সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৩৯ pm
ডেস্ক রির্পোট : ধান-চালের অবৈধ মজুদ ঠেকাতে সরকার মনিটরিং টিম মাঠে নামিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আশঙ্কা বোরোর ভরা মৌসুমে ব্যবসায়ীরা কম দামে বেশি পরিমাণে ধান ও চাল কিনে মজুদ করতে পারে। কারণ মৌসুমের সময় ধান ও চালের দাম কম থাকে। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ তখন প্রচুর পরিমাণে ধান-চাল কিনে মজুদ করে রাখে।
ফলে বাজারে সরবরাহ কমে যায় কিংবা বাজার কিছু ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। পাশাপাশি সরকারও অভ্যন্তরীণভাবে ধান-চাল সংগ্রহ ঠিকমতো করতে পারে না। এমন অবস্থা যাতে তৈরি না হয় সেজন্য মনিটরিং ও অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খাদ্য মন্ত্রণালয় নিয়মের বাইরে গিয়ে ধান-চাল মজুদকারীদের ঠেকাতে খাদ্য অধিদপ্তর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনকে তদারকি বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। ওই লক্ষ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়, মাঠপর্যায়ে খাদ্যশস্যের অবৈধ মজুদ নিয়ন্ত্রণ ও বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মনিটরিং জোরদার করতে হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সব জেলায় নিয়মিত অভিযান ও সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে।
আর ঢাকা মহানগরে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে তদারকি করবে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের আওতায় গঠিত মনিটরিং টিম। কেউ যাতে লাইসেন্স ছাড়া ধান-চালের ব্যবসা করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমদানিকারক, আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা কী পরিমাণ ধান ও চাল বিক্রি করছে তা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়কে ব্যবসায়ীদের জানাতে হবে।
সূত্র জানায়, কোনো মিলার যাতে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ করতে না পারেন সেজন্য গত বছরের ২১ ডিসেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। তাতে বলা হয়, কোনো চালকল মালিক দৈনিক ৮ ঘণ্টার ছাঁটাই ক্ষমতা ধরে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার ৩ গুণ চাল সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবে।
তাছাড়া ২০১১ সালের আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আমদানিকারক তার আমদানি করা শতভাগ পণ্য সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবে। পাইকারি ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ ৩০০ টন ধান অথবা চাল এবং ২০০ টন গম সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবে। খুচরা ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ ১৫ টন চাল অথবা ধান এবং ১০ টন গম সর্বোচ্চ ১৫ দিন সংরক্ষণ করতে পারবে।
গত বছর বন্যার কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে চালের সরবরাহ কমে যায়। তখন দফায় দফায় প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল। তখন বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার নিজে এবং বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি শুরু করে। যদিও বোরো ধান ওঠা শুরুর পরে দাম সম্প্রতি কিছুটা কমেছে। তারপরও গত বছরের তুলনায় বেশি।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে সরকারের হাতেও খাদ্যপণ্যের মজুদ কম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২৪ মে পর্যন্ত সরকারের হাতে ৭ লাখ ৯২ হাজার টন খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল। তার মধ্যে চাল ৫ লাখ টন এবং ২ লাখ ৯২ হাজার টন গম। কিছুদিন আগে সরকারের মজুদ আরো কম ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের জনসংখ্যা এবং চাল ও গমের ভোগ অনুযায়ী নিরাপদ খাদ্য পরিস্থিতির জন্য সরকারের হাতে কমপক্ষে ১০ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ থাকা জরুরি।
এমন পরিস্থিতিতে সরকার ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার থেকে সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কিছু চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। পাশাপাশি কয়েকশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ২৪ মে পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে ৪১০ টন চাল ও ৪৭৮ টন গম আমদানি হয়েছে। আর বেসরকারি পর্যায়ে ৭৬৯ টন চাল ও চার হাজার ২৯০ টন গম আমদানি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানান, ধান-চালের অবৈধ মজুদ মনিটরিং নিয়মিত করা হয়ে থাকে। মাঠপর্যায়ে যাতে মনিটরিং জোরদার থাকে সেজন্য নির্দিষ্ট সময় পরপর এ ধরনের অনুরোধ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে করা হয়ে থাকে। মন্ত্রণালয় চায়, যারা খাদ্যশস্যের ব্যবসা করবে তারা সবাই ফুডগ্রেইন লাইসেন্স নেবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ ব্যবসা করবে না। সূত্র : এফএনএস