রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:১৭ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
রাজধানীতে প্রেসক্লাবে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক, যান চলাচল বন্ধ একতরফা নির্বাচন গায়ের জোরে করতে চাই না কেউ : নতুন সিইসি গাজীপুরে দুর্ঘটনায় নিহর শিক্ষার্থী সাকিবের লাশ রাজশাহীতে দাফন কম্পিউটার কী বোর্ডের মাধ্যমে রাজশাহীতে পাহাড়িয়াদের মাতৃভাষার লিখন পঠন কার্যক্রম উদ্বোধন গোদাগাড়ীতে প্লাজমা ফাউন্ডেশনের ৯ম তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন আমবাগান থেকে বাঘায় দিনমুজুরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার নগরীতে জেলা কৃষকলীগ সভাপতি তাজবুল ইসলামসহ ১৫ জন গ্রেপ্তার নাচোলে মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের ১৪৮তম শাখা উদ্বোধন গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েম চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা : সাকি তানোরে আলু বীজে মহাসিন্ডিকেট, দ্বিগুন দামে দিশেহারা চাষীরা! দুর্গাপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিক সরকারের দাফন সম্পন্ন দুর্গাপুরে বিএনপি’র আয়োজনে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপিত মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : এভাবেও চাকরি পাওয়া যায়!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : এভাবেও চাকরি পাওয়া যায়!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগ জনবল চায়নি, বিভাগের প্লানিং কমিটি কোনো শিক্ষক নিয়োগ চেয়ে সুপারিশ করেনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অফিস জরুরিভিত্তিতে জনবল চেয়ে চাহিদাপত্রও পাঠায়নি।

তবে চাহিদা না দেওয়া সত্ত্বেও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান নিয়োগে আরোপিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিজের শেষ কর্ম দিবসে তড়িঘড়ি করে ১৩৭ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে গেছেন।

বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায়, ‘অবৈধ’ উপায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বড় একটা অংশের পরিচয় হলো, তারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক পরিবারের সন্তান, প্রত্যক্ষভাবে ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগের নেতাকর্মী। গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে উপাচার্য বলে গেছেন, ‘মানবিক’ বিবেচনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে চাকরি দেওয়া হয়েছে।

তবে, নিজেদের যোগ্যতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতেই এই নিয়োগ পেয়েছেন বলে এক সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করে নিয়োগের বৈধতা দাবি করেছেন নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা। কিন্তু কী সেই যোগ্যতা বা ন্যায্যতা? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের লিখিত বক্তব্যে।

লিখিত বক্তব্যে তারা বলেছেন, তাদের অনেকের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অতিক্রম করেছে। তারা বেকার ও মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। এমতাবস্থায় তারা জানতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রায় সাত শতাধিক পদ দীর্ঘদিন যাবত শূন্য আছে।

আর তাই তারা এসব পদে নিয়োগ পেতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সোবহানের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে উপাচার্যের কাছেই একাধিক বার সিভি জমা দেন তারা।

সম্মেলনে প্রশ্নোত্তরে ছাত্রলীগ নেতারা আরও বলেন, ‘উপাচার্য নানা কারণে প্রথম দিকে নিয়োগ দিতে পারেননি। কিন্তু শেষ সময়ে উপাচার্য নিজেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, আমরা সরাসরি তার কাছে সিভি দিয়েছি।’

আর এসব সিভির প্রেক্ষিতেই আবদুস সোবহান যখন ‘অবৈধ’ উপায়ে অস্থায়ীভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য ১৩৭ জনের নিয়োগ দিলেন, তখন তাদেরকেও চাকরি দিয়ে গেছেন।

তবে এই চাকরি পেতে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করতে আন্দোলনও করেছে বলে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে তারা চাকরির দাবিতে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেছিলেন। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রশাসন ভবনসহ সিনেট ভবনেও তালা দিয়েছিলেন তারা।

অধ্যাপক সোবহানও তখন স্বীকার করেছিলেন যে, ছাত্রলীগের নেতারা তার কাছে চাকরি চাইতে গেছেন। সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা না বললেও, ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগের নেতাকর্মীরা যেটুকু স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার বিশেষ একটি যোগ্যতার ধারণার সঙ্গে পরিচয় পাওয়া পাওয়া গেছে।

সে অনুযায়ী, রাজনৈতিক পদ-পদবী থাকলে, উপাচার্যের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক রাখা গেলে, তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা চাকরি জোটানো সম্ভব।

তবে এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের যেসব নেতৃবৃন্দ এই ‘অবৈধ’ নিয়োগে পদ পেয়েছেন, তারা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আরও একটি ‘বিশেষ যোগ্যতা’র কথা বিভিন্ন মাধ্যমে বারবার উল্লেখ করেছেন।

সেটি হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ’ বজায় রাখতে তারা মৌলবাদী, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির চক্রকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছেন। আর এটা করতে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে নৃশংস হামলা-মামলাসহ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিচরণ থাকা সত্ত্বেও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব কীভাবে তাদের ওপর বর্তায় সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

চাকরি পাওয়ার জন্যে যখন এই বিষয়গুলো বিবেচ্য হয়ে ওঠে তখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, যে সব চাকরিপ্রার্থী শুধুমাত্র স্থায়ী শূন্য পদের বিপরীতে চাকরি পেতে আবেদন করেছিলেন উপাচার্যের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেননি, কিংবা যারা কোনো ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, তারা কি এই বিশেষ যোগ্যতা বিবেচনায় চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন?

