বৃহস্পতিবর, ২১ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৪৭ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর : রাজশাহীর তানোর উপজেলার দুই পৌরসভা ও সাত ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে যে যার মতো নিচ্ছে জন্মনিবন্ধন ফি। চাহিদা মতো টাকা না দিলে করছে হয়রানি। আইন অনুযায়ী শিশুজন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। দুই বছরের মধ্যে জন্মনিবন্ধন না করালে বাবা-মায়ের জন্য জরিমানার বিধানও আছে।
আর এই সময়ের মধ্যে নিবন্ধনে শিশুদের জন্য কোনো ফি নেওয়ার নিয়ম নেই। তবে, জন্ম ও মৃত্যুর দুই বছর পর নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রতি বছরের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ৫ টাকা ও সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় ১০ টাকা হারে ফি দিতে হবে। জন্ম বা মৃত্যু সনদের মূল বাংলা বা ইংরেজি কপি সরবরাহে আলাদা কোনো টাকা লাগবে না।
সম্প্রতি বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন আর সিআরভিএস ব্যবস্থার আলোকে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ডাটাবেজ প্রণয়ন ও তথ্য সংগ্রহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক তথ্যফরম প্রদান করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ প্রাপ্তির তাগিদ দেন। যদিওবা করোনা পরিস্থিতির কারণে এ কার্যক্রম গত দু’দিন আগে শিক্ষা মন্ত্রাণলয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে, স্ব-স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা পূর্বের নির্দেশনার আলোকে জন্মনিবন্ধন পেতে শিক্ষার্থী আর অভিভাবকরা গত ২৩ মে রোববার থেকে আজ-অবদি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌর পরিষদে ভিড় জমাচ্ছেন। এই সুযোগে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর পরিষদ মেয়রদের নির্দেশে তাদের অধিনস্থ কর্মচারীরা সবমিলে নিম্নে দেড়শ থেকে উর্দ্ধে তিনশ টাকা কোন ধরনের রশিদ ছাড়া সনদ প্রদানের নামে আদায় করছেন।
তবে, নিবন্ধন সনদ প্রদানে শুধু ৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরা স্বীকার করেছেন। আর পরিষদের বাইরে অনলাইনে আবেদন খরচ হচ্ছে দেড়শ টাকা। এতো টাকা খরচ করে গেলো সপ্তায় আবেদন করেও আজো মেলেনি জন্মসনদ। এরপরও পৌর ট্যাক্স ও কর বকেয়া থাকলে কোন সনদ ও সেবা প্রদান করা হচ্ছে না। নাগরিকদের এভাবে জিম্মি করে শুধু অর্থ বাণিজ্য নয়, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানি করা হচ্ছে সমানে।
এনিয়ে আকবর আলী, ওহাব সরদার, ধীরেন দত্ত, পূর্ণিমা রাণীসহ ১৫ থেকে ২৫ জন তানোর ও মুন্ডুুমালা পৌরসভার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা বলেন, তাদের পরিবার ও ছেলে মেয়ের অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ পরিষদ থেকে দুবছর আগে উত্তোলন করেন। সম্প্রতি ছেলে ও মেয়ের স্কুল থেকে বাংলা ও ইংরেজী অনলাইন জন্মসনদ চাওয়া হয়। কিন্তু তাদের ওই জন্মসনদ শুধু বাংলায় ছিল। ফলে সংশোধনের জন্য পরিষদে যান তারা।
এঅবস্থায় তানোর পৌর পরিষদের স্বাস্থ্য সহকারী কাজেম উদ্দিনের সরনাপন্ন হন। এসময় কাজেম পরিষদের সার্ভার জটিলতায় দোহায়ে জন্মনিবন্ধন আবেদন ও সংশোধন করা হচ্ছে না বলে জানান। এরপরও ইন্টারনেটের কাজের জন্য দক্ষ অপারেটর নেই। এজন্য পরিমল নামের একজন মাস্টাররুল কর্মচারীকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু লোকজনের চাপে তিনিও কাজ করতে পারছেন না। ফলে বাইরে তাদের নিজস্ব লোকের কম্পিউটার দোকানে চাহিদামত টাকা দিয়ে আবেদন বা সংশোধন আবেদন করতে বলা হচ্ছে। পৌর পরিষদের মেয়র উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডিটিএলজিকে অবহিত করে সবকিছু করছেন বলে জানান কাজেম। প্রায় একই অবস্থা উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভারও।
শুধু তানোর ও মুন্ডুুমালা পৌর পরিষদে নয়, উপজেলার কলমা, তালন্দ, বাঁধাইড়, পাঁচন্দর, কামারগাঁ, চাঁন্দুড়িয়া ও সরনজাই ইউপিতে একই সমস্যা বিদ্যমান। তবে, প্রকাশ্যে চলা এই ঘুষের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান মুন্ডুমালা পৌরসভার সচিব আবুল হোসেন ও মেয়র সাইদুর রহমান। তবে, এনিয়ে তানোর পৌরসভার মেয়র ইমরুল হকের মোবাইলে একাধিবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এনিয়ে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পংকজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, জন্মনিবন্ধন প্রদানের ক্ষেত্রে কোন অর্থ নেয়া আর হয়রানি করা যাবে না। জন্মসনদ পেতে ট্যাক্স ও কর পরিশোধের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। পরিষদের সংশ্লিষ্টরা জনগণকে সেবার নামে হয়রানি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আজকের তানোর