শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:০৬ am
টিকা নিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরির চেষ্টা আমরা শুরু থেকেই দেখে আসছি। শিক্ষিত, সচেতন মানুষকেও বলতে শুনেছি করোনা টিকার বিপক্ষে কথা বলতে। অনেকে এমন গুজবেও বিশ্বাস করেছেন- এ টিকা নিলে নাকি মানুষের লিঙ্গ পরিবর্তন হয়ে যাবে! ছেলেদের কণ্ঠ মেয়েদের কণ্ঠের মতো হয়ে যাবে। মেয়েদের মুখে দাঁড়ি-গোঁফ গজাবে! টিকা নিলে মানুষের ভেতরের কোষ ও জিনে ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে যাবে। সেই সাথে টিকা নেয়ার পর থেকে কোনো এক বিশেষ গোয়েন্দাবাহিনী আপনার সব খবর পেয়ে যাবে! ফলে গোপনীয়তা বলে নাকি আর কিছুই থাকবে না!
টিকা নিয়ে গুজব সবসময়ই ছিলো। কিছু মানুষ জেনে বুঝেও এর বিরোধিতা করে থাকে। আর কিছু মানুষ তা হুজুগে পড়ে বিশ্বাস করে। তবে, হুজুগে পড়া মানুষের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে তখন সমস্যা হয়ে যায়। টিকা দেয়ার কাজটি তখন তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না।
যারা টিকা না নিয়ে উপরন্তু করোনা বোমা শরীরে নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন এবং বলবেন এটা তার অধিকার; তাহলে বলতেই হবে এদের সে প্রচেষ্টাকে নিবৃত্ত করাও রাষ্ট্রের অধিকারই বটে। কারণ ব্যক্তির বাহুল্য অধিকার যদি রাষ্ট্র ও জনজীবনকে বিপদাপন্ন করে তোলে তাহলে সে অধিকার প্রতিপালন করতে না দেয়াটাও রাষ্ট্রের অধিকার বলেই আমি মনে করি।
একসময় গ্রামে টিকা কর্মী এলে পরিবারের লোকজনই টিকা না দিয়ে তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে লুকিয়ে রাখতেন। আবার জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য মানুষকে উদ্বুব্ধ করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন বাড়িতে বাড়িতে যাওয়া শুরু করলেন তখন অনেক গ্রামে তাদেরকে ঢুকতেই দেয়া হয়নি। মারধোর করার ঘটনাও ঘটেছে। শিশুদের টিকা ও জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য এখন আর স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে হেনস্তা হতে হয় না। বরং মানুষ নিজেরাই নিজেদের দায়িত্বে বাচ্চাকে টিকাকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন। পরিবার ছোট রাখার জন্য নিজেরাই এখন পরিকল্পনা করছেন। শিশুদের টিকাদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। সন্তান জন্মের হারও কমেছে।
উপরের এ সাফল্যের পেছনে বিশেষ কিছু কি রয়েছে? নাকি এমনি এমনিই এসব হয়ে গেছে? এসব প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়-উপরের এমন সাফল্য এমনি এমনি আসেনি। এর পেছনে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের নিরলস যৌথ প্রয়াস। শুরুতে বাধা আসলেও দেখা গেছে নানামুখী প্রচার প্রচারণার ফলে একসময় মানুষ নিজে থেকেই বুঝতে সক্ষম হয়েছে তাদের ভালোর জন্যই সরকার এসব করছে। ফলে তারাও তখন থেকে এগিয়ে এসেছে।
করোনার টিকা নিয়েও বিভিন্ন মহল থেকে নানামুখী ভুলবার্তা মানুষের কাছে শুরুর দিকে যেভাবে গেছে এখন সেটা কমেছে ঠিকই। তবে তাতে অনেকের ধারণায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি বলেই মনে হয়। তারা এখনও টিকা না দেয়ার মনোভাবই লালন করছে। ইপিআই টিকা তো বছরের পর বছর ধরে চলমান আছে, থাকবে। কিন্তু করোনা হচ্ছে আশু বিপদ। একে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের হাতে সময় খুবই কম। ফলে টিকা নেয়ার ব্যাপারে যেন মানুষ উৎসাহী হয় সেজন্য জনসচেতনতার পাশাপাশি কিছুটা বাধ্যবাধকতাও আরোপ করা দরকার বলে আমার মনে হয়। কারণ টিকা নেয়া বা না নেয়া মানুষের অধিকার বলে যে যত কথাই বলুক না কেন বাস্তবে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ এখন আর তেমন নেই। টিকা না নিলে বিদেশগমনে বাধা আসছে। দেশের ভেতরেও নানাবিধ রেসটিকশন দেয়া হচ্ছে।
অনেক দেশ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য টিকা নিলে অর্থ দিচ্ছে। কোথাও খাবার ফ্রি দিচ্ছে। এরপরেও যারা নিচ্ছেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে। কারণ এ ছাড়া উপায়ও নেই। কিছু মানুষের টিকা না নেয়ার আজগুবি বিশ্বাসের পক্ষে সায় দেয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। আর টিকা দেয়াই হয়ে থাকে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য। ফলে করোনা সংক্রামক ব্যাধি হওয়ায় টিকা নেয়ার কোনো বিকল্পও নেই। শুধু একটা কথাই বলব-নিজেকে, পরিবারের সবাই তথা রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখতে আমাদের টিকা নিতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। অহেতুক গুজবে কান দিয়ে, টিকা না নিয়ে নিজের ও পরিবারের ক্ষতি করবেন না। এটা কোনো সচেতন নাগরিকের কাজ হতে পারে না।