শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:০৭ am

সংবাদ শিরোনাম ::
তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ পুঠিয়ায় ভুয়া ডাক্তার ধরে প্রাননাশের হুমকির মুখে সাংবাদিকরা রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন তানোর থানায় দালালের দৌরাত্ন্য বৃদ্ধি, অসহায় মানুষ দুর্গাপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে আটক ৩ জনের কারাদণ্ড গ্রাহকের ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, বন্ধু মিতালীর চেয়ারম্যানসহ আটক ৪ রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে আ.লীগকে দূরে রাখতে ছাত্রনেতাদের চাপ অর্ন্তবর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ না হওয়ার আহ্বান বিএনপি নেতাদের তানোরে সরকারি কর্মকর্তা ও সুধীজনদের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সাম্প্রতিক সময়ে অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে সচেতন নাগরকবাসী
করোনাকালে জীবন-জীবিকা এবং লকডাউন দ্বন্দ্ব : ড. প্রণব কুমার

করোনাকালে জীবন-জীবিকা এবং লকডাউন দ্বন্দ্ব : ড. প্রণব কুমার

এই লেখাটি যখন লিখছি তখন দেশে কোভিড-১৯ এর দৈনিক সংক্রমণের হার প্রায় ২৫% এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ অতিক্রম করেছে। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে, দেশে সংক্রমিত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। ভারতীয় সীমান্তের আশেপাশের কয়েকটি জেলায় ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি বিপর্যয়য়ের আকার ধারণ করেছে।  কয়েক সপ্তাহ আগেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ সীমান্তবর্তী এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে, আমরা প্রতিদিনের কোভিড-১৯ রোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যার রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করছি। স্বাস্থ্য বিভাগ যদি করোনার লক্ষণযুক্ত রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনা করে পরিসংখ্যান প্রস্তুত করে তবে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে।
ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতির কারণে সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি জেলার প্রশাসন স্থানীয় ভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হয়। তবে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলতে নাগরিকদের অনীচ্ছার কারণে এবং কিছু ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর লকডাউন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দৃঢ়তার অভাবের কারণে সংক্রমণের হার প্রত্যাশিত পর্যায়ে কমেনি। ফলস্বরূপ, সংক্রমণের পরিস্থিতির বিবেচনায় সরকার ১ জুলাই থেকে সাত দিনের জন্য দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশব্যাপী লকডাউন কার্যকর করতে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কথা বলে এক শ্রেণির মানুষ সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত রয়েছে। এমনকি, বিভিন্ন গণমাধ্যম দাবি করেছে যে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে অনেক মানুষ শহর থেকে (মূলত ঢাকা থেকে) গ্রামে ফিরেছে। এর ফলে, দেশব্যাপী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে আরও ব্যাপকভাবে।   তবে, আমরা যদি পরিস্থিতিকে সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করি তাহলে বুঝতে পারবো যে  সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারকে বেশ কিছু বাধ্যবাধকতায় কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে ৩০ জুন তারিখে ব্যাংকসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাধারণত তাদের অর্ধ-বার্ষিক সমাপনীকরণ সম্পন্ন করে। তাছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি সকল সংস্থার কর্মীরা প্রতি মাসের শেষে বেতন পান। ৩০  জুন সংসদে আগামী অর্থ বছরের বাজেট পাস হওয়ার কথা থাকে। এমনকি সরকারকে শ্রমজীবী জনগোষ্ঠী-যারা দিন আনে দিন খায়- তাদের দুর্দশার কথাও বিবেচনা করতে হয় কারণ কাজ না করলে এই শ্রেণির মানুষ লকডাউনের সময় জীবিকা নির্বাহ করবে কীভাবে? ফলে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন কার্যকর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা দেরি হওয়ার জন্য সরকারকে দোষারোপ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন সরকারের বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়নের পরেও কেন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলো না? এখানে উল্লেখ্য যে সরকার গত দুই মাস ধরে ভারতের সঙ্গে সকল সীমান্ত বন্ধ রেখেছে। এমনকি সরকার সকল প্রকার গণ পরিবহন, জনসমাবেশ এবং সাধারণ জনগণের যাতায়াত সীমাবদ্ধ করেছিল। সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, জনগণের একটি বিশাল অংশের মাস্ক ব্যবহার, ঘন ঘন হাত ধোয়ার অনুশীলন এবং ভিড়ের এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে অনীহার জন্য আমরা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে সংক্রমণের হার হ্রাস করতে করতে ব্যর্থ হয়েছি।
জনসংখ্যার এই অংশ সংক্রমণকে ভয় পায় না কারণ তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে কোভিড-১৯ তাদের সংক্রমিত করতে পারবে না। তাছাড়া, রিকশা চালক, দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, এবং নির্মাণ শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশার জনগণ যারা দিন আনে দিন খায় তাদের জীবিকার জন্য বাইরে বের হতেই হয়।  কারণ, যদি তারা একদিন কাজ না করে তবে পরের দিন কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে সেই চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। অতএব, এই শ্রেণির জনগণ কোভিড-১৯ এর সুরক্ষা বিধি  অনুসরণ না করেই ঘর থেকে কাজের সন্ধানে বের হতে বাধ্য হয়, যা দূষণের ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করে।
আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময়ে দরিদ্রদের সহায়তা প্রদান করার ক্ষেত্রে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। অতিমারি শুরুর পর থেকে তারা দরিদ্র জনগণকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে। সরকার অর্থনীতির গতি সচল রাখতে একটি উপযুক্ত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্যাকেজ বাস্তবায়ন করেছে। সর্বোপরি দেশবাসীকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাহস দেখিয়েছে। ফলে ৫০ লক্ষ্যের বেশি মানুষ  ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ গ্রহণ করেছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি অবনতির কারণে বিদেশে ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে তাদের ভ্যাকসিনের চালান প্রেরণে ব্যর্থ হলে দেশে টিকা প্রদান কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে, ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী  অন্যান্য সংস্থা ও দেশের সাথে সরকারের ভ্যাকসিন কূটনীতি প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তাদের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে প্রায় সকল ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর সাথে হয় চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে অথবা আলোচনা ফলপ্রসূ করেছে। ফলস্বরূপ, সরকার এই বছরের শেষ নাগাদ প্রায় ৫ কোটি জনগণকে টিকা প্রদানের পরিকল্পনা করেছে।
সরকার করোনাকালীন লকডাউনের সময় জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হলেও, জনগণের বিশাল একটি অংশ অর্থ উপার্জন করতে না পেরে জীবিকা নির্বাহে অসুবিধা বোধ করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লকডাউনের সময় শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশার কথা বিবেচনা করে তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা অনুযায়ী সহায়তা করা উচিত।  তবে নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের মতো দেশের সরকারের পক্ষে লকডাউনের সময় মাসের পর মাস মানুষকে সাহায্য প্রদান করা প্রায় অসম্ভব একটি বিষয়।
ফলে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে দরিদ্র জনগণের সহায়তার জন্য আমাদের সকলের এগিয়ে আসা উচিত। বিভিন্ন এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অতিমারির প্রথম প্রথম পর্যায় থেকে মানুষকে সহায়তা করেছে। একই সময়ে, অনেক বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান  অতিমারির সময়ে দরিদ্র জনগণকে সহায়তার জন্য ইতিবাচক ভাবে এগিয়ে  আসেনি। অভাবী মানুষদের সহায়তা করার জন্য তাদেরও মুক্ত মন নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।  অতিমারি চলাকালীন সময়ে সব কিছুর জন্য সরকারের দায়ী না করে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে।
সরকার ও বিভিন্ন সংস্থার প্রচেষ্টার পাশাপাশি অতিমারি মোকাবিলার জন্য জনসচেতনতা অন্যতম প্রয়োজনীয় কৌশল। দুর্ভাগ্যক্রমে, দেশের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী কোভিড-১৯  এর সুরক্ষা বিধি অনুসরণ করতে যথেষ্ট অনিচ্ছুক। এই মানুষদের অবহেলা তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং সম্প্রদায়কে গভীর সংকটে ফেলছে। দেশের গত দুই সপ্তাহের করোনা পরিস্থিতির দিলে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে যে সারাদেশে সমস্ত হাসপাতাল রোগীতে ভর্তি হয়ে গেছে।  এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করেতে সক্ষম হয়েছে। যদিও পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন এবং আইসিইউ বেডের দুষ্প্রাপ্যতা রয়েছে। সুতরাং পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সরকারের পক্ষে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। ফলে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারেচ-এই বিষয়টি আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন।
উপরোক্ত পরিস্থিতিতে, শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ সময়কালে আমাদের সকলের সংবেদনশীল আচরণ করা উচিত। আমরা যদি দু’সপ্তাহের জন্য সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে পারি এবং কষ্ট স্বীকার করে হলেও ঘরে থাকতে পারি, তবে সংক্রমণের হার প্রশমিত হতে শুরু করবে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে লকডাউন চলাকালীন সময়ে বেশিরভাগ মানুষ  কষ্টের মুখোমুখি হয়। তবে একথাও ঠিক যে জীবিকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। কারণ আমরা যদি বেঁচেই না থাকি তাহলে কীভাবে জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন করবো? সুতরাং, অতিমারি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার, নাগরিক এবং বিভিন্ন সংস্থাসহ সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। কোনও যাদু মানুষকে অতিমারি চলাকালীন সময়ে জীবন, জীবিকা এবং লকডাউনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারবে না। পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের এই দ্বন্দ্ব নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে এবং সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। অবেই আমরা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। লেখক: অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.