শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:৩৮ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : আমের একটি বড় ব্যবসা কেন্দ্র রাজশাহীর বাঘা উপজেলা। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন শহরে আম যায়। আম কেনা-বেচার মৌসুমের শুরুতেই এখানকার আম বাজারে চলছে নিজস্ব ওজনরীতি। দেশের প্রচলিত নিয়মনীতি অনুযায়ী ৪০ কেজিতে মণের হিসেব ধরা হলেও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে আমের মণ ধরা হচ্ছে ৪৫ কেজিতে মণ।
ক্রেতাদের কাছ থেকে এক মণে ৫ কেজি আম বেশি আদায় করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রচলিত ওজনের এই পরিমাপ মানছেন না ব্যবসায়ীরা। বাজারের রীতি অনুযায়ী, কৃষক ‘ঢলন’ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারি নিয়মে ব্যবসায়ীদের ‘ঢলনপ্রথা’ বাতিল করা হলেও প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এখনো চালু রয়েছে ‘ঢলনপ্রথা’।
জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা এক মণের দামে ৪০ কেজির ওপরে যেটুকু বেশি নেন, তার নাম দিয়েছেন ‘ঢলন’। সে কারণে এই ‘ঢলন’ দিতেই হবে। এভাবে উপজেলার বাজারে দীর্ঘদিন ধরে এই ‘ঢলন’ প্রথা চালু আছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা আর লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন বাজার/আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার মণ আম বেচাকেনা করতে। সেখানে ৪০ কেজির মণের কাছে নিচ্ছেন ৪৫ কেজি। কোথাও কোথাও কৌশল অবলম্বন করে প্লাষ্ট্রিকের ২টি ক্যারেট (ঝুড়ি) ভর্তি আমের ওজন ৪৮ কেজি নিচ্ছেন। পরে ২টি ক্যারেটের ওজন বাদ দিচ্ছেন ৪ কেজি। কিন্তু একেকটি ক্যারেটের ওজন ২ কেজির কম। এতে করে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা কৃষকদের বলছেন কাঁচা কৃষিপণ্যের ওজন পরে কমে যায়,তাই তারা ৪০ কেজির ওপরে বেশি নিচ্ছেন ‘ঢলন’ হিসেবে। এভাবে কৃষকদের জিম্মি করে আম কিনছে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিষয়টি কারও নজরে আসছে না।
কৃষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের কৃষিপণ্য, এক মণে অতিরিক্ত ‘ঢলন” দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। দিতে না চাইলে ব্যবসায়ীরা তাঁদের পণ্য নিতে চান না। তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি । দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা এই ‘ঢলনপ্রথা’ বাতিলের দাবি করে আসছেন। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি কেহই তাদের কথায় কান দেননি।
উপজেলার বাজুবাঘা গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান, ৪০ কেজিতে মণ হলেও তিনি ৪৫ কেজির মণ ধরে আম বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। ব্যবসায়ী, ডিজিটাল ওয়েট মেশিনে ওজন দিয়ে ৪০ কেজির জায়গায় ৪৫ কেজিতে মণ হিসেবে আম কিনেছেন।
‘বাঘা ফল ভান্ডার’ এর স্বত্তাধিকারি সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলার মিলিক বাঘার বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় তাঁর কাঁচামালের আড়ত আছে। সেই আড়তে আমসহ কৃষিপণ্য কিনে দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রির জন্য পাঠান। প্রতিবছরের মতো এবারেও আম কিনে রাজশাহীর বাইরের শহরে পাঠাচ্ছেন। ৪৫ কেজিতে মণ হিসেবে আম কিনছেন।
তিনি বলেন, কাঁচামাল ঢাকায় নেওয়ার পথে পচে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। এ জন্যই ‘ঢলন’ নেওয়া হয়। দুই বছর আগেও ৪৫ কেজিতে মণ ছিল। এদিকে উপজেলার পণ্য ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে যে পরিমান ‘ঢলন’ নেন, রাজশাহীর বাইরে গিয়ে তাঁদের আর সেই পরিমান ঢলন দিয়ে বিক্রি করতে হয় না বলে জানা গেছে।
আমের বড় ব্যবসায়ী মনিগ্রামের জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, যারা আড়ত কিংবা বাজারে আম কিনেন। কাঁচা মালের কারণে ‘ঢলন’ নেন। এ প্রথা অনেক আগে থেকেই চালু আছে। আর যারা বাগান কিনেন,তারা বাগানে ঝুড়ি ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রির জন্য পাঠান। সেখানে তারা মণে ১ কেজি ধরে দিয়ে বিক্রি করেণ। তবে সরকারের ওজনরীতি বাস্তবায়ন করতে হলে প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে। তাহলে সকলেই নিয়ম মেনে বেচা-কেনা করতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা বলেন, বিষয়টি মৌখিকভাবে জেনেছি, দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজকের তানোর