শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:২০ am
ক্রীড়া ডেস্ক : বিশ্রাম আর ব্যক্তিগত কারণে সাকিব আল হাসান গত চার বছরে বাংলাদেশ দলের অন্তত তিনটি সফরে ছিলেন না। একই কারণে গত দুই বছরে একাধিক সিরিজে ছুটি চেয়েছেন তামিম ইকবাল–মুশফিকুর রহিমও। খেলোয়াড়দের ছুটি কিংবা নাম প্রত্যাহারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গত ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিলেন, এবার চুক্তিতে নতুন ধারা যুক্ত হবে।
সেসব ‘নতুন ধারা’ যুক্ত করে গত সপ্তাহে ক্রিকেটারদের একটি চুক্তিপত্র পাঠিয়েছে বিসিবি। ‘পছন্দের সংস্করণ ও ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি’ শিরোনামে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের পাঠানো চুক্তিপত্রের শুরুতেই খেলোয়াড়দের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কে কোন কোন সংস্করণ খেলতে চান। খেলতে না চাইলে পাশে ‘ক্রস চিহ্ন’ দিতে হবে।
সাধারণত বিসিবি কেন্দ্রীয় চুক্তি করে এক বছরের জন্য। এবার চুক্তির মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ে বিসিবির বাইরে ক্রিকেটীয় প্রতিশ্রুতি যেমন— কে কোন দেশি–বিদেশি লিগ–টুর্নামেন্ট খেলবেন, সেটি ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়ে দিতে হবে। চুক্তিপত্রে একজন ক্রিকেটার সর্বোচ্চ চারটি লিগের কথা জানাতে পারবেন। জানাতে হবে পারিবারিক প্রতিশ্রুতির কথাও। সন্তানের বাবা হওয়া, বিয়ে কিংবা পারিবারিক কারণগুলো আগেই জানিয়ে রাখতে হবে।
সাধারণত কেন্দ্রীয় চুক্তির আগে খেলোয়াড়েরা বিসিবির আচরণবিধি, বিসিবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন কার্যক্রমে যুক্ত না হওয়াসহ নানা নিয়ম মানার শর্তে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু কে কোন সংস্করণে খেলবেন, কখন কোন লিগে ব্যস্ত থাকবেন বা কখন ছুটিছাটা লাগবে—এসব ব্যাপারে অগ্রিম স্বাক্ষর নেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম।
আর এটিই ভাবনায় ফেলেছে ক্রিকেটারদের। যদিও কাল পর্যন্ত বেশির ভাগ ক্রিকেটারই তিন সংস্করণেই স্বাক্ষর করেছেন।
পারিবারিক কিংবা ছুটি চাওয়ার ঘরগুলো ফাঁকা রেখেছেন। তবু ক্রিকেটারদের কেউ কেউ মনে করেন, তাঁদের পায়ে ‘শেকল পরাতে’ই এমন চুক্তিপত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রিকেটার বললেন, ‘চুক্তিটা আমাকে ভাবাচ্ছে। অন্যবার যেমন চোখ বুজে সই করতে পারতাম, এবার পারছি না! একটু ভাবতে হচ্ছে।’ আরেক খেলোয়াড় বললেন, ‘চুক্তি তো মাথার ওপর দিয়ে গেল!’ বাংলাদেশ দলের আরেক সদস্য বলছেন, ‘এ ধরনের চুক্তি আসলে আগে করিনি। বলতে পারছি না, এটার প্রভাব কী।’
বিসিবি অবশ্য বলছে, বাধ্য হয়েই তাদের এমন উদ্যোগ নিতে হয়েছে। গত চার বছরে ক্রিকেটারদের বিশেষ করে সিনিয়র ক্রিকেটারদের আকস্মিকভাবে সিরিজ বা সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বেশ বিপাকেই পড়তে হয়েছে বোর্ডকে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট সিরিজ থেকে বিশ্রাম নিয়েছিলেন সাকিব। চোটে পড়ে আর পারিবারিক কারণে সাকিব যেতে পারেননি ২০১৯ ও ২০২১ সালের নিউজিল্যান্ড সফরেও।
গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা সফরে না গিয়ে সাকিবের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলার ব্যাপারটা একেবারেই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি বিসিবি। শ্রীলঙ্কা সফরে তাঁর নাম প্রত্যাহারের ঘটনাটা নিয়ে হয়েছে তুমুল আলোচনা–সমালোচনা। গত বছর পাকিস্তান সফর থেকে মুশফিকের নাম প্রত্যাহারও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে ২০১৯ সালের নভেম্বরে ভারত সফরে যাননি তামিম ইকবাল।
গত মার্চে বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ছুটি নিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড সফরের টি–টোয়েন্টি সিরিজ থেকে। সর্বশেষ ছুটির আবেদন করেছেন মুশফিক। সে ছুটি মঞ্জুর করে বিসিবি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্রাম দিয়েছে বাংলাদেশ দলের তারকা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানকে।
ছুটিছাটার ঘটনা সিনিয়র ক্রিকেটারদের বেশি হলেও বিয়ে–সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে সিরিজ না খেলার ঘটনা মাঝেমধ্যে তরুণ ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রেও ঘটছে। বিয়ের পিঁড়িতে বসায় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে লিটন দাস হাতছাড়া করেছিলেন শ্রীলঙ্কা সফর। গত বছর মার্চে একই কারণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে ছুটি নিয়েছিলেন সৌম্য সরকার।
ব্যক্তিগত নানা কারণ কিংবা বিদেশি লিগে খেলার প্রস্তাব তো আছেই, জৈব সুরক্ষাবলয়ে টানা থাকতে থাকতে ঘিরে ধরা অবসাদ থেকে মুক্তি পেতেও সিরিজের আগে বিশ্রাম চাইছেন কেউ কেউ। বিসিবির এই ছুটি দিতে আপত্তিও নেই। ক্রিকেট বোর্ডের আপত্তিটা হচ্ছে, সফর কিংবা সিরিজের আগে হঠাৎ ছুটি চাওয়াটা নিয়ে।
এতে তাদের বিপাকে পড়তে হয়। টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে যায়। দ্রুত ওই খেলোয়াড়ের বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যায় আর তারকা ক্রিকেটারদের নাম প্রত্যাহার নিয়ে যে হইচইটা চারদিকে হয়, তাতে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ গুমোট হয়ে যায়। যেটির প্রভাব পড়ে খেলার মাঠেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচক প্যানেলের এক সদস্য বললেন, ‘ঘটনাটা বেশি ঘটছে টেস্ট সিরিজের আগে। বেশি হচ্ছে সিনিয়র খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে।’
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে কোনো সফরের আগে আকস্মিকভাবে কেউ “না” করে দিলে আমরা খুব বিপাকে পড়ে যাই। আগে থেকে জানা থাকলে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়। ওই ক্রিকেটারের বিকল্পও বের করে নেওয়া যায়। এ কারণেই এবার লিখিতভাবে আমরা আগে থেকেই জানতে চেয়েছি।’ আকরাম আরও যোগ করেছেন, ‘সবাই বলেছে, তিন সংস্করণই খেলবে। আশা করি, এই সপ্তাহে হয়ে যাবে চুক্তি। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ১৮–২০ জন থাকবে।’
আকরাম আগেই জানিয়েছেন, এবার ক্রিকেটারদের ১০–১২ শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। গত বছরের মতো এবারও লাল–সাদা বলে ভাগ করে চুক্তি হবে খেলোয়াড়দের।
খেলোয়াড়েরা নিজেদের সংস্করণ ও ছুটিছাটার বিষয়ে মতামত জানিয়ে দেওয়ার পর বিসিবি চূড়ান্ত করবে তালিকা। আজকের তানোর