সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:০৮ pm
আর কে রতন, মোহনপুর :
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের সুমরত বিবির স্বামী মারা যাওয়ার পর পেটের জ¦ালা নিবারণের জন্য নিরুপায় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিতে বাধ্য হয়। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাত পেতে যা জুটতো, তাই দিয়ে কোন রকম পেটের খুদা মিটাতো। এরমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষনার ‘আমার বাড়ী আমার খামার’ প্রকল্পের আওতায় গ্রাম উন্নয়ন সমিতিতে সুমরত বিবিকে সদস্য করা হয়।
এরপর কিছুদিনের মধ্যে তাকে ২২ হাজার টাকা ঋণ পাইয়ে দেয়া হয়। ওই টাকাই গরু পালন করে আজ সুমরত বিবি আর ভিক্ষাবৃত্তি করেন না। গাভীর দুধ বিক্রি করে সংসার ও ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করে তিনি স্বাবলম্বি।
সুমরত বিবির মত একই এলাকার শারিরিক প্রতিবন্ধী মনোয়ারা বেগম। তিনিও আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্পের আওতায় সদস্য হয়ে ১৯ হাজার টাকা স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে গাভী পালন করে আজ দারিদ্রতাকে জয় করেছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্র ও অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর জীবন জীবিকার পরিবর্তন করার লক্ষ্যে নিজ উদ্যোগে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প চালু করেন। সারা দেশের মত ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প আওতায় ও পল্লী উন্নয়ন ব্যাংকের আওতায় রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলার ১ লক্ষ ১৬ ষোল ৩১৮ জন হতদরিদ্র মানুষ হাঁস মুরগীসহ গবাদিপশু পালন করে দারিদ্রকে জয় করেছেন। তারা এখন স্বাবলম্বী।
তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এ প্রকল্পের আওতায় তারা গবাদিপশু গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী পালনের পাশাপাশি বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি, ফল চাষ ও গাভী পালন করে আয় বৃদ্ধি করেছেন। জেলার উপজেলাগুলোর সকল ইউনিয়নের দরিদ্র ও অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর এ প্রকল্পের আওতায় ঘুরে দাড়িয়েছে।
প্রকল্পটি শুরুর পূর্বে এ অঞ্চলের অনেক অসহায় মানুষ দরিদ্র্রতার মধ্যে বসবাস করতো। সেই দারিদ্র মানুষগুলোর কথা ভেবে দারিদ্রতা বিমোচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যেগে ‘আমার বাড়ি একটি আমার’ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের ন্যায় রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলার ৭১টি ইউনিয়ন ও ১৪টি পৌরসভায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এবং ‘আমার বাড়ি একটি আমার’ প্রকল্পের আওতায় মোট ২ দুই ৯৫১টি সমিতি গঠন পূর্বক ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৩১৮ জন দরিদ্রদের মাঝে ঋণ বিতরণ করেছে এই সংস্থাটি।
প্রত্যেক সমিতির সদস্য সংখ্যা ৬০ জন। এর মধ্যে নারী ৪০ জন ও পুরুষ ২০ জন। ঋণের টাকা গবাদি পশু কিনে গ্রামের মানুষ লালন-পালন কওে জেলার অনেক বেকার যুবক-যুবতী এখন সাবলম্বী। মোহনপুর উপজেলার মীরপুর গ্রামের সুফলভোগী খামারী সাইফুল ইসলাম বলেন, গ্রাম উন্নয়ন সমিতির একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প আমাদের পাশে এসে দাড়িয়ে ঋণ দিয়েছে। ঋণের টাকায় হাঁস কিনে বিলের ছেড়ে দিয়েছি। বিল থেকে খাবার খেয়ে হাঁস ডিম দিচ্ছে। এই ডিম বিক্রি করেই আমাদের সংসারে স্বাচ্ছন্দ ফিরেছে। হাঁসের পাশাপাশি এখন উঠানে সবজি, ফলের চাষ ও গাভী পালন করে অতিরিক্ত আয় করছি। এখন আর দরিদ্রতা নেই।
মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল আমিন বিশ্বাস বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক থেকে আমার ইউনিয়নের গরীব অসহায় পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে আমরা এ ধারা অব্যাহত রাখব এবং এই সংস্থাটি যেনো আরও বেগমান হয় সে ব্যাপারে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব।
বাগমারা উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র পন্ডিত বলেন, হাঁস মুরগী পালনে এখানে কম খরচ। তারপরও তাদেরকে আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেনিং দেয়া হয়ে থাকে। হাঁস বিল থেকে খাবার খেয়ে ডিম দেয়। এ এলাকার মানুষ এ পদ্ধতিতে গবাদিপশু যেমন হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল ও মাছ চাষ করে অনেক দরিদ্র পরিবার স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
রাজশাহী জেলা আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প সমন্বয়ক চন্দন কুমার বিশ্বাস বলেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আওতায় ১ হাজার ৫৬০ সমিতি গঠনের মাধ্যমে ৬২ হাজার ২৫২ জন সুফলভোগীদের মাঝে ১৩০ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। আর আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৩৯১টি সমিতির গঠনের মাধ্যমে ৫৪ হাজার ৬৬ জন সুফলভোগীদের মধ্যে ৫৪ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা সহজশর্তে ঋণ বিতরন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রাজশাহী জেলার দরিদ্র অসহায় জনগোষ্ঠি এই ঋণ গ্রহণ করে তারা হাঁস মুরগীসহ গবাদীপশু পালনে, মৎস, নার্সারী, শাকসবজি বাগান চাষে দারিদ্র বিমোচনে সাফল্য এনেছে এবং উন্নয়নের মূল স্রােতে এ দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে সামিল করা সম্ভব হয়েছে। আজকের তানোর