শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৩২ am
ডেস্ক রির্পোট : নিজেদের মডেল ও অভিনয়শিল্পী দাবি করলেই তো আর মডেল অভিনয়শিল্পী হওয়া যায় না। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর যাদের নামের আগে মডেলও অভিনয়শিল্পী বলা হচ্ছে তারা তো আসলে এ জগতের কেউ না।
তারা কোথাকার মডেল, কোথায় অভিনয় করেছে? আমরা শোবিজের কেউ তো তাদের অভিনেতা-মডেল হিসেবে চিনি না। কিভাবে মডেল ও অভিনয়শিল্পী হোন তারা?’ প্রশ্ন রেখে কথাগুলো বলছিলেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম।
গত রোববার মডেল ও অভিনয়শিল্পী পরিচয়ধারী দুই নারী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে ঢাকার বারিধারা ও মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তাদের নামে মাদক আইনে মামলার হয়। পরে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড দেন। এই দুইজনের নামের আগে মডেল ও অভিনেত্রী বলায় লিখিত ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নাটকের শিল্পীদের একমাত্র সংগঠন অভিনয়শিল্পী ও অভিনয় শিল্পী সংঘ।
সোমবার রাতে সংগঠনটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম লিখিত বিজ্ঞপ্তিটি তাদের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করলে তৎক্ষনাত শোবিজ তারকাদের সবাই সেটা নিজ নিজ ওয়ালে শেয়ার করেন। প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে কথা বলতেই ফোন করলে নাসিম উপরের কথাগুলো বলেন তিনি।
অভিনয়শিল্পী সংঘ থেকে পাঠানো ওই ক্ষোভ বার্তায় লেখা হয় ব্যাক্তিগত পরিচয়, প্রভাব, কখনো বাহ্যিক সৌন্দর্য, কিছু ক্ষেত্রে কপালের জোড়ে দু-একটি বিজ্ঞাপন বা নাটকে কাজ করলেই তাকে মডেল বা অভিনেত্রী বলা যায় কি না সেই ভাবনাটা জরুরী হয়ে উঠছে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউ কোন টাইম পাসিং সোস্যাল প্লাটফর্মে, ফ্রেন্ডলি মেইড ভিডিওতে অভিনয় করেছে, মডেল হিসেবে হয়তো ছবি আছে বাসার পাশের কোন টেইলরের দোকানে অথবা একটা দুটো বিলবোর্ডে, সেও সোস্যাল মিডিয়াতে নিজেকে এক্টর বা মডেল দাবী করছে।অথচ মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী হয়ে ওঠার জন্য যে নিষ্ঠা, একাগ্রতা, জ্ঞান, দর্শন, প্রস্তুতি, সামাজিক ও পেশাদার দায়বদ্ধতা প্রয়োজন সেসবের কিছুই তার নেই।
আবার হুট করে এসেও কেউ মডেল বা অভিনেতা হয়ে ওঠেনা তাও না। সেক্ষেত্রে শতভাগ একাগ্রতার সাথে নিজেকে তৈরি করতে হয় আরো ভাল কাজের জন্যে এবং শিল্পী হিসেবে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাবার জন্য। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংগঠন, সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন, অভিজ্ঞ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ তার আগ্রহ ও নিষ্ঠা কে গুরুত্ব দিয়ে তাকে গাইড করে, তার মধ্যে শিল্পী হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে।
কালাচারাল এক্টিভিস্ট, বিনোদন জগতের স্টেক হোল্ডার, মডেল বা অভিনেত্রী তকমা নেবার বা দেবার আগে, তার কাজ, কাজের প্রতি আগ্রহ, সামাজিক দায়বদ্ধতা, প্রস্তুতি প্রভৃতি বিষয় বিবেচ্য হওয়া জরুরী। বাংলাদেশের প্রচুর অভিনেতা অভিনেত্রী, মডেল তাদের কাজ দিয়ে সম্মান অর্জন করেছেন, পরিবারের জন্য গর্ব হয়েছেন, পেয়েছেন মানুষের অকুন্ঠ ভালবাসা, সামাজিক ও জাতীয় স্বীকৃতি, হয়েছেন কোটি মানুষের আদর্শ।
পিয়াসা ও মৌয়ের নামের আগে মডেল বলায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোথাও পুলিশি অভিযানে ধর-পাকড় হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় হেডলাইন হয় অমুক মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী গ্রেফতার; যা অবধারিতভাবে হয়ে ওঠে আকর্ষনীয় সংবাদ। এ ধরনের হেডলাইন ; সর্বজন শ্রদ্ধেয়, প্রথিতযশা অভিনেতা অভিনেত্রী, মডেল সহ বিনোদন মাধ্যমে নিষ্ঠার সাথে কর্মরত সকলের জন্য সামাজিক ভাবে অত্যন্ত বিব্রতকর এবং অসম্মানজনক হয়ে ওঠে।
সময়ে সময়ে এই ধরনের খবরের ফলশ্রুতিতে যারা সিরিয়াসলি, প্রফেশনাল ইথিক্স সহ এই কাজ টা করে তাদের প্রায়শই আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে শুনতে হয় ‘দেখলাম তোমাদের এক মডেল/অভিনেতা এই কু কর্ম করেছে’ এরকম শ্লেষাত্বক কথা। এই পেশার মানুষ সম্পর্কে এক ধরনের অনাস্থা, অসম্মান তৈরি হয় সমাজে। যা হয়ে উঠতে পারে অপ্রত্যাশিত সোস্যাল ট্যাবু। গণমাধ্যম কাকে অভিনেতা/অভিনেত্রী বা মডেল বলবে তার উপরই নির্ভর করে এই পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না?
বিজ্ঞপ্তিতে আরও লেখা হয়, এত এত সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, নানান প্রতিকূলতার মধ্যে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া স্ট্রাগলার এবং ভবিষ্যতে বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে নিজের প্রতিভার সাক্ষর রাখতে উদগ্রীব নতুন প্রজন্মকে এই রকম বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন যেন না হতে হয় সেটা দায়িত্বশীলতার সাথে নিশ্চিত করার দায়িত্ব অনেকটাই আপনাদের।
তাই গণমাধ্যম যখন হেডলাইন করবেন, সংশ্লিষ্ট সংগঠন গুলো থেকে যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট কাজে তার নিষ্ঠা, তার অবদান প্রভৃতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে তার তার পেশা উল্লেখ করবেন এটাই প্রত্যাশিত। আজকের তানোর