শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৪৬ am

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ বাংলাদেশ ও ভারত ভিসা জটিলতায় চার যৌথ সিনেমা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক
রাবির ১৭৫ নিয়োগ বাতিল ও বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞাসহ ৯ সুপারিশ

রাবির ১৭৫ নিয়োগ বাতিল ও বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞাসহ ৯ সুপারিশ

ডেস্ক রির্পোট : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহানের দেওয়া বিতর্কিত ১৪১ জন এবং আগের ৩৪ জন শিক্ষকসহ অবৈধভাবে দেওয়া মোট ১৭৫ জনের নিয়োগ বাতিলসহ ৯টি সুপারিশ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ গত ৬ মে শেষ কার্যদিবসের আগের রাতে ৯ জন শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিভিন্ন পদে মোট ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন ভিসি সোবহান। এর আগে ভিসি সোবহান উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন করে নিজের মেয়ে জামাতাসহ অবৈধ উপায়ে আরও ৩৪ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেন। তদন্ত কমিটি এসব নিয়োগকে অবৈধ অ্যাখ্যা দিয়ে মোট ১৭৫ নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ দিয়েছেন।

কমিটির সূত্র বলছে, গত ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিতর্কিত আরও ৩৪ জনের নিয়োগ বাতিলের জন্য চিঠি দিয়েছিল ড. সোবহানকে; কিন্তু তিনি তা করেননি। সর্বশেষ ১৪১ জনের নিয়োগকে কেন্দ্র করে গত ৬ মে রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একাধিক বিবদমান গ্রুপসহ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে ভিসি সোবহান কড়া পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এদিন বিকালে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ১৪১ জনের নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণার পর ইউজিসির সিনিয়র সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. আবু তাহের, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব জাকির হোসেন আকন্দ ও ইউজিসির পরিচালক জামিনুর রহমান। কমিটিকে অবৈধ এসব নিয়োগে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়- সুপারিশ দিতে নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে বিতর্কিত এসব নিয়োগ দিতে বিদায়ী ভিসি প্রফেসর সোবহান ও তাকে সহযোগিতাকারী একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও দুইজন সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ভিসি জামাতাকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে। নিয়োগ ঠেকাতে তৎপর না হওয়ায় দুই প্রো-ভিসিকেও দায়ী করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি ড. সোবহানের বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশসহ তিনি ও নিয়োগে সরাসরি জড়িতদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে ড. সোবহান বাংলাদেশ ছাড়াও আরেকটি দেশের নাগরিক। এ হিসেবে তিনি দ্বৈত নাগরিক হিসেবে যে কোনো সময় বিদেশে চলে যেতে পারেন। এ কারণেই তার বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ এসেছে। বিষয়টি  নিশ্চিত করেন তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য।

জানা গেছে, সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের শেষদিনে রোববার দুপুরে কমিটির সদস্যরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কমিটির প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, কমিটি গঠনের একদিন পর গত ৮ মে তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনসহ বিতর্কিত এসব নিয়োগের নথিপত্র সংগ্রহ এবং এর সঙ্গে জড়িত ছাড়াও রাবির বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও প্রগতিশীল ও দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন।

কমিটি রাবি রেজিস্ট্রার প্রফেসর আব্দুস সালাম, বিদায়ী ভিসি ড. সোবহানসহ দুই উপ-উপাচার্য ড. আনন্দ কুমার সাহা ও ড. সিএম জাকারিয়ার বক্তব্য রেকর্ড করেন। জড়িত কর্মকর্তারা কমিটির কাছে দেওয়া বক্তব্যে নিজেদের বিতর্কিত নিয়োগে জড়িত নন বলে দাবি করেছিলেন। তবে ভিসি সোবহান এসব নিয়োগের সব দায় তার বলে নিজেই দায়িত্ব স্বীকার করেন।

কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে তারা রোববার মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে দেওয়া ৯টি সুপারিশ- মন্ত্রণালয়ই বাস্তবায়ন করবেন। তারা শুধু বিতর্কিত নিয়োগে জড়িতদের চিহ্নিত ও তাদের দায়দায়িত্ব নিরূপণ করেছেন। কমিটিকে নির্দিষ্টভাবে এ কাজটি করতে বলা হয়েছিল।

তদন্ত কমিটি সূত্রে আরও জানা গেছে, বিদায়ী ভিসি সোবহানের দেওয়া বিতর্কিত ১৪১ নিয়োগ বাতিল ছাড়াও তার মেয়ে সানজানা সোবহান ও জামাই শাহেদ পারভেজসহ আগে দেওয়া আরও ৩৪ জন শিক্ষকের নিয়োগও বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

