রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৫৬ am
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে গণতন্ত্রই আক্রান্ত—এই অভিযোগ তুলে বিজেপিবিরোধীরা একজোট হতে শুরু করেছে। রাজ্যে রাজ্যে নিজস্ব রাজনীতির বাধ্যবাধকতা মাথায় রেখেও কংগ্রেসকে সামনে রেখে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রয়াস চলছে পুরোদমে। জাতীয় সংসদের অধিবেশন সেই প্রক্রিয়াকে আরও বেগবান করেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন।
নিজেদের মধ্যে আঞ্চলিক বিরোধ ভুলে তাই বাম, তৃণমূল ও কংগ্রেস জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে কাছাকাছি আসছে। ভবিষ্যতে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপিকে হটাতে বামদের সঙ্গে হাত মেলাতেও তৃণমূলের কোনো আপত্তি নেই বলে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সর্বশক্তি নিয়োগ করেও জিততে না পারায় বিরোধী শিবির বেশ উচ্ছ্বসিত। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল নেত্রী মমতা এখন থেকেই জোট গড়ার ডাক দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি নিজেও দিল্লি যাচ্ছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে।
মমতার বার্তা খুবই স্পষ্ট। তাঁর মতে, বিচারব্যবস্থা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানই আক্রান্ত। এমনকি সরকারের বিরোধিতা করলে সংবাদমাধ্যমেরও কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে। দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে বলেও তিনি একাধিকবার মন্তব্য করেছেন। মমতার উদ্যোগেই বিরোধীদের একজোট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন সাবেক বিজেপি নেতা ও ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিং। তৃণমূলে যোগ দিয়েই তিনি বিজেপিবিরোধী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন। ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরও শুরু করেছেন জোট–প্রক্রিয়া। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী থেকে শুরু করে অনেকের সঙ্গেই কথা বলছেন তিনি। কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, আরজেডি, এসপি, এনসিপি, ন্যাশনাল কনফারেন্সসহ একাধিক বিরোধী দলের মধ্যে অনেকটাই সমঝোতা হয়েছে। বামেরাও রয়েছে এই জোটে। তবে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে সংসদের বাদল অধিবেশনের শুরুতেই বিরোধীরা একগুচ্ছ ইস্যু হাতে পেয়েছে। কৃষি সংস্কারের নামে মোদি সরকারের তিনটি কৃষি বিলের বিরোধিতা করে আট মাস ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতারা। সেই সঙ্গে বিজেপির বহুদিনের জোট শরিক শিরোমণি আকালি দল মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে সরকারের বিরোধিতায় পথে নেমেছে। রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে নতুন করে দুর্নীতির অভিযোগ ও ফ্রান্সের তদন্ত, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংঘাত, করোনার টিকা নিয়ে হাহাকার ইত্যাদি ইস্যুতে বিরোধীরা এমনিতেই সরকারকে চাপে রাখার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু অধিবেশন শুরুর আগের দিন পেগাসাস কেলেঙ্কারি (দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ) প্রকাশ্যে চলে আসায় বিজেপি সরকার অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
পেগাসাস নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে রাহুল গান্ধীসহ কংগ্রেস সাংসদেরা সংসদ ভবনে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থান করেন। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের মতে, দেশবাসীর জানা দরকার, পেগাসাস নিয়ে আসলে কী হয়েছে। এর জন্যই বিচার বিভাগীয় তদন্ত জরুরি। পরে অধিবেশনকক্ষে ঢুকেও একই দাবিতে সোচ্চার হন তাঁরা। সভা মুলতবি হয়। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, ‘সন্ত্রাসবাদীদের বদলে আমাদের রাষ্ট্র ও আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সংস্থার আড়িপাতার ব্যবস্থা করে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’
পেগাসাস ইস্যুতে বাম সাংসদেরাও সোচ্চার। সিপিএম সাংসদ এলামারাম করিমের দাবি, সব কাজকর্ম স্থগিত রেখে অবিলম্বে পেগাসাস নিয়েই আলোচনা করতে হবে। গত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে রাজ্যসভায় বিবৃতি দেন তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ওই সময় তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন তাঁর বিবৃতি লেখা কাগজ কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। গতকাল শুক্রবার শান্তনুকে পুরো অধিবেশনের জন্য বরখাস্ত করা হয়। গতকালও বিরোধীদের প্রতিবাদের মুখে সংসদের দুই সভার অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়।
মমতার দিল্লি সফরকালে বিরোধীদের ঐক্যের বিষয়টি নিয়েও আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করবেন দলের সাংসদেরা। সামনেই উত্তর প্রদেশসহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। এই রাজ্যগুলোতে পশ্চিমবঙ্গের মতোই বিজেপিকে পরাস্ত করার কৌশল নিয়েও ভাবতে শুরু করেছেন বিরোধী দলের নেতারা। ভারত সরকারের বিভিন্ন তদন্তকারী ও অপরাধ দমন সংস্থার অপব্যবহার নিয়েও সোচ্চার বিরোধীরা। মমতার অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনকেও প্রভাবিত করছে বিজেপি সরকার। তাই তিনি গণতন্ত্র উদ্ধারে সবাইকে একজোট হওয়ার ডাক দেন। সূত্র : আজকের পত্রিকিা