রবিবর, ১০ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:২৯ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে জব্দ করে নিলাম দেয়া ২২টি গরু ভারতীয় নয়। সেগুলো আসলে দরিদ্র কৃষকের বাড়িতে পোষা গরু। রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয় এবং রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
গত ১৪ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থেকে চট্টগ্রামে বিক্রি উদ্দেশে ২২টি গরু নিয়ে যাচ্ছিলেন চারজন ব্যক্তি। পথে পথে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়িহাটে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের যৌথ চেকপোস্টে গরুগুলো আটকানো হয়। ভারতীয় গরু বলে পরের দিন দুপুরে সেগুলো নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। কৃষকদের দাবি, শুরু থেকেই তারা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র দেখিয়েছেন। গরু নিয়ে যাওয়া চারজনের একজন সাদিকুল ইসলাম বাঙ্গাবাড়ি ইউপির সদস্য। তাঁর দাবি, গরুগুলো চেকপোস্টে আটকানোর পর এক হাজার টাকা চেয়েছিলেন। টাকা না দিয়ে তিনি ট্রাক থেকে নেমে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। আর এ কারণেই দায়িত্বরত বিজিবি সদস্য ও কাস্টমস কর্মকর্তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরা চেয়ারম্যানের দেয়া প্রত্যয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলে গরুগুলো ভারতীয় বলে জব্দ করেন। এর পরদিন কোরবানির ২২টি গরু মাত্র ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। প্রতিটির দাম নেয়া হয় গড়ে ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। এ নিয়ে গত ১৬ জুলাই গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নজরে এলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক উত্তম কুমার দাস সরেজমিনে পরিদর্শন করে আসেন।
এ ছাড়া ঈদের ১৯ জুলাই রাজশাহী বিভাগীয় টাস্কফোর্স সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর। সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। একই দিন প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক উত্তম কুমার দাস সরেজমিন তদন্তে গোমস্তাপুরে যান। তিনি সেখানে গিয়ে প্রমাণ পান ২২টি গরুই স্থানীয় দরিদ্র কৃষকের বাড়িতে পোষা। এগুলো ভারতীয় গরু নয়। তিনি একটি তদন্ত প্রতিবেদন বিভাগীয় কমিশনার, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।
শনিবার বিকালে এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তম কুমার দাস জানান, বিষয়টা প্রাণিসম্পদ বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই আমি স্বপ্রণোদিত হয়ে পরিদর্শন করেছি। ২২টি গরুর মধ্যে সাতটি পুষেছিলেন গোমস্তাপুর উপজেলার ব্রজনাথপুর গ্রামের ছয়জন অসহায় নারী। এদের মধ্যে কুলসুম বেগমের দুটি গরু ছিল। এ ছাড়া মাতুয়ারি বেগম, মাজেদা বেগম, ফিরোজা বেগম, নাজিরা খাতুন ও রুমী বেগমের একটি করে গরু ছিল। তাদের কাছ থেকে কিনেছিলেন বেগুনবাড়ি গ্রামের আব্দুর রহিম, মইদুল ইসলাম ও সেলিম এবং ব্রজনাথপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলাম। এই চার ব্যবসায়ী তাদের বাড়িতে পোষা নিজের গরুর সঙ্গে এই কেনা গরুগুলো নিয়ে বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন। মোট ২২টি গরুর মধ্যে আব্দুর রহিমের পাঁচটি, মো. মইদুলের চারটি, মো. সেলিমের আটটি ও সাদিকুল ইসলামের পাঁচটি গরু ছিল। সবই দেশী জাতের গরু।
ইউপি সদস্য সাদিকুল ইসলাম জানান, তার নিজের বাড়িতে পোষা চারটি গরু ছিল। তিনি কুলসুমের কাছ থেকে একটি নিজে কেনেন। তাঁর আরেকটি গরু রহিমকে কিনে দেন। কুলসুমের দুটি গরুর দাম ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭০ টাকা। এরমধ্যে মাত্র ২৮ হাজার টাকা নগদ দেয়া হয়েছিল। কোরবানির হাটে বিক্রি করে এসে বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আর মাতুয়ারি বেগমের ৫০ হাজার টাকার গরু আরেকজনকে নিয়ে দিয়েছিলেন ইউপি সদস্য সাদিকুল। মাতুয়ারিকে নগদ দেওয়া হয়েছিল ২৬ হাজার টাকা। গরু হারানোর শোকে এবার এই ১০টি পরিবারে ঈদ আসেনি।
গরুগুলো নিলাম দিয়েছিলেন কাস্টমসের পরিদর্শক শাহরিয়ার হাসান সজীব। তিনি বলেন, বিজিবি ও চেকপোস্টের যৌথ চেকপোস্টে আটকের পর বিজিবি তাঁদের গরু বুঝিয়ে দেয়।
বিজিবি লিখিত প্রতিবেদনে বলে, গরুর সঙ্গে কোন মালিক পাওয়া যায়নি। সবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন। যোগাযোগ করা হলে বিজিবির রাজশাহীর এক ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাব্বির আহমেদও একই দাবি করেন।
তবে ইউপি সদস্য সাদিকুল ইসলাম বলেন, তাঁরা পালাননি। যে ট্রাকে তাঁরা গরু আনছিলেন সেই ট্রাকেই গরু কাস্টমসের গুদামে নেয়া হয়। সঙ্গে তাঁরাও ছিলেন। তাঁরা এখন ক্ষতিপূরণ চান।
এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
তবে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক উত্তম কুমার দাস জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনারের কথা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার তাঁকে জানিয়েছেন, কৃষকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার সুযোগ আছে। সেটা করা হবে। আজকের তানোর