গত ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভিসি সোবহানকে চিঠি দিয়ে তার মেয়ে জামাতার নিয়োগ বাতিলসহ রাবিতে সব প্রকার নিয়োগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে বিদায়ের একদিন আগে তিনি ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন। এছাড়া ড. সোবহান তার মেয়ে জামাতার নিয়োগ বাতিল করেননি। বরং সিন্ডিকেট সভা ডেকে তা স্থায়ী করেন গত ৩ মে বিদায়ের ঠিক তিন দিন আগে।

কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে নিয়োগের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। এ নিয়োগকে কেন্দ্র করেই ৯ দফা সুপারিশ এসেছে। কমিটির প্রতিবেদনে বিতর্কিত ১৪১ জনের নিয়োগের ঘটনায় বিদায়ী ভিসি ড. সোবহানকে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এসব নিয়োগে বিদায়ী ভিসির সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তার জামাতা আইবিএর প্রভাষক এটিএম শাহেদ পারভেজকে। তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও নিয়োগে স্বাক্ষরকারী সংস্থাপন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, রেজিস্ট্রার শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল আলম ও পরিষদ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন অর রশীদকে সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি।

কমিটি তদন্তে পেয়েছেন যে রাবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর আব্দুস সালাম এসব নিয়োগে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। ফলে সোবহান বিকল্প হিসেবে ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল আলম ও মামুন অর রশীদকে কাজে লাগান। এই তিন কর্মকর্তা নিজেদের আত্মীয়স্বজনকে চাকরি পাইয়ে দিতে ড. সোবহানের ক্রীড়নক ও মূল সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিয়োগের দুই দিন আগে গত ৩ মে গভীর রাতে প্রফেসর আব্দুস সোবহানের জামাতা রাবি শিক্ষক শাহেদ পারভেজের নেতৃত্বে সিনেট ভবন থেকে ১৪১ জনসহ বিভিন্ন নিয়োগসহ সোবহানের বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়মের গুরুত্বপূর্ণ নথি সরিয়ে ফেলা হয়। আর সোবহান জামাতাকে সহায়তা করেন উপ-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল আলম ও মামুন অর রশীদ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ভাই ও সন্তানের নিয়োগ নিশ্চিত করতেই অবৈধভাবে দেওয়া এ গণনিয়োগে রাবির এই তিন কর্মকর্তা ড. সোবহানকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন। তিন কর্মকর্তার মধ্যে ইউসুফ আলীর স্বার্থ ছিল নিজের ছেলেকে চাকরি পাইয়ে দেওয়া।

নিয়োগ তালিকা অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে ৮৫ জনের তালিকার মধ্যে ৮২ নম্বরে আছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর ছেলে নাহিদ পারভেজের নাম। সিনিয়র সহকারী পদের বিপরীতে নিম্নমান সহকারী হিসেবে সংস্থাপন শাখায় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অন্য দুই কর্মকর্তা স্বার্থ ছিল নিজের ভাইয়েদের নিয়োগ নিশ্চিত করা। এর মধ্যে তারিকুল আলমের ভাই রফিকুল আলম সেকশান অফিসার ও আরেক ভাই শরিফুল আলমকে নিম্নমান সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর তালিকার ৬৮ নম্বরে থাকা শেখ ফারহানুল ইসলাম, পরিষদ শাখার কর্মকর্তা নিয়োগ পান সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন অর রশীদের ভাই।

তদন্ত প্রতিবেদনে এম আব্দুস সোবহানের দেয়া এ অবৈধ নিয়োগের সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সব শিক্ষকদের স্ত্রী, সন্তান, জামাতাসহ বিভিন্ন নিকটাত্মীয় অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন এবারে ও আগের বিভিন্ন নিয়োগে। এজন্য অবৈধ এ নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া এত বড় অবৈধ নিয়োগ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় রাবির বর্তমান দুই উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমানের নীরব ভূমিকাকেও দায়ী করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দুই উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা ও প্রফেসর ড. সিএম জাকারিয়া নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখলে এ নিয়োগ প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল বলে কমিটি মনে করেছেন। এজন্য এসব অবৈধ নিয়োগে দায় তারাও এড়াতে পারেন না।

রাবির প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের কো-কনভেনার ড. সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা যুগান্তরকে বলেন, ভিসিকে যেমন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন, তেমনি প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত। সুতরাং তারা কখনই ভিসির আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করতে পারেন না। তারা চাইলে ভিসির অনেক অনিয়ম বাধা দিতে পারতেন। সেটা না করে সহযোগিতা এবং নীরব থেকেছেন। অন্যায়কারী ও অন্যায়ে সহযোগীদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ পেলে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। সূত্র : যুগান্তর।

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.