শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:২৭ pm
ডেস্ক রির্পোট : গত মার্চের শেষ দিকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয়ায় সংক্রমণ রোধে ৫ এপ্রিল থেকে দেশে লকডাউন (বিধিনিষেধ) চলছে। কিন্তু এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। জীবন-জীবিকা তাই এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে ভারতীয় প্রকৃতির (ভ্যারিয়েন্ট) করোনাভাইরাসের বাংলাদেশে প্রবেশ রোধে কিছুদিন থেকে সীমান্ত এলাকায় বিশেষভাবে লকডাউন দেয়া হচ্ছে।
চলমান সার্বিক লকডাউনের মেয়াদ আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অনেকেই বলছেন, সীমান্ত এলাকা ছাড়া লকডাউন মূলত কাগজে-কলমেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটামুটি সবকিছু খুলে দিয়ে বিধিনিষেধ সেভাবে কার্যকর না হলেও কিছু সুবিধা তো আছেই। মানুষের ফ্রি স্টাইলে চলাচলের ক্ষেত্রে এটা একটি প্রতিবন্ধকতা। শুধু ঘোষণা দিলেই হবে না, সব ধরনের গণসমাবেশ রোধে সরকারকে কঠোর তদারকি করতে হবে, তবেই বিধিনিষেধের সুফল পাওয়া যাবে।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সীমান্ত এলাকা ছাড়া দেশের বাকি অংশে লকডাউন না বলে বিধিনিষেধ বলা উচিত। এর আওতায় ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিকসহ সব ধরনের সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে। অফিস-আদালতেও উপস্থিতি অর্ধেক থাকবে। হোটেল-রেস্তারাঁয় স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিতে বিধিনিষেধ বহাল রাখা যেতে পারে। লকডাউন নামটি বলার প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, ‘যেমনই হোক, বিধিনিষেধ থাকলে তো সুবিধা আছেই। এটি থাকতে পারে। বিধিনিষেধ থাকলে একটা প্রেসার থাকে।’
‘সীমান্ত এলাকায় যেটা, সেটা হচ্ছে লকডাউন। এর মাধ্যমে মানুষকে ঘরে আটকে রাখা, এভাবে লকডাউন যদি দুই সপ্তাহ করা যায় তবে একটা ভালো চিত্র ফুটে উঠবে। তা না হলে সংক্রমণ ছড়াতেই থাকবে।’
সীমান্ত এলাকায় লকডাউন দিয়ে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনসম্পৃক্ততা খুব জরুরি, এটা আমরা বারবার বলেছি। লকডাউন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত না বলবে, চল আমাদের এলাকাটা আমরাই রক্ষা করি, ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর কিছু হবে না।’
মোহাম্মদ শহিদুল্লা বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, লকডাউন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে সীমান্তবর্তী এলাকার উন্নতি হবে। সেটা করতে ব্যর্থ হলে সীমান্ত এলাকায় উন্নতি হবে না, ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়বে। তাই সীমান্তের ঝুঁকিপূ্র্ণ এলাকাগুলো এখনই-আজই কঠোর ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের আহ্বান হচ্ছে, যাতে করে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে চলাচল করে। তারা যাতে অপ্রয়োজনে বাইরে না আসে। আমরা যাতে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারি। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এই সময়ে পালনের জন্য ১১টি শর্ত দেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে ছিল সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ, জরুরি কাজ করতে সরকারি ও বেসরকারি অফিস সীমিত পরিসরে খোলা, মার্কেট ও দোকান বন্ধ। একইসঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার বিক্রির সুবিধা রেখে সেখানে বসে খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে খোলা রাখা হয় শিল্প-কারখানা।
যাত্রীদের ভোগান্তির পরিপ্রেক্ষিতে ৭ এপ্রিল সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে গণপরিবহন খুলে দেয়া হয়। পরে মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৯ এপ্রিল থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়া হয়। এই লকডাউন ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
পরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়। গত ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ২৫ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়া হয়। ৬ মে থেকে জেলার মধ্যে গণপরিবহন খুলে দেয়া হয়।
গত ২৩ মে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোও আসন সংখ্যার অর্ধেক মানুষকে সেবা দিতে খুলে দেয়া হয়।
লকডাউনের মেয়াদ এ পর্যন্ত ছয় দফা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ৬ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আগামী ১৬ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।
এর মধ্যে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে সীমান্ত এলাকায় কঠোর লকডাউন দেয়ার সুপারিশ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সর্বশেষ বিধিনিষেধ বাড়ানোর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর উচ্চ ঝুঁকিম্পন্ন জেলাসমূহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সংশ্লিষ্ট কারিগরি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে নিজ নিজ এলাকায় সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
ইতোমধ্যে সীমান্ত সংলগ্ন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, খুলনা, সাতক্ষীরায় কঠোর লকডাউন দেয়া হয়েছে। সীমান্তের আরও নতুন নতুন এলাকায় লকডাউন দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সূত্র : জাগোনিউজ