রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:০০ am
ডেস্ক রির্পোট : নাসির উদ্দিন মণ্ডল (৪৫)। নেশার কারণে সন্তান নিয়ে স্ত্রী ছেড়ে চলে গেছেন। রোগ, শোক ও অনাহারে তার শরীর হাড্ডিসার কংকাল হয়ে যায়। বগুড়া শহরের পালশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তিন দিন অনাহারে পড়ে থাকলেও কেউ তার খোঁজ নেয়নি।
শুক্রবার এশার নামাজের সময় প্রতিবেশীরা মৃত ভেবে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তিনি হঠাৎ নড়ে ওঠেন। ‘৯৯৯’-এ খবর পেয়ে পুলিশ মধ্য রাতে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়েও বাঁচাতে পারেননি।
বগুড়ার নিশিন্দারা উপশহর ফাঁড়ির এসআই রহিম উদ্দিন রানা জানান, মানুষের মানবতা নেই। নাসিরকে বাঁচাতে না পারার কষ্ট তাকে অনেক ব্যথা দিয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, নাসির উদ্দিন মণ্ডল বগুড়া শহরের পালশার মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। স্ত্রী ও দুই মেয়ের সুখের সংসার থাকলেও মাদকাসক্ত হওয়ায় তার সব শেষ হয়ে যায়। এর মাঝে বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাদকের টাকা সংগ্রহে গত পাঁচ বছরে আড়াই বিঘা জমি ও বাড়ি বিক্রি করে নিঃস্ব তিনি। মাদক না ছাড়ায় ও আয় না করায় ছয় মাস আগে ছোট মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে গেছেন।
এ অবস্থায় আত্মীয়স্বজন কেউ নাসির উদ্দিন মণ্ডলের খোঁজ নিতেন না। তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। রাতে স্কুলের বারান্দা, মাঠসহ বিভিন্ন খোলা জায়গায় ঘুমাতেন। মাদকসেবন করায় এলাকাবাসীর কেউ তাকে পছন্দ করতেন না। নেশা করে ও ঠিকমতো খেতে না পেরে তার শরীর কংকালসার হয়ে যায়।
এসআই রহিম উদ্দিন রানা জানান, নাসির উদ্দিন গত তিন দিন ধরে পালশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গাছের নিচে বিছানা করে থাকতেন। কেউ তাকে খাবার দেননি। চলাফেরা করার শক্তি না থাকায় কোথাও ভিক্ষা করতেও যেতে পারেননি। একপর্যায়ে তার শরীরের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাতে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে প্রতিবেশীরা তাকে মৃত ভাবেন। তাকে দাফনের জন্য মসজিদ থেকে খাটিয়া আনা হয়। এ অবস্থায় এলাকার এক যুবক ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দিয়ে পুলিশকে স্কুল মাঠে মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর দেন। উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রহিম উদ্দিন রানা সেখানে যান।
সন্দেহ হওয়ায় লোকজন নাসিরের চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দিলে তিনি নড়াচড়া করতে থাকেন। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি। আধাঘণ্টার মধ্যেই তিনি মারা যান।
এসআই রহিম উদ্দিন রানা জানান, হাড্ডিসার শরীর নিয়ে মাদকাসক্ত নাসির উদ্দিন তিন দিন ধরে স্কুল মাঠে পড়েছিলেন। কেউ তাকে খাবার দেননি; খোঁজও নেননি। এ কারণে তিনি নড়াচড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। মৃত ভেবে দাফনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। নড়ে ওঠায় হাসপাতালে নিয়েও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। প্রতিবেশীদের এহেন অমানবিক কাজে তিনি (এসআই রানা) খুব কষ্ট পেয়েছেন। পরে নাসির উদ্দিনের মরদেহ বোনজামাই সাইদুল মণ্ডলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সূত্র : যুগান্তর