শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:০২ pm
ডেস্ক রির্পোট : আদিকাল থেকেই আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী কৃষিপণ্য হিসেবে জেলার অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করে আসছে। আমই এ জেলার মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম আয় উৎসারি কৃষিপণ্য। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে কয়েকশ’ বছরের প্রাচীন হাজার হাজার আমবাগান। ফলন ভালো হলে এক মৌসুমেই শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেই ফলে ৩ লাখ টন আম যার বাজারমূল্য ৫ হাজার কোটি টাকা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬০ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আম চাষ ও আম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রকৃতি ও আবহাওয়ার কারণে আম চাষ এই জেলাতেই কেন্দ্রীভুত হয়েছে। তবুও আম নিয়ে ছিল না কোনো তথ্যমুলক প্রকাশনা।
এদিকে আমের প্রাচীনভুমি চাঁপাইনবাবগঞ্জে কমবেশি সাড়ে ৮শ’ প্রজাতির আম থাকলেও এসব জাত স্থানীয় মানুষদের কাছে প্রায় অচেনা। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের একটি প্রকল্পের আওতায় একজন কর্মকর্তার উদ্যোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পাওয়া প্রচলিত শত জাতের আমকে শনাক্ত করা হয়েছে।
এ নিয়ে তথ্যবহুল একটি বই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে শনিবার। ব্যতিক্রমী এ বইটির নাম ‘আমের ১০০ জাত’।
বইটিতে বলা হয়েছে- প্রাচীনকাল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শত শত জাতের আম থাকলেও চেনা মাত্র কয়েকটি জাত ছাড়া অন্য আমের জাতগুলির সম্প্রসারণ ঘটেনি সচেতনতার অভাবে। এসবই বইটিতে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) একেএম তাজকির উজ জামান করেছেন আমের জাতভিত্তিক বিশদ পরিচিতিমূলক বইটির প্রায় সব কাজ। সম্পাদনার সব কাজই তিনি নিজের হাতে করেছেন।
তাজকির উজ জামান জানান, আমের প্রাচীন তীর্থভূমি হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম নিয়ে তথ্যবহুল কোনো প্রকাশনা নেই। অথচ দেশে উৎপাদিত উন্নতজাতের সিংহভাগ আমই ফলে এই জেলায়। আমের রাজা উন্নতমানের ফজলি আম প্রকৃতিগত কারণে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেই ভালো হয়। সম্প্রতি তারই পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগে বিখ্যাত খিরসাপাত আম ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। আম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক প্রাচীনত্বের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছেন।
জানা গেছে, জেলায় প্রাচীনকাল থেকে শত শত জাতের আম থাকলেও এই জেলার বিখ্যাত আমের জাত হলো খিরসাপাত, ন্যাংড়া, আমের রাজা ফজলি ও আশ্বিনা আমই বেশি দেখা যায়। এসব আমের বাইরে আরও অচেনা অজানা অনেক জাতের আম রয়েছে জেলায় বিভিন্ন প্রান্তে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিবগঞ্জ পৌরসভার এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের অর্থসহায়তায় ২০২০-২১ অর্থবছরে আমের জাত অনুসন্ধান ও পরিচিতি প্রকল্পটি নেওয়া হয়। অতিসম্প্রতি আমের জাতভিত্তিক বিবরণ সম্বলিত বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এই বইটি জেলার আমচাষি ও জেলার সচেতন মানুষের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
এদিকে বইটিতে ১০০ জাতের আমের বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। কয়েকশ পৃষ্ঠার রঙ্গিণ উন্নত ছাপা বইটির প্রতিটি পাতায় প্রতিটি আম জাতের নাম ও বিবরণ দেওয়া হয়েছে। পরের পাতায় রয়েছে আমের ছবি। আরও আছে আমের বিভিন্ন অংশের ছবি। ফলের তথ্য (আকৃতি, ওজন, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, পুরত্ব, শাঁসের রং ও বুনট, খাদ্যোপযোগী অংশ ইত্যাদি), বীজের তথ্য, খোসা, সংগ্রহ ও সংরক্ষণকাল, ফল ধারণ ও উৎপাদনশীলতা, ব্যবহার, চাষযোগ্য এলাকা, ফলন ইত্যাদি প্রায় ৩৫ ধরণের তথ্য স্থান পেয়েছে বইটিতে।
অন্যদিকে এলাকায় সর্বাধিক পরিচিত গোপালভোগ, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, ফজলি, সুরমা ফজলি, আশ্বিনা ইত্যাদি প্রচলিত জাত ছাড়াও দেওভোগ, লক্ষণভোগ, গুটিখিরসা, গোলা, মালদহ গুটি, মিশ্রি দাগি, শ্যামলতা, মিশ্রিকান্ত ইত্যাদি অপ্রচলিত জাতের আমের বিস্তারিত তথ্যও বইটিতে সবিস্তারে স্থান পেয়েছে।
তবে অধুনা চাষকৃত শংকর ও হাইব্রিড জাতের কোনো আমের পরিচিতি এখানে দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র দেশি আমের জাতগুলোকেই মানুষের কাছে তুলে ধরতে ১০০ জাতের সন্ধান করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবেদক : আনু মোস্তফা, যুগান্তর, রাজশাহী ব্যুরোপ্রধান।