শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:১০ am
ডেস্ক রির্পোট : বগুড়ার শাজাহানপুরে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত কবিরাজ মোজাফফর হোসেন ওরফে ’বাবা হুজুরের’ (৬০) আস্তানায় পাঁচ শতাধিক কাচের বয়ামে জিন বন্দি করে রাখার খবর পাওয়া গেছে। তবে ২৩ দিনেও মেলেনি তার হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
মোজাফফর হোসেন দীর্ঘদিন আধ্যাত্মিক ক্ষমতার মাধ্যমে জিনদের বন্দি করতেন। এসব জিনের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের নামে ভক্তদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিতেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে শহরের নিশিন্দারা মধ্যপাড়ায় তার প্রতিষ্ঠিত আল জামিয়া আল আরাবিয়া দারুল হেদায়া কওমি মাদ্রাসায় গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।
মোজাফফর হোসেনের আস্তানায় বয়ামে জিন বন্দি রাখার খবর নিশ্চিত করেছেন বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশের সব ইউনিট কাজ করছে। তদন্তের স্বার্থে এখন কিছুই বলবো না। আশা করছি শিগগিরই ভালো খবর দিতে পারবো।
পুলিশ ও স্বজনরা জানান, মোজাফফর হোসেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের সুকাশ নওদাপাড়া গ্রামের মৃত সায়েদ মণ্ডলের ছেলে। তার দুই স্ত্রী ও দুই মেয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে নিশিন্দারা এলাকায় বসবাস করতেন।
৪ মে সকালে সিএনজি অটোরিকশাযোগে বগুড়া শহরে যাচ্ছিলেন তিনি। সাড়ে ৯টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের জোড়া কৃষি কলেজ এলাকায় অটোরিকশা থামায় মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুজন বাইক থেমে নেমে মোজাফফর হোসেনের বুকে গুলি চালিয়ে চলে যান। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি।
দুর্বৃত্তদের মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও মাথায় টুপি ছিল। এ ঘটনায় শাজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি।
নিশিন্দারা মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও মোজাফফর হোসেনের সহকারী মাওলানা মাহবুব হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাফেজ ও মাদ্রাসার পরিচালক হলেও নামাজ-রোজা রাখতেন না। আধ্যাত্মিক ক্ষমতার মাধ্যমে জিন হাজির করে নানা সমস্যার সমাধান দিতেন। দুষ্ট জিনদের কাচের বয়ামে বন্দি করতেন। প্রেম, বিবাহ বিচ্ছেদ, ব্যবসায় মন্দা, সন্তান না হওয়া, আইপিএল খেলার ভবিষ্যদ্বাণী করাসহ বিভিন্ন কবিরাজি চিকিৎসা দিতেন।
তার আস্তানায় দেখা গেছে, তিন বস্তায় ভরা ছোট-বড় পাঁচ শতাধিক কাঁচের বয়াম। প্রতিটি বয়াম গামছা দিয়ে মুড়িয়ে রশি দিয়ে বাঁধা। পাশে রয়েছে বিভিন্ন বই ও তাবিজ লেখার কাগজ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম।
মাহবুব হোসেন বলেন, প্রতিটি বয়ামে বাধ্য ও অবাধ্য জিনকে বন্দি করে রাখা আছে। এসব জিন দিয়ে বাবা হুজুর ভক্তদের সেবা দিতেন। করোনায় মাদ্রাসা বন্ধ থাকলেও আস্তানায় বসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নারী-পুরুষকে চিকিৎসা ও সমস্যার সমাধান দিতেন। অনেকেই ফোনে চিকিৎসা ও সমস্যার সমাধান নিতেন।
তবে মাদ্রাসার পাশের বাসিন্দারা তার সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা ভবনের মালিক তাহমিদ বিরক্ত হন।
মাদ্রাসা সংলগ্ন রূপসী লেডিস টেইলার্সের মালিক রেজাউল করিম কিরণ বলেন, বাবা হুজুর কখনও আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন না। মাদ্রাসার ভেতরে কবিরাজি চিকিৎসা করতেন।
ডিবির পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক বলেন, হুজুরের আস্তানায় জিন বন্দি করে রাখা পাঁচ শতাধিক বয়াম পাওয়া গেছে। শিগগিরই হত্যার রহস্য উন্মোচন ও ঘাতকদের গ্রেফতার করা হবে। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন।