শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:১৭ pm
আর কে রতন :
বোরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশানুরুপ ফলন ঘরে তুলেছেন রাজশাহী অঞ্চরের কৃষকরা। এছাড়া বাজারে এবার ধানের ভাল দাম পেয়ে অনেক আনন্দিত চাষিরা। তাই বোরো ধানের কাজ গুটিয়ে উঠতে না উঠতে এ অঞ্চলের কৃষকরা চলতি মৌসুমে কম খরচে বৃষ্টি নির্ভর আউশ ও আমন ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অনেক দিন অপেক্ষার পর কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে বিস্তীর্ণ ফলের মাঠজুড়ে চাষাবাদের ধুম চলছে। প্রতিদিন সূর্যের আলো ফুটে ওঠার আগেই মাঠে নেমে পড়ছেন কৃষকরা। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে খাদ্য-শস্যের সংকট মোকাবিলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষকরা সংগ্রামে নেমেছে।
কৃষকরা যেনো করোনা মহামারি মোকাবেলা করে ঠিকমত ফসল ফলাতে পারেন এজন্য প্রতিটি উপজেলা কৃষি অফিসারগণ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চাষাবাদের পরামর্শ দেবার পাশাপাশি কৃষকদের প্রণোদনাও ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। কৃষকদের মতে, আউশ-আমন চাষ বৃষ্টি নির্ভর হওয়ায় সেচ খরচ লাগে না। সার-কীটনাশকও খুবই কম প্রয়োগ করতে হয় বলে এ ধান চাষে তুলনা মূলক খরচ কম, আর লাভ বেশি। ফলে জেলায় প্রতি বছরই বাড়ছে আউশ-আমন চাষ।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বছরে ৩৬ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আউশের উৎপাদন হয়েছিল ৮৪ হাজার ১৫৩ মেট্টিক টন। যা আবাদকৃত জমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৫৪৪ হেক্টর বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৯৪ হেক্টর। যার উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪ মেট্টিক টন।
আর ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ মেট্টিক টন। আর ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ মেট্টিক টন। অন্যদিকে, চলতি মৌসুমে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৭৭ হেক্টর জমিতে।
মোহনপুর উপজেলার কৃষক ইনছান আলী জানান, বিগত দিনে ধান উৎপাদনে খুব বেশি লাভ হতো না। কিন্তু এবার বাজারে ধানের ভাল দর পাওয়ায় বোরোর পর আবার আউস-আমন ধান রোপনের প্রস্ততি নিচ্ছি।
দুর্গাপুর উপজেলার কৃষক মৃত্যুঞ্জয় জানান, বর্তমানে বিরি-২৮ ধান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০ টাকা মণ। এরআগে ধানের দাম এতো বেশি থাকতো না। তাই আগ্রহ পেতাম না ধান চাষে। কিন্তু এবার ধানের দাম ভালো থাকায় চার বিঘা আউশ ধান চাষ করছি।
গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল গ্রামের কৃষক বুলবুল আহমেদ জানান, গতবারের চেয়ে এবার বেশি ধান রোপন করা হবে। ধানের দাম ভালো পাওয়া ও ফলন বেশি হওয়াতে আউশের আবাদ বাড়িয়েছি। এবার বৃষ্টির জন্য একটু দেরি হলেও বর্তমানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে ফলে সেচের সমস্যা হচ্ছে না। তানোর উপজেলার কৃষক নওশাদ আলী জানান, ধানের দাম বাজারে ঠিক রাখলেই কৃষকরা আবাদ করতে উৎসাহ পাবে। কারণ খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। তখন বিরক্ত হয়ে চাষিরা ধান চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসলের চিন্তা করে।
উপপরিচালক কে জে এম আব্দুল আউয়াল বলেন, কৃষিভিত্তিক এ অঞ্চলে সব সময় খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। করোনাকালেও এর ব্যত্যয় হয়নি। এবার আমরা আউশ ও আমনের উৎপাদনের একটা লক্ষ্যমাত্রা ধরেছি। প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়। এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হবে।
তিনি আরও বলেন, এবারে বাজারে ধানের দাম ভালো আছে। খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা বৃষ্টি নির্ভর আউশ ধান চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বাজারে ইউরিয়া, ফসফেট, টিএসপি, পটাশসহ সকল প্রকার সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় ভরা মৌসুমে সারের কোন সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা নেই। আজকের তানোর