রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:২২ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে করোনার ছোবলে প্রতিদিনই ঝরছে প্রাণ। মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না! তাই মন ভালো নেই কারও। চারিদিক কেবল খাঁ খাঁ করছে। কিন্তু এত কিছুর পর করোনার এই শহরে নীরব প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগিয়েছে বর্ষা।
বর্ষা মানে ঘন কালো মেঘ, ঝুম বৃষ্টি, নতুন প্রাণ জেগে ওঠার গান। ষড়ঋতুর মধ্যে বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্যে বর্ষাকাল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। বসন্তকে ঋতুরাজ বললেও রূপের গৌরব ও প্রকৃতির সৌন্দর্যের জন্য বর্ষাই প্রকৃতির রানি। পরিস্থিতি যা-ই হোক; বর্ষা কমবেশি সবার মনকেই স্নিগ্ধ করে তোলে। প্রবল বর্ষণে নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে ভরে পূর্ণ যৌবনা হয়ে ওঠে এ সময়। বিলে-ঝিলে ফুটন্ত শাপলা-শালুক বিমোহিত করে।
বর্ষায় তৃষ্ণাকাতর চারপাশের শ্যামল প্রকৃতি আরও সবুজ হয়ে ওঠে। দিনের পর দিন বৃষ্টির অভাবে থাকা অনুর্বর মাটি হয়ে উঠে উর্বর। ফিরে পায় প্রাণের স্পন্দন। রিমঝিম বৃষ্টির মিষ্টিমাখা সুরে প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি। হেসে ওঠে সবুজরঙা গাছপালা। আর বর্ষা মানে বাহারি রঙের সুগন্ধি ফুলের সমাহার। বর্ষা যেন আমাদের প্রকৃতিকে আপন মনে বিলিয়ে দেয় এবং এর ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে করে তোলে বিমোহিত। বর্ষায় ফোটে কদম, সোনালু, জারুল, কৃষ্ণচূড়া। গাছে গাছে ফুলের সৌন্দর্য বর্ষার রূপকে আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।
রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে বহরমপুর রাস্তাটি সেজেছে সূর্যমুখী ফুলে। ফুল গাছের পাতা বেয়ে দু-এক ফোঁটা বৃষ্টিকণা তখনো গড়িয়ে পড়ছে ধীরলয়ে। সাহেববাজার থেকে আলুপট্টি রাস্তায় সুবাস ছড়াচ্ছে দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, চম্পা, হাসনাহেনা ও মিনি রঙ্গন।
রাজশাহী মহানগরীর ভদ্রা স্মৃতি অম্লান চত্বর থেকে তালাইমারি সড়কের আইল্যান্ডে শোভা পাচ্ছে বাগান বিলাস, অ্যালামুন্ডা, কলাবতিসহ নানা প্রজাতির ফুল। নগরীর ঐতিহ্য চত্বর থেকে নগর ভবন পর্যন্ত সড়কে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে ঝুলে আছে কাঠগোলাপ, কাঞ্চন, পলাশ, ডেইজি, কৃষ্ণচূড়াসহ বাহারি ফুল। দেখে মনে হবে প্রকৃতি তার মনোমুগ্ধকর রূপ, সুবাস দিয়ে প্রবলভাবে মোহিত করে রেখেছে রাজশাহী মহানগরীকে। যার স্নিগ্ধ রূপ ও রং বৈচিত্র্য থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া কঠিন।
মহানগরী বিভিন্ন রাস্তার দুইধার, আইল্যান্ডে বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির পাতাবাহার ও ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে আছে- বৈলাম, তেলসুর, ধারমারা, উদাল, ঢাকিজাম, তিতপাই, গুটগুটিয়া, হলুদ, বাটনা, গর্জন, বনজলপাই, ছাতিয়া, শ্বেত চন্দন। প্রাণ জুড়ানো এ দৃশ্য দেখে যে কেউ থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হয়। সড়ক ধরে সামনে এগোলে মনে হবে এযেন রঙিন সব ফুলের এক স্বর্গরাজ্য।
রাস্তার আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর দিকে তাকালেই এখন মন ভরে যাচ্ছে। প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে, স্তবকে স্তবকে, ফুল ফুটে আছে। কোনোটা গোলাপী, কোনোটা ফুল শ্বেত, কোনোটা যেন রক্তমাখা, আবার কোনোটা যেন হলুদ। বাতাসের সঙ্গে মন মাতানো ফুলের ঢেউ এবং সুরভীতে ছন্দময় হয়ে ওঠেছে রাজশাহী মহানগরীর প্রাকৃতিক পরিবেশ।
বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীর ভদ্রা স্মৃতি অম্লান চত্বর থেকে তালাইমারি সড়কের আইল্যান্ডে শোভা পাচ্ছে বাগান বিলাস, অ্যালামুন্ডা, কলাবতিসহ নানা প্রজাতির ফুল। সাহেববাজার থেকে আলুপট্টি রাস্তায় সুগন্ধ ছড়াচ্ছে দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, চম্পা, হাসনাহেনা ও মিনি রঙ্গন।
কাশিয়াডাঙ্গা থেকে বহরমপুর সড়কটিও সেজেছে সূর্যমুখী ফুলে। এই রাস্তায় সুগন্ধি আর সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে গৌরিচোরা, রঙ্গন, টগর, মুসান্ডাসহ নানা প্রজাতির ফুল। রাজশাহী কোর্টচত্বর থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত এখন রয়েছে টগর, মুসান্ডা, করবি, শিউলিসহ নানা জাতের ফুল। এছাড়া নগরীর ঐতিহ্য চত্বর থেকে নগর ভবন পর্যন্ত সড়কের পাশে শোভা পাচ্ছে কাঠগোলাপ, কাঞ্চন, পলাশ, ডেইজি, কৃষ্ণচূড়াসহ নানা প্রজাতির গাছ ও ফুল। লক্ষ্মীপুর থেকে ঐতিহ্যবাহী টমটম চত্বর, লক্ষ্মীপুর থেকে সিঅ্যান্ডবি মোড় পর্যন্ত সূর্যমুখী, সোনালু, জারুল, কাঠগোলাপ ও জ্যাকারান্ডা জাতের ফুল সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।
রাজশাহীর কেন্দ্রীয় ইদগাহ মাঠ হয়ে পদ্মার তীর ধরে ভেড়িপাড়া মোড় ও ঐতিহ্য চত্বর থেকে নগরভবন পর্যন্ত সড়কের পাশে শোভা পাচ্ছে পাম, রঙ্গন, কাঠ, করবি, চেরি, অ্যালামুন্ডা, জারুল, সোনালু, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, মহুয়া, হৈমন্তী, রাধাচূড়া, কাঞ্চন ইত্যাদি। তবে আইল্যান্ডে বেশি সংখ্যায় ফুলগাছ।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মহানগরীর ৩০ কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্ন সড়কের আইল্যান্ডে ও পাশে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ফুটে নয়নাভিরাম ও দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ দৃশ্যমান রয়েছে। নতুন অর্থবছরে আরো ৫০ হাজারের অধিক গাছের চারা রোপণ করা হবে। এছাড়া অন্তত ১০ হাজার গাছ বিতরণ করা হবে। নতুন সড়কের আইল্যান্ড ও সড়কের পাশে ফুলের গাছ রোপণ করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। মহানগরীকে আরো সবুজায়ন ও সুন্দর করতে নওদাপাড়া শিশু পার্কের সামনে ৪ বিঘা জায়গার উপরে রাসিকের নিজস্ব নার্সারি গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ এবং স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০২০-২১ মৌসুমে রাসিকের উদ্যোগে প্রায় ৫০ হাজার ২৭১টি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে- মহানগরীর বিভিন্ন ফাঁকা স্থানে, সড়ক বিভাজকে ও ফুটপাথে। ৪ লক্ষাধিক হেজ জাতীয় গাছ রাস্তার আইল্যান্ড ও শহরের ফাঁকা জায়গায় লাগানো হয়েছে।
এছাড়া ২০২০-২১ শীত মৌসুমে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ৫০টি বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন মৌসুমী ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে নগরীর বিভিন্ন সড়কের আইল্যান্ডে ও চত্বরে। সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করার জন্য রাসিকের ৪০ জন কাউন্সিলরদের মাধ্যমে প্রায় ৭ হাজার ৩৩৩টি ফলজ ও ওষুধিগাছ জনগণের মধ্যে বিতরণ করে রোপণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি মহানগরীর ১ হাজার ৮০০টি গাছে নামফলক লাগানো হয়েছে। প্রতিটি ফলকে গাছের বাংলা ও ইংরেজি নামের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক নাম এবং গাছগুলো কোনো গোত্রের তা উল্লেখ করা হয়েছে। এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরবাসী, বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা গাছের পরিচিতি এবং গাছসমূহের উপকারিতা সম্পর্কে অবগত হতে পারবে।
প্রতিদিন ভোরে হাঁটতে বের হন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। ফুলের সৌন্দর্য দারুণভাবে বিমোহিত করে থাকে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিচিত্র ফুল আর আলংকারিক উদ্ভিদের সমারোহ চোখে পড়ার মতো। বৃষ্টিস্নাত গাছগুলো পত্রপল্লবে বেশ সুশোভিত হয়ে উঠে। রাস্তায় ফুলের উপস্থিতি রীতিমতো আনন্দদায়ক। প্রতিদিন ভোরে ব্যায়াম করতে বের হই। কিন্তু লকডাউনের কারণে আপাতত বের হচ্ছি না। বাড়িতে থাকায় গাছগুলো যেন চুম্বকের মতো টানছে।
জানতে চাইলে রাসিকের পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহমুদ-উল-ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহী মহানগরী এখন ফুলের শহর বলে দেশজুড়ে পরিচিতি পাচ্ছে। ২০২০-২১ মৌসুমে রাসিকের উদ্যোগে প্রায় ৫০ হাজার ২৭১টি গাছ সড়কে লাগানো হয়েছে। বর্তমান লকডাউনেও গাছের পরিচর্যার কাজ চলমান রয়েছে। সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নিজে এ কার্যক্রমের তদারকি করছেন। কোনো জায়গা ফাঁকা রয়েছে, কোনো গাছ লাগালে আরও সৌন্দর্য বাড়বে এসব বিষয়ে তিনি দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, নতুন অর্থবছরে আরো ৫০ হাজারের অধিক গাছের চারা রোপণ করা হবে। এছাড়া অন্তত ১০ হাজার গাছ বিতরণ করা হবে। নতুন সড়কের আইল্যান্ড ও সড়কের পাশে ফুলের গাছ রোপণ করে সৌন্দর্যবর্ধণ করা হবে। মহানগরীর বাসিন্দাদের অনুরোধ করছি, কোনোভাবেই যেন গাছের ফুল না ছিঁড়েন। এতে নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট হবে। আজকের তানোর