রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৫৭ am
ডেস্ক রির্পোট : করোনার প্রভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বিশেষ তেমন কর্মসূচি নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাড়তে পারে ঝরে পড়ার হার, শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ। লেখাপড়া বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম প্রবর্তন দরকার। বিশেষ করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরাসরি ও ডিজিটাল মাধ্যমের সংমিশ্রণে ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’ প্রবর্তন করা প্রয়োজন।
১০ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর বেতনভাতা বন্ধ আছে। অনেকে বেকার হয়ে গেছেন। কেজি স্কুল ও কারিগরিসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বাজেটে এসব খাতে ব্যয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রস্তাব দেখা যায়নি। উলটো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল শিক্ষায় ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে।
অবশ্য সরকারি ভাতা (এমপিও) কাঠামোর মধ্যে না থাকা বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এবং ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। ফলে আসন্ন অর্থবছরে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে। এছাড়া সংশোধিত (২০২০-২০২১) বাজেটে অবসরে যাওয়া বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ৪০ কোটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ভবন মেরামত ও সংস্কার খাতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট আমাদের খুবই হতাশ করেছে। মনে হচ্ছে, শিক্ষা আছে, তা শিক্ষার মতো চলবে- এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, অথচ তা উন্নয়নের বড় খাতই হচ্ছে শিক্ষা। কিন্তু বরাদ্দে তার প্রতিফলন নেই। আসলে এটা ব্যবসাবান্ধব বাজেট, আদৌ শিক্ষা সহায়ক নয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- প্রজন্ম যে বিপর্যস্ত হতে চলেছে, তা সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানেন কি না।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এতে দেখা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৭১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকার প্রস্তাব করেছেন তিনি। টাকার হিসাবে বিদায়ি অর্থবছরের চেয়ে এবার ৫ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা বেশি। আর প্রযুক্তি খাতকে মিলিয়ে বাজেট পুস্তকে বিভাজন দেখানো হয়েছে। সেটি অনুযায়ী, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বাজেটের ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ দেখা যাচ্ছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বিদায়ি অর্থবছরে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাস্তবতায় কী ধরনের কর্মসূচি শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় চালিয়ে এসেছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি জানান, করোনাকালে শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে অনলাইনে ২৯ লাখ ৯ হাজার ৮৪৪টি ক্লাসের আয়োজন করা হয়। মোট ২০ হাজার ৪৯৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫ হাজার ৬৭৬টি এবং ৪ হাজার ২৩৮টি কলেজের মধ্যে ৭০০টিতে অনলাইনে ক্লাস চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইনে মোট ৪ লাখ ৯৭ হাজার ২০০টি ক্লাসের আয়োজন করা হয়। এসব ক্লাসে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৯১ হাজার ৪০৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। বিদ্যালয় পর্যায়ে আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন কেনার জন্য ৪১ হাজার ৫০১ জন শিক্ষার্থীকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হয়েছে। বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের মাধ্যমে ‘ইন্টার্নশিপ কার্যক্রম’ চালুসহ নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
প্রাথমিক স্তরের ব্যাপারে বলা হয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে ‘ঘরে বসে শিখি’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীকে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছর থেকে উপবৃত্তি কার্যক্রম রাজস্ব বাজেট থেকে পরিচালনার কথাও জানান তিনি। পাশাপাশি বলেন, আগামী জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এর অধীন শিশুরা স্কুলে দুপুরের খাবার পাবে। এছাড়া নিরক্ষর ব্যক্তিদের জন্য মোটিভেশনাল ও সেনসিটাইজেশন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এভাবে বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এই মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত আরও কিছু কর্মমূচির চিত্র তুলে ধরেন।
শিক্ষার উভয় মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন তথ্য উলেখ শেষে অর্থমন্ত্রী বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করে বলেন, বর্তমান অর্থবছরে (২০২০-২১) বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। এই বিভাগে বর্তমান অর্থবছরে আছে ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। আর এই মন্ত্রণালয়েরই কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। বর্তমান অর্থবছরে এ বিভাগে বরাদ্দ আছে ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। সূত্র : যুগান্তর