শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:০৭ am
আর কে রতন :
আমাদের ইতিহাস প্রায় আড়াই হাজার বছরের। বাঙালির রয়েছে অনেক গৌরবময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে আমাদের কিছু নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবাহী কিছু ব্যবহার্য জিনিস। যুগ যুগ ধরে আমরা এই সংস্কৃতি ধারণ ও লালন করে আসছি।
কিন্তু কালে কালে বদলায় সমাজ বদলায় সংস্কৃতি-হারায় ঐতিহ্য। এই আধুনিক যুগে উন্নত সংস্কৃতি ও পণ্যের এবং আধুনিক কলাকৌশলের কাছে মার খেতে খেতে আস্তে আস্তে বাঙালির অতীত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক অনেক কিছু আজ বিলুপ্তির পথে।
এরমধ্যে টাইপরাইটার মেশিন অন্যতম যন্ত্র। কম্পিউটার আবিস্কারের পূর্বে খবরের কাগজ, মামলার এজাহার, আবেদন, ফরম পূরণসহ বিভিন্ন অফিসিয়াল টাইপের কাজে একমাত্র ব্যবহৃত হত টাইপ মেশিন। দিন বদলের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে অতীতের দশ আঙুলের ছন্দ।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় একুশ শতকে এসে কর্মজীবী কিংবা কর্মমুখী মানুষ কাজ-কর্মে অনেকটা কম্পিউটার নির্ভর হয়ে পড়েছে। কম্পিউটারের যুগে আর টিকে থাকতে পারছে না টাইপরাইটার মেশিন। বৈদ্যুতিক কীবোর্ডের মাধ্যমে মনিটরের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে লেখা।
যে কোন ভুল হলে নিমিষেই শুদ্ধ করা যায়। কাটাকাটির কোন ঝামেলাও নেই। স্পষ্ট সুন্দর লেখার জন্য কেউ আর টাইপিস্টদের কাছে যেতে চায় না। তাই সময়ের ব্যবধানে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে মুদ্রাক্ষরিক এই অতীতের পেশা।
রাজশাহী কোর্টের টাইপরাইটার আব্দুর রশিদ জানান, সারাদিন বসে থেকে দুই-তিনটা কাজ পায় কেউ। কেউ আবার পায় না একটাও। টাইপ মেশিনের ঠক ঠক শব্দের সাথে সাথেও কমে যাচ্ছে তাদের আয়-রোজগার। দিন চলছে অর্ধাহারে-অনাহারে। সংসার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে এ পেশার লোকরা।
তিনি আরো বলেন, এই পেশায় এখন যে সামান্য উপার্জন হয়, তা দিয়ে কোনভাবে একটা সংসার চলে। কম্পিউটার যুগ আসার সাথে সাথে মানুষ আর টাইপিস্টদের কাছে আসতে চায় না। এক দিকে কম্পিউটার, অপরদিকে ফটোকপি মেশিন। এই দুই মেশিন এসে টাইপিস্টদের দিন শেষ। এর মধ্যে করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন থেকে অফিস-আদালত সরকারি ভাবে বন্ধ থাকায় আরো বেশি কষ্টে আছি আমরা।
টাইপরাইটার সোলেমান হোসেন বলেন, আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে এ কাজ করে আসছি। বর্তমানে আগের মত আর কাজ হয় না। যে আয় হয়, তা দিয়ে স্বচ্ছলভাবে সংসার চালানো যায় না। আগে প্রতিদিন একজন টাইপরাইটার আয় হত পাঁচশ থেকে সাতশ টাকা। কিন্তু কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে একজন টাইপরাইটার আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা আয় করতে কষ্ট হয়। যা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়। যার কারণে অনেকে এই পুরনো পেশা ছেড়ে অন্য কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।
রাজশাহী কোর্টের এ্যাডভোকেট বাবুল আক্তার বলেন, বেশির অংশ কম্পোজের কাজ কম্পিউটারে হলেও কিছু কিছু কাজে এখনও টাইপরাইটারের প্রয়োজন হয়। ফলে এই পেশা আগের মত বড় অংশের লোকবল না থাকলেও একেবারে বিলীন হয়ে যাবে না। মানুষ বাড়ার সাথে সাথে কাজও বেড়েছে। তাই ঐতিহ্যবাহী এ পেশায় যেনো কিছু মানুষ কর্মরত থাকতে পারে সে সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া প্রয়োজন। আজকের তানোর