এটাই কি নিয়োগ পাওয়ার সুষ্ঠু উপায়?

এমন প্রশ্ন যখন সামনে, তখন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সোবহানও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সমর্থন জানিয়েই সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা অনার্স-মাস্টার্স পাস করে বসে ছিলেন। ন্যুনতম তৃতীয় শ্রেণীর একটা চাকরি তাদের প্রাপ্য। তাই তারা দীর্ঘদিন যাবত তার কাছে চাকরির জন্য বলে এসেছে।

চাকরি না পেয়ে তাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে আসছিল। তাই তাদের এই চাকরি দেওয়াটা প্রয়োজন ছিল। তাই তিনি দিয়ে দিয়েছেন। তবে উপাচার্যের এই বক্তব্যের সঙ্গে গত জানুয়ারিতে দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া বক্তব্যে পরস্পরবিরোধী বলে লক্ষ্য করা যায়।

যেসময় চাকরির দাবিতে নেতাকর্মীরা একাধিকবার উপাচার্যের বাসভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, সিনেট ভবন ঘেরাও করেছিলেন, তখন উপাচার্য বলেছিলেন, সরকারি আদেশ-নিষেধ অমান্য করে তিনি কোনো নিয়োগ দিবেন না।

অথচ শেষ বেলায় এসে মাননীয় উপাচার্য ‘অবৈধ’ উপায়ে ‘মানবিক’ বিবেচনা উল্লেখে করে ছাত্রলীগের সেই নেতাকর্মীদেরকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা করে চাকরি দিয়ে গেছেন। আর তার কাছে এখন এটাই যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করাকে ‘বিশেষ যোগ্যতা’ এবং ‘ন্যায্যতা’ দাবি করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একটা চাকরির চাহিদা আর কর্মসংস্থান সৃষ্টির নামে নিয়োগে অনিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তির এমন বক্তব্যের পর একটা প্রশ্ন স্বভাবতই চলে আসে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্যটা আসলে কী?

এটা কি শিক্ষার্থীদের মাঝে সর্বোচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা? নাকি মানবিকতা দেখিয়ে কর্মহীনদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির জায়গা? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা, গবেষণার আলোচনাকে ছাপিয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নিয়োগে অনিয়মের ঘটনাতেই লুকিয়ে আছে এ প্রশ্নের উত্তর।

প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরেও নিম্ন পদমর্যাদার কিছু পদেও পছন্দমতো প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়ে গেছেন আবদুস সোবহান। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, যারা উপাচার্যের কাছাকাছি থাকতেন, কোনোভাবে উপাচার্যের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে, এমন অনেকেই এসব পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এদের মধ্যে, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা এলাকার শামসুল আলম, যিনি দীর্ঘদিন ধরে আবদুস সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের চুল কেটে দিতেন, তিনি চাকরি পেয়েছেন।

কাজলার আবদুস সামাদ ওরফে রাজন নামের এক কাঠমিস্ত্রি যিনি উপাচার্যের ব্যক্তিগত ফার্নিচার বানিয়ে দিতেন, তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। ফজলুর হক নামের একজন নিয়মিত উপাচার্যকে মাংস সরবরাহ করতেন। তার মেয়েরও চাকরি হয়েছে। এ ছাড়া উপাচার্যের বাড়িতে মালির কাজ করেন সাইফুল ইসলাম। তার স্ত্রী ওই বাসভবনে রান্নাবান্না করতেন। চাকরি পেয়েছেন তিনিও।

বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার এসব যোগ্যতা বিবেচনা করা দেখে জনমনে প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক যে, এভাবেও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়া যায়?

উল্লেখ্য, গত ৬ মে বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান তার মেয়াদের শেষ কার্যদিবসে ১৩৭ জনকে অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে যান। এ দিন সন্ধ্যায় এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৮ মে তদন্তের প্রেক্ষিতে কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এই নিয়োগে সংশ্লিষ্ট সবার যোগদান প্রক্রিয়া স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ দিকে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে উপাচার্য এই নিয়োগের মাধ্যমে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধের’ সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তা তদন্ত কমিটি নির্দিষ্ট করেনি। তবে সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার জন্য তার বিদেশযাত্রার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। লেখক : আরাফাত রহমান, [email protected]

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.