজারে চাহিদা কমে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে অন্য কর্ম বেছে নিচ্ছে। কেউ ব্যবসা, কেউ আবার চাকরি নিয়ে বাহিরে চলে গেছে। তবে, এখনো কিছু মানুষ তাদের বাপ-দাদার পেশা এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন।
তানোর উপজেলার পালপাড়ার সুজিত পাল বলেন, পূর্বে এ পাড়ার সবাই এ কর্মের সাথে থাকলেও এখন মাত্র দু’একটি পরিবার প্রাচীনতম পেশার মধ্যে রয়েছে। তিনি জানান, সময়ের পরিবর্তনে বংশানুক্রম ভাবে আমরা গড়ে ওঠা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুৃপ্তির পথে। আগের মত আজকাল নেই কুমারপাড়ার মেয়েদের ব্যস্ততা। কাঁচামাটির গন্ধ তেমন পাওয়া যায় না। হাটবাজারে আর মাটির তৈরি জিনিসপত্রের পসরা বসে না। তবে, নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কিছু জরাজীর্ণ কুমার পরিবার ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই ব্যবসা।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাঞ্চন সরকার বলেন, আমাদের দেশে এই শিল্পের ব্যবহার সেই আদিকাল থেকে। হিন্দুধর্মাবলীদের পূজার প্রতিমা, ঘর্ট, বাতিসহ প্রভূতি সামগ্রী তৈরী এবং পোড়ামাটির নানাবিধ কাজ, গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি, পুতুল, খেলনা, প্রতিকৃতি, টপ ও শো-পিসসহ অসংখ্য জিনিস আজও কুমারশালায় তৈরি হয়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাচ্ছে। মাটির তৈরি বিভিন্ন রকমারি আসবাবপত্র চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি আজ প্রচুর চাহিদা লক্ষণীয়। তাছাড়া মেয়েদের বিভিন্ন মাটির তৈরি গয়না সহজেই চোখে পড়ে দেশের মেলাগুলোতে। তিনি আরো বলেন এ আদি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এই সম্প্রদায়ের লোকজনকে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া প্রয়োজন।
রাজশাহী সরকারী সিটি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল হাই সিদ্দিকী জানান, আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে আজ মাটি দিয়ে প্রস্তুুত অনেক কিছুই হারিয়ে যেতে বসেছে। তারপরও অনেক সংগ্রাম করে পোড়ামাটির গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি, পুতুল, খেলনা, প্রতিকৃতি ও শো-পিসসহ অসংখ্য জিনিস কুমারশালায় তৈরি হচ্ছে। পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া পেশা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কুমারদের।
তিরি আরও বলেন, এসম্প্রদায়ের লোকজনেরা মাটির তৈরি করা পাকপাতিল, ঠিলা, কলসি, পুতুল, কুয়ার পাট, খেলনার সামগ্রী, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক ইত্যাদি হাটবাজারে বা গ্রামে গ্রামে বড় ঝাঁকা বোঝাই করে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন আর সে দৃশ্য তেমন চোখে পড়ে না। এজন্য আমাদের সামাজিক নিজস্ব প্রথা দায়ী। কারণ এ কুঠিরশিল্পী বাঁচিয়ে রাখা কিন্তু আমাদেরও কিছু দায়িত্ববোধ রয়েছে। আজকের তানোর