রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৪৫ pm
ডেস্ক রির্পোট : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং দূষণ ঠেকিয়ে দেশে সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার আগামী ৬ বছরে দেশের এক চতুর্থাংশ এলাকা সবুজ গাছপালায় পরিবেষ্টিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২১ উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
‘বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার: বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটি।
এতে ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার আগামী ৬ বছরে ২২ থেকে ২৪ ভাগ অঞ্চল গাছপালায় আচ্ছাদিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশব্যাপী ৩ কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বায়ু, নদী শব্দ দূষণ আছে। শব্দ দূষণ মারাত্মক হচ্ছে। গাড়ির কালো ধোয়ার দূষণও মারাত্মক হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার, ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা দরকার। পরিবেশবিদদের শুধু সভা সেমিনার নয়, বাস্তবভিত্তিক সমাধানে কাজ করতে হবে।’
বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইকো সিস্টেম হলো আমাদের চারপাশের পরিবেশে থাকা সব জীব ও জড়বস্তু মধ্যকার আত্মসম্পর্ক। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ভারসাম্যহীন বাস্তুসংস্থা মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। একটি বাস্তুতন্ত্রের যেমন একটি ছোট পরিবর্তন একটি প্রজাতির বিলুপ্তি বা প্রবর্তন পুরো বাস্তুসিস্টেমে পরিবর্তন আনতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘জনসংখ্যার আধিক্য, নগরায়ণ, শিল্পের বিকাশ ও দূষণের কারণে আমাদের ইকো সিস্টেম প্রতিনিয়তই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক ব্যবস্থার নিয়মিত পরিবর্তন, প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের অসম্পূর্ণ ধারণ, মানুষের পূর্ববর্তী ব্যর্থতা বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধার ব্যাহত করে।’
বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারে যারা অংশীদার তাদের মধ্যে প্রায় পরস্পরবিরোধী ইচ্ছা প্রতিফলন দেখা যায় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ভূমি ও কৃষিকাজে অতিমাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার, গবদিপশুর বৃদ্ধিতে অতিরিক্ত ঔষুধের ব্যবহার ইকোসিস্টেমের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এছাড়া প্রাণীকুলের বিনাশ, সামুদ্রিক সম্পদের যথেচ্ছা ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরায়ণ এবং অপরিকল্পত পর্যটক আমাদের ইকো সিস্টেমের ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে। ইকো সিস্টেম পুনরুদ্ধার মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই এই সত্য উপলব্ধি করে আওয়ামী লীগ ইকো সিস্টেম পুনরুদ্ধারে সর্বদা সচেষ্ট।’
সমগ্র দেশে ৮৮টি ছোট নদী, ৫২টি খাল খনন পুনঃখনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করছে। বায়ু দূষণ রোধে অপরিকল্পিত ইটভাটা অপসারণের কাজ চলছে। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে নদী পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। সুন্দরবনের বাঘকে প্রধান্য দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে জীব ও বৈচিত্র্য সংরক্ষণ। ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন উন্নয়নে জীব ও বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এলাকাকে সরকার ইতিমধ্যে জাতীয় উদ্যানে বা উদ্যান প্রটেকটিভ এরিয়া, ইকোলোজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া হিসেবে ঘোষণা করেছে।’
গত এক দশকে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবিলায় সরকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এর মধ্যে ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ উল্লেখযোগ্য। স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম যারা নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।’
গাজীপুর-ময়মনসিংহ রোড করার সময়ে বাধার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা কথা দিয়েছিলাম যতো গাছ কাটা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি গাছ এখানে লাগানো হবে। এখন আপনারা সেখানে গিয়ে দেখেন গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহের রাস্তার দু’পাশে কতো গাছ লাগনো হয়েছে। অনেকগুলো গাছ অনেক বড় হয়ে গেছে।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় (অস্ট্রেলিয়া) এর অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান।
বক্তব্য রাখেন নদী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিনা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মালেক, নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব, ডিবিসি নিউজ এর সম্পাদক প্রণব সাহা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। সূত্র : পদ্মাটাইমস