শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৩৯ am
আর কে রতন :
মাথায় লম্বা চুল, মুখে কালো দাড়ি আর গায়ে জোড়াতালি দেয়া শার্ট, পরনে ছেঁড়া জিন্সপ্যান্ট পরিহিত দিনের পর দিন অনাহারে-অধহারে একই ভাবে রাস্তায় রাস্তায় মানুষিক রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৬-৭ বছর ধওে ঘুরছে এক সময়ের টকবগে যুবক রজত কুমার (২৬)। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগেই স্থানীয় মোহনপুর বাজারে রজত একজন দক্ষ মোটরসাইকেল টেকনিশিয়ান ছিলেন। ছিল তার অসংখ্য বন্ধু-বান্ধবসহ বিভিন্ন আত্নীয় স্বজন। এখন আর কেউ রজতের খোজ রাখে না। না বন্ধুরা না রক্তের কেউ।
নিয়তীর নির্মম পরিহাস টগবগে রজত কুমার রাত্রী নেমে আসলে তার বাড়ীর অদূরে একটি ডোবার ধারে নির্জনে বটগাছের নীচে অসংখ্য মশার কামড়ের যন্ত্রণা নীবরে সহে ঘুমায়। কিন্তু মানুষিক ভারসাম্যহীন রজতের বাবার বাড়ী-ঘর সবই আছে। রজত কুমার রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বিদ্যাধরপুর গ্রামের অজিত প্রামানিকের বড় ছেলে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলেও কখনও কারো কাছ থেকে টাকা বা কোন খাবার চাই না। মন যখন শান্ত থাকে তখন মানুষের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেন। স্বাভাবিক থাকা সময় রজতের সাথে কথা বললে সে জানায় কেউ আমাকে সাহায্য করলে আমি আবার আগের জীবনে ফিরে যেতে চাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিদ্যাধরপুর গ্রামের অজিত প্রামানিকের প্রথম স্ত্রী দুই সন্তানের জননী ১৩ বছর পূর্বে জটিল রোগে আক্রান্ত পরলোক গমন করেন। সে সময় রজতের স্থানীয় বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র এবং তার ছোট ভাই প্রাইমারিতে পড়তো। স্ত্রীর মৃত্যুও পর সংসার ও দুটি সন্তানের কথা ভেবে আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন অজিত। কিন্তু বাবার ২য় স্ত্রীর নিকট তার ছোট ছেলের জায়গা হলেও হতভাগা রজতের বাড়ীতে স্থান হয়নি। একদিকে, নিজের মা হারানো কষ্ট অন্যদিকে, সৎ মায়ের সংসার সবমিলে দিনে দিনে মানুষিক যন্ত্রণা ও বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের ফলে ধীরে ধীরে মানুষিক রোগীতে পরিণত হয়ে এখন পাগলে পরিণত হয়ে খেয়ে না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভবঘুরে।
রজত বিষয়ে তার বাবা অজিত প্রামানিকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার সংসার ও ছেলেদের কথা ভেবে ২য় বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। আমার বড় ছেলে ২য় বিয়ের আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। এক সময় নিজেই বাড়ী হতে বের হয়ে মানুষের বাড়ীতে থাকতো আমি অনেক বার চেষ্টা করেও বাড়ীতে ফিরানোর চেষ্টা করলেও তাকে কিছুতে বাড়ীতে রাখতে পারিনি। চিকিৎসা করানোর জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তিনি বলেন, আমার আপন সন্তান পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় এতে কি আমার কষ্ট হয় না।
বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোল্লা বলেন, রজত আমার স্কুলের ছাত্র ছিল। সে খুব ন¤্র ভদ্র ও বিনয়ী প্রকৃতির ছেলে। এতো সুন্দও একটি মানুষ কি করে যে মানুষিক রোগী হয়ে গেলো আমরা বোঝতে পারলাম না। তিনি আরো জানান, ছেলেটিকে ভালমত চিকিৎসা করলে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা, আপন মানুষের নিকট আঘাত, রাগ জিদ, কষ্ট পাওয়া প্রভৃতি বিষয়ে একজন যুবক মানুসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে, এসব রোগীকে সঠিক চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের ভাল আচরণ ঠিকতম যত্ন নিলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব। আজকের তানোর