রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:২৬ pm
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিন খুলে দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে, দেশকে গড়ুন নীতির সাথে স্বাস্থ্যবিধি জেনে, বাজেট করুন শিক্ষাবান্ধব, শিক্ষকবান্ধব হোক, যাক না কেটে কষ্টগুলো- লোভ-মোহ আর শোক।’
আসন্ন বাজেট গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা বাজেট হবে বলে বারবার আশা প্রকাশ করছেন ধনী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তবে বলে রাখি এমন ধনী কিন্তু সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও ছিলেন। গণবান্ধব বাজেট, গণবান্ধব চিন্তা না করায় কালের আবর্তে হারাতে বসেছে তাঁর নামটিও। কাটাতে হচ্ছে ছেলে বাসায় অবসরের দিনগুলো। বর্তমান অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই এমন কিছু করবেন না, যাতে করে তাকেও হারাতে হয় কালের ঘূর্ণিতে। শিক্ষার কথা ভাবতে হবে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকেও।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আজ দেড় বছর প্রায়। অশিক্ষা-কুশিক্ষার রাস্তা এগিয়ে চলছে ছাত্রজীবন। নীতিবিবর্জিত কাজে যুক্ত হচ্ছে কোটি কোটি শিক্ষার্থী। বাড়ছে হত্যা-ধর্ষণ-নিপীড়ন ও আত্মহত্যা। শিক্ষার্থীদের এই চলমান সংকটে গা ভাসাচ্ছে শিক্ষকদেরও একটি বড় অংশ। সেই সাথে আইনের শাসন, বিচারের সংস্কৃতি না থাকায় অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য মরিয়া হয়ে অন্যায়-অপরাধ-দুর্নীতিতে মেতে উঠছে ছাত্র-শিক্ষক উভয় অংশই। এ বিষয়ে আমার প্রতিষ্ঠিত সংবাদযোদ্ধা ও সংবাদমাধ্যমের অধিকার আদায়ের সংগঠন অনলাইন প্রেস ইউনিটির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যতিত বিশে^র প্রায় সকল দেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কোথাও কোথাও করোনা পরিস্থিতি বেগতিক থাকায় অনলাইনে ক্লাস যেভাবে চলছে, সেভাবে চলছে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার কাজ। অস্ট্রিয়ায় অনলাইন ক্লাস- হোমওয়ার্ক সহ বিভিন্ন শিক্ষাকাজে এতটাই ব্যস্ত রাখা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে যে, তারা ভুলেই যেতে বসেছে প্যান্ডামিক করোনার কারণে তারা বাসা থেকে বেরুতে পারছে না। এই যখন বিশ^ময় শিক্ষার উত্তরণে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা; তখন বাংলাদেশে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন ক্যাটাগরির প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছে। এতে করে যারা শিক্ষা উদ্যেক্তা হতে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষা শেষে সবার বাঁধা নিষেধ উপেক্ষা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তারা বসে গেছেন পথে। কেননা, তাদেরকে কোন সহায়তা দেয়া হয়নি করোনার গত দেড় বছরে। আর তাই শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ যেমন হয়েছে, শিক্ষক থেকে তেমন ফেরিওয়ালা-রিক্সাওয়ালাসহ বিভিন্ন ধরনের পেশায় যুক্ত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। আত্মহত্যার খবরও পড়েছি আমরা দৈনিক কাগজেভ। যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে যে ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন বিনা আর্থিক সহায়তায় সরকারের একটি বড় মাধ্যম শিক্ষাধিকারকে ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছে, সেই ৪০ হাজার না হলেও অর্ধেক তো বন্ধ হবেই। এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বাংলাদেশে শিক্ষার আগামী। যা আমাদের কারোই কাম্য নয়. তাই চাই-আসন্ন বাজেটে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচানোর জন্য মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা সহ বাজেটের কমপক্ষে ২০% ভাগ বরাদ্দের একটি পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত। অন্যান্যবার বাজেটে যেমন শিক্ষার জন্য নির্ধারিত অর্থ কোথায় খরচ হচ্ছে-হবে-হয়! মধ্যিখানে তালিকা আর পরিকল্পনা করতে করতে ল্যাজে গোবরে অবস্থা হয় আমাদের শিক্ষক-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যেক্তাদের অবস্থা বেগতিক হয়ে যায়; তা যেন এবার না হয়; সে জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি গল্প তুলে ধরি- এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সরকারি। স্থানিয় এমপির মাধ্যমে পরিচালিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চার তলা নির্মাণ না করে ওই বিল্ডিং ব্যবহার করে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম চলছিল। কয়েক বছর পর ওই স্কুলে বাকি চার তলা নির্মাণের বাজেট বরাদ্দ না করে সম্পূর্ণ নতুন আরেকটি বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়। নতুন বিল্ডিং নির্মাণ না করে পুরোনো বিল্ডিংয়ে বাকি চার তলা নির্মাণ করা হলে সরকারের ব্যয় কমতো বলে আমি মনে করি। বাজেটে অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি খরচের দিকনির্দেশনাও থাকা প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে কোনো খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ জমা-খরচের হিসাব রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়ে এরপর প্রয়োজনে উত্তোলন করে খরচ করতে হবে। এতে ব্যাংকে জমা-উত্তোলনের হিসাব থাকবে। দুর্নীতির সুযোগ কমবে।
যেসব স্কুলে বহুতল ফাউন্ডেশনে বিল্ডিং একতলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে, ওইসব স্কুলের বিল্ডিংয়ে অবশিষ্ট তলা পূর্ণ করার আগে নতুন বিল্ডিং করা যাবে না। অর্থাৎ কোনো স্কুল পাঁচ তলা ফাউন্ডেশনের বিল্ডিংয়ে যদি একতলা নির্মাণ করে পরিচালিত হয়, কয়েক বছর পর ওই স্কুলে নতুন
বিল্ডিং করার অর্থ বরাদ্দ করার আগে অবশিষ্ট চার তলা পূর্ণ করতে হবে।
এরপর প্রয়োজন হলে নতুন বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে। এতে সরকারের ব্যয় কমবে। যেসব স্কুলে নতুন বিল্ডিং নির্মাণ হয়নি, সেসব স্কুলে নতুন বিল্ডিং নির্মাণের আগ পর্যন্ত যে স্কুলে নতুন বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে, সেই স্কুলে নতুন বিল্ডিং নির্মাণ করা যাবে না। এতে সুষম বণ্টন হবে। প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্তমানে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রাইভেট স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আসনের চেয়ে শিক্ষার্থী বেশি ভর্তি করতে হতো। অনেক শিক্ষার্থী আসন না পেয়ে ঝরে পড়ত। সব শিক্ষার্থীর আসন নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে নতুন করে আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হতো। এতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পেত।
এ খাতে ব্যয় কমানোর জন্য উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নতুন মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করতে হলে যে জেলায় নেই, সে জেলায় আগে নির্মাণ করতে হবে। যে জেলায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সে জেলায় এগুলো নির্মাণের জন্য উদ্যোক্তাদের বিশেষ ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। স্কুলের ভবন নির্মাণ, উন্নয়ন, পরিচালনা ব্যয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে করার ব্যবস্থা করা হলে দুর্নীতি করার সুযোগ কমবে। মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও সাধারণ অনার্স, মাস্টার্স কোর্সের যেসব সাবজেক্ট বিদেশে পড়ানো হয় কিন্তু বাংলাদেশে এখনো চালু হয়নি, সেসব সাবজেক্ট বাংলাদেশে চালু করতে হবে। যদি দাবিগুলো মানা হয়, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বলবে অবিরাম। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আবারো ফিরে পাবে বাংলাদেশে শিক্ষাময় আগামী। থাকবে না নোংরামি। যে নোংরামিতে মেতে আছে ছাত্র-শিক্ষকদের উপকারের পরিবর্তে অপকারের সর্বনাশা খেলায় শিক্ষামন্ত্রী-সচিব-উপসচিব থেকে শুরু করে শিক্ষাখাতের অধিকাংশ আমলারা। এই নোংরামিতে তারা কেন মেতেছে? কারণ একটাই তাদেরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী জেবুন্নেসার মত দেশের বাইরে ও দেশে আলিশান একাধিক বাড়ি এবং কাড়িকাড়ি টাকা চাই। আমি মনে করি এবারের বাজেটের আগে অর্থমন্ত্রীকে জানানো প্রয়োজন-স্মরণ করানো প্রয়োজন- চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে এক হাজার ৪৪৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ অংক প্রায় এক লাখ ২৩ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ৮৭২ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে চার হাজার ২৭৬ কোটি ডলার। সে হিসাবে নয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৪৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ অংক এক লাখ ২৩ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৪.৮০ টাকা ধরে)। এ সময়ে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ তার আগের বছরের তুলনায় ০.০৬ শতাংশ বেশি আয় করেছে। বিপরীতে পণ্য আমদানির ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ৬.০৪ শতাংশ বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিজনিত চাহিদাও বেড়েছে। তাই আমদানি ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে স্বল্প পরিসরে। তবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ চাঙা থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি কম হয়েছে। প্রথম নয় মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ।
বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়। করোনাকালে মানুষ ভ্রমণ কম করেছে। অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানি কম হওয়ায় বিমার খরচও কমে গেছে। ফলে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কম হয়েছে। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে এ খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯১ কোটি ডলার। গত অর্থবছর একই সময়ে তা ছিল ২৩৬ কোটি ডলার।
মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার প্রভাব সরাসরি পড়েছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ওপরও। গত অর্থছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ২৪৯ কোটি ১০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা সামান্য বেড়ে ২৫৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। উল্লিখিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৭.৯৬ শতাংশ কমে ৯৪ কোটি ডলারে নেমেছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১০৩ কোটি ডলার। করোনার মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতি নাজুক হলেও দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) উদ্বৃত্ত হচ্ছে। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে চলতি হিসাবে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে, যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল প্রায় ২৬৫ কোটি ১০ লাখ ডলার।
অন্যদিকে সার্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে ভারসাম্যের (ওভারঅল ব্যালেন্স) ৬৯৯ কোটি ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে ১ হাজার ৮৫৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৩৭৬ কোটি ডলার। গত বছর অবশ্য সেই বাজেটে শিক্ষা ছিলে চরমভাবে উপেক্ষিত। আশা করি রাজনৈতিকভাবে নয়; অর্থমন্ত্রীকে ভাবতে হবে বাংলাদেশের রাজনীতি গণমানুষের মুক্তি ও উত্তরণ নিয়ে। আর তাই চাই বাজেটে ২০% ভাগ শিক্ষা খাতের উত্তরণের জন্য। মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি