মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৪৩ pm
ডেস্ক রির্পোট : দেশে দুর্ঘটনাজনিত কারণে পঙ্গু হয়ে যারা ভিক্ষাবৃত্তি করছেন তাদের মধ্যে ৮২.৫৩ শতাংশ ভিক্ষুক সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়েছেন। আর বাকী ১৭.৪৬ শতাংশ গাছ থেকে পড়াসহ অন্যান্য কারণে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৬৩ জন পঙ্গু ভিক্ষুকের উপর সাক্ষাকার ভিত্তিক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি।
বুধবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার ১৯টি স্থানসহ ধামরাই, সাভার আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ (আরিচা ও পাটুরিয়া ফেরিঘাট) রাজবাড়ি (গোয়ালন্দ ফেরিঘাট) যশোর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে এই জরিপ কাজ পরিচালনা করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পঙ্গু ভিক্ষুকদের ৩২.৬৯ শতাংশ মোটরযানের (বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্রাক্টর, ট্রলি) শ্রমিক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছেন। ১৭.৩০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন, ভটভটি, চান্দের গাড়ি, টমটম, অটোরিকশা, অটোভ্যান, প্যাডেল রিকশা, ঠ্যালাগাড়ি ইত্যাদি) চালানোর সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। এছাড়া ৪২.৩০ শতাংশ মোটরযানের যাত্রী হিসেবে এবং ৭.৬৯ শতাংশ পথচারী হিসেবে রাস্তায় চলাচলের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার পর মোটরযান মালিকদের নিকট থেকে চিকিৎসার জন্য সামান্য সহযোগিতা পেয়েছেন ১১.৫৩ শতাংশ ভুক্তভোগী। তবে কেউই মোটরযানের তৃতীয় পক্ষীয় ঝুঁকি বীমার মাধ্যমে কোনো আর্থিক সুবিধা পাননি। দুর্ঘটনার পর চিকিৎসার জন্য আত্মীয়-স্বজন ও সাধারণ মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন সকলেই।
প্রতিবেদন বলছে, দুর্ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ২৫ শতাংশ ভুক্তভোগী, অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ৫৫.৭৬ শতাংশ। মন্তব্য করেননি ১৯.২৩ শতাংশ ভুক্তভোগী।
৮৪.৬১ শতাংশ ভুক্তভোগী শুধু সরকারি হাসপাতালে ও ১৫.৩৮ শতাংশ চিকিৎসার কোনো এক পর্যায়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জরিপের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দুর্ঘটনার সময় ৫১.৯২ শতাংশ ভুক্তভোগীর বয়স ছিল ১৩-২৫ বছর। ৩০.৭৬ শতাংশের বয়স ২৬-৪০ বছর এবং ১৭.৩০ শতাংশের বয়স ৪১-৬০ বছর ছিল। দুর্ঘটনার পূর্বে ৩২.৬৯ শতাংশের পেশা ছিল মোটরযানের চালক-শ্রমিক। ১৭.৩০ শতাংশের পেশা ছিল স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের চালক-শ্রমিক। মুদি দোকানী ছিল ১৩.৪৬ শতাংশ, চা দোকানী ও হকার ৯.৬১ শতাংশ, সবজি বিক্রেতা ১১.৫৩ শতাংশ, কৃষি শ্রমিক ও নির্মাণ শ্রমিক ১৫.৩৮ শতাংশ, ঘাটের মাঝি ও মৎস্যজীবী ছিল ৩.৮৩ শতাংশ।
প্রতিবেদন বলছে, দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসার জন্য পারিবারিক সম্পত্তি (জমি ও গৃহপালিত পশু) বিক্রি করেছেন ৬৫.৩৮ শতাংশ ভুক্তভোগী পরিবার। বিক্রি করার মতো তেমন সম্পত্তি ছিল না ৩৪.৬১ শতাংশ পরিবারের। দুর্ঘটনার পূর্বে আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল এমন প্রশ্নের উত্তরে ৪০.৩৭ শতাংশ বলেছেন মোটামুটি চলছিল। ৫৯.৪২ শতাংশ বলেছেন কষ্ট করে দিনাতিপাত করতো।
প্রতিবেদনের বিষয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মোটরযানে তৃতীয় পক্ষীয় ঝুঁকিবীমা বাধ্যতামূলক আছে এবং এই বীমার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে ‘মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স এ্যাক্ট-১৯৮৩’ তে মোটরযানে তৃতীয় পক্ষীয় ঝুঁকিবীমা বাধ্যতামূলক ছিল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালত ছিল ক্লেইম ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু দুঃখজনক যে, এই আইনের মাধ্যমে কেউ ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন এমন নজির দেখা যায়নি। বীমা কোম্পানীগুলো নিয়মিত প্রিমিয়াম নিলেও ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না। তাদের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরকারও কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত গরীব মানুষেরা চিকিৎসার জন্য সহায়-সম্বল বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পথের ভিখারীতে পরিণত হয়েছেন।
ফাউন্ডেশন আরো বলছে, পূর্বের আইনে কেউ ক্ষতিপূরণ পায়নি এই অজুহাতে সরকার ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ তে মোটরযানের তৃতীয় পক্ষীয় ঝুঁকিবীমা বিলোপ করে একটি ‘ট্রাস্ট ফান্ড’ এর বিধান রেখেছে, যার সাংগঠনিক কাঠামো এবং তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। এই তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া খুবই দুরুহ হবে বলে আমাদের আশংকা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আইন প্রণয়নের এতদিন অতিবাহিত হলেও ট্রাস্ট ফান্ড গঠনই হয়নি। অথচ প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় বহু মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে। পঙ্গু ভিক্ষুকদের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবার ও দেখার কেউ নেই। আজকের তানোর