শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:০২ am
আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির জন্য যত নিয়ামত সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্যে ‘সময়’ একটি। এই সময়কে আমরা শতাব্দী, যুগ, বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন, ঘণ্টা প্রভৃতি এককে ভাগ করে থাকি। এসব কিছুই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবী সৃষ্টির সময়। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে: ‘নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বারো মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান এবং জমিন সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা তওবা-৩৬)। হিজরি সন ৩৫৪ দিনে হয়ে থাকে। এই দিনগুলোর মধ্যে হজ ও দুই ঈদের দিনের পর জুমা দিবসের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অতুলনীয়। হজ ও দুই ঈদ বছরে একবার হয়।
এগুলোকে বাদ দিলে সাপ্তাহিক সম্মিলনের দিন হিসেবে জুমা দিবসের ন্যায় মর্যাদাবান দিবস আর নেই। এই দিবসটিকে ইসলামি শরিয়তের ভাষায় ‘রাইসুল আইয়াম’ বা দিবসসমূহের সর্দার নামে অভিহিত করা হয়। জুমা শব্দের অর্থ সম্মিলিত হওয়া, একত্র হওয়া। যেহেতু এই দিবসে দুই রাকাত ফরজ নামাজ পড়ার জন্য ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবাই মসজিদে একত্র হয়, তাই এই দিবসকে ‘ইয়াওমুল জুমা’ বা সম্মিলনের দিবস বলে আখ্যায়িত করা হয়। এমনকি আল কোরআনে ১১৪টি সুরার মধ্যে সুরাতুল জুমা নামে একটি সুরাও রয়েছে। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ওপর জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ।
এই দিবসে আমাদের জন্য করণীয় বিষয় হলো, জুমা দিবসকে ভুলে না যাওয়া। বৃহস্পতিবার থেকেই মনে রাখতে হবে আগামীকাল জুমাবার। তাই কোনো ব্যস্ততা ও কাজ রুটিনে না রাখা। অতিপ্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে ফজরের সালাত আদায় করা। অতঃপর বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াতসহ জিকির-আসকার ও তাসবিহ পাঠ করা, গোসল সম্পাদন করা এবং জুমা সালাতের আজানের আগেই মসজিদে গমন করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সুরা জুমার ৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন: ‘হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বর্জন কর।
এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। মসজিদে হেঁটে গমন করা, ইমামের কাছাকাছি বসা এবং মনোযোগের সঙ্গে তাঁর বক্তব্য শোনা প্রতিটি মুসল্লির জন্য আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে মহানবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমা দিবসে প্রত্যুষে ঘুম থেকে জাগ্রত হলো, গোসল করল, অতঃপর হেঁটে মসজিদে গমন করল, ইমামের কাছাকাছি স্থানে বসল এবং তাঁর ভাষণ শুনল, তবে তাঁর আমলনামায় এক বছরের রোজা ও নামাজ পড়ার সওয়াব প্রদান করা হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর: ৩৪৫) মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘জুমা’ দিনে মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং মানুষের আগমন লিপিবদ্ধ করতে থকেন। যিনি প্রথমে আসেন তাঁর নাম আগে, এভাবে ক্রমান্বয়ে লেখা হয়। অতঃপর যখন ইমাম খুতবা শুরু করেন, তখন তাঁরা লেখা বাদ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন। যিনি মসজিদে প্রথম আসেন তিনি একটি উট, এরপর আগমনকারী একটি গরু, অতঃপর একটি ছাগল, অতঃপর একটি ভেড়া কোরবানি করার সওয়াব লাভ করেন।
এমনকি মুরগি বা ডিম দান করারও সওয়াব লাভ করা যায়। (বুখারি, হাদিস নম্বর: ৯২৯)এভাবে নামাজ শেষ করার পর রিজিকের সন্ধানে বাইরে যাওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে আল কোরআনে। ব্যবসায়-বাণিজ্য করার উৎসাহ পাওয়া যায় জুমা নামাজের পর। তবে জুমা নামাজ বাদ দিয়ে নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সুরা জুমার ১০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন: ‘অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।’
জুমার দিবস মুসলিম জাতির জন্য একটি তাৎপর্যমণ্ডিত দিবস, যা গরিবের জন্য ঈদের দিন বলে গৃহীত। এই দিনের করণীয় বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যশীল হওয়া আমাদের একান্ত কর্তব্য। লